
বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান সম্পর্কের কেন্দ্রে গণতন্ত্র নয়, বরং বাণিজ্য ও আঞ্চলিক ভূরাজনৈতিক স্বার্থ প্রাধান্য পাচ্ছে এমন মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান।
‘ফরেন পলিসি’র সাপ্তাহিক সাউথ এশিয়া ব্রিফিংয়ে কুগেলম্যান বলেন, “বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে এগিয়ে নেওয়া কিংবা রাষ্ট্রগঠনে অর্থব্যয়ে তাদের আগ্রহ ‘নিতান্তই কম’।”
তিনি আরও বলেন, “উভয় দেশের পক্ষ থেকে ওই ফোনালাপের যে বিবরণ প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে স্পষ্ট হয়েছে যে ওয়াশিংটনের কাছে এখন ঢাকার সাথে সম্পর্কের গুরুত্ব বাণিজ্য ও আঞ্চলিক বৃহৎ শক্তিগুলোর সাথে পাল্লা দেওয়ার ক্ষেত্রে।”
তার বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সাম্প্রতিক ফোনালাপে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরাপত্তা অংশীদারিত্বের বিষয়। কুগেলম্যানের মতে, “যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ইন্দো-প্যাসিফিক নিরাপত্তার অর্থ হলো চীনের প্রভাব মোকাবেলা।”
তবে বাংলাদেশের জন্য এটি সহজ নয়। কারণ দেশটি ঐতিহ্যগতভাবে জোট নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে, যেখানে কোনো বড় শক্তির পক্ষ বা বিপক্ষে অবস্থান নেয়া হয় না। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি না হলে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যে ৩৭ শতাংশ শুল্কের চাপ তৈরি হবে বলেও সতর্ক করেন তিনি।
ট্রাম্প প্রশাসনের ঘোষিত শুল্ক নীতির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেও করণীয় নির্ধারণে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। গত এপ্রিলে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস জরুরি বৈঠকে নির্দেশনা দেন এবং অর্থ উপদেষ্টা নতুন শুল্ক কাঠামো ঘোষণা করেন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাঙ্ক্ষিত বাণিজ্য চুক্তি সহজ করাই এর লক্ষ্য।
ফোনালাপের পর মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, “পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রধান উপদেষ্টা উভয়েই যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বাড়ানোর বিষয়ে একমত হয়েছেন।”
চলমান আলোচনার অংশ হিসেবে আগামী ৮ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে এ বিষয়ে দ্বিতীয় দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সরকার আশাবাদী, এ আলোচনার মাধ্যমেই শুল্ক সংকটের সমাধান আসবে।
আফরোজা