
ছবি: সংগৃহীত
শরীরে ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রাকৃতিক উপায়গুলো মূলত খাদ্য ও জীবনযাত্রার পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে। রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে গেলে গাউট বা গেঁটেবাত, কিডনিতে পাথর এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। নিচে কিছু প্রাকৃতিক উপায় উল্লেখ করা হলো:
খাদ্যতালিকাগত পরিবর্তন
যা খাবেন:
-
পর্যাপ্ত পানি পান করুন: ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা অপরিহার্য। এটি কিডনিকে শরীর থেকে অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড মূত্রের মাধ্যমে বের করে দিতে সাহায্য করে। একজন প্রাপ্তবয়স্কের দৈনিক ৩ থেকে ৪ লিটার পানি পান করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
-
কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত পণ্য: স্কিমড দুধ, দই এবং অন্যান্য কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত পণ্য ইউরিক অ্যাসিড কমাতে সাহায্য করতে পারে এবং প্রস্রাবের মাধ্যমে এর নির্গমন বাড়ায়।
-
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার: ভিটামিন সি ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমাতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। লেবু, কমলা, আমলকী, পেয়ারা, স্ট্রবেরি, চেরি এবং অন্যান্য সাইট্রাস ফল ভিটামিন সি-এর চমৎকার উৎস।
-
আঁশযুক্ত খাবার: বেশি আঁশযুক্ত খাবার যেমন - সবজি, শাক, শস্য (বাদামী চাল, ওটস, বার্লি) এবং ডাল (মটরশুটি, মসুর ডাল, ছোলা) ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। আঁশ পিউরিনের স্ফটিকের সঙ্গে যুক্ত হয়ে শরীর থেকে মল আকারে বের হয়ে যায়।
-
চেরি ও বেরি: চেরি ফল এবং চেরির জুস ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমাতে এবং গাউটের উপসর্গ উপশম করতে সাহায্য করে বলে গবেষণায় দেখা গেছে। স্ট্রবেরি ও ব্লুবেরির মতো বেরি ফলেও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণ রয়েছে।
-
কফি: পরিমিত পরিমাণে কফি পান করা পিউরিন দ্রুত ভাঙতে এবং ইউরিক অ্যাসিড নির্মূলে শরীরের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।
-
গ্রিন টি: গ্রিন টি-তে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
-
হলুদ ও আদা: হলুদের কারকিউমিন এবং আদার প্রদাহরোধী গুণ ইউরিক অ্যাসিডের কারণে সৃষ্ট প্রদাহ ও ব্যথা কমাতে সহায়ক।
-
আপেল: আপেলে থাকা ম্যালিক অ্যাসিড ইউরিক অ্যাসিড নিষ্কাশনে সাহায্য করে।
যা এড়িয়ে চলবেন বা সীমিত করবেন:
-
উচ্চ পিউরিন সমৃদ্ধ খাবার: কিছু খাবার ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় কারণ এগুলোতে পিউরিনের পরিমাণ বেশি থাকে, যা হজমের সময় ইউরিক অ্যাসিডে রূপান্তরিত হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে:
-
লাল মাংস ও অর্গান মিট: গরু, খাসি, ভেড়ার মাংস, কলিজা, কিডনি, মগজ ইত্যাদি।
-
কিছু সামুদ্রিক খাবার: শেলফিশ (ঝিনুক, চিংড়ি, কাঁকড়া), কিছু মাছ (সার্ডিন, অ্যাঙ্কোভিস, হেরিং)।
-
অ্যালকোহল: বিশেষ করে বিয়ার এবং হার্ড ড্রিংকস ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা মারাত্মকভাবে বাড়ায়। ওয়াইন পরিমিত পরিমাণে পান করা যেতে পারে।
-
ফ্রুক্টোজ সমৃদ্ধ পানীয় ও চিনি: চিনিযুক্ত পানীয় যেমন সোডা, ফলের রস (কৃত্রিম), মধু এবং উচ্চ ফ্রুক্টোজ কর্ন সিরাপ ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে।
-
জীবনযাত্রার পরিবর্তন
-
ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত ওজন ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়াতে পারে। সুস্থ জীবনযাপন ও নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা ইউরিক অ্যাসিড কমাতে সহায়ক। দ্রুত ওজন কমানো বা ক্র্যাশ ডায়েট ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে, তাই ধীরে ধীরে ওজন কমানোর চেষ্টা করুন।
-
নিয়মিত ব্যায়াম: নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ যেমন হাঁটা, জগিং, বা অন্যান্য ব্যায়াম সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং ইউরিক অ্যাসিড বিপাক নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
-
ইনসুলিনের ভারসাম্য বজায় রাখা: রক্তে উচ্চ ইনসুলিনের মাত্রা ইউরিক অ্যাসিড উৎপাদন বাড়াতে পারে। তাই ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
-
পর্যাপ্ত ঘুম: প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো শরীরের মেটাবলিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে, যা ইউরিক অ্যাসিড জমার ঝুঁকি কমায়।
-
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ: ধ্যান, গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস এবং অন্যান্য স্ট্রেস-কমানোর কৌশল ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে পরোক্ষভাবে সাহায্য করতে পারে।
যদি ঘরোয়া প্রতিকার এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তন সত্ত্বেও ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে না আসে বা আপনি গাউটের মতো তীব্র উপসর্গ অনুভব করেন, তবে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সাব্বির