ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৬ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২

দুর্বল ব্যাংক থেকে টাকা সরিয়ে গ্রাহকরা যাচ্ছেন শক্তিশালী ব্যাংকে

প্রকাশিত: ১৯:২৯, ৬ জুলাই ২০২৫

দুর্বল ব্যাংক থেকে টাকা সরিয়ে গ্রাহকরা যাচ্ছেন শক্তিশালী ব্যাংকে

ছবিঃ সংগৃহীত

২০২৪ সালে ব্যাংক খাতে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটেছে। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে অনেক গ্রাহক তাদের টাকা দুর্বল ব্যাংক থেকে তুলে নিয়ে চলে গেছেন বেশি শক্তিশালী ব্যাংকে, যার ফলে কিছু ব্যাংক ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। এক্ষেত্রে ১১টি ব্যাংক একত্রে ২৩,৭০০ কোটি টাকা ডিপোজিট হারিয়েছে।

কিন্তু সেই হারানো টাকাগুলো গেল কোথায়? বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বেশ কয়েকটি ভালো পারফরম্যান্স করা ব্যাংক, যেখানে ডিপোজিটের হার বেড়েছে ৩২ শতাংশ পর্যন্ত, সেখানে সেই টাকাগুলো গেছে।

উদাহরণ হিসেবে, জাকির হোসেন, এক ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির মডারেট লেভেলের কর্মচারী, তিনি তার সঞ্চিত টাকা এক শেয়ারহিত ব্যাংক থেকে তুলে নিয়ে অন্য একটি প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর করেন। ২০২৪ সালে এই ধরনের পরিস্থিতি ছিল ব্যাপক, অনেক গ্রাহক একই পথে হাঁটেন।

এমনকি কিছু ব্যাংক তাদের গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হয়েছে, যা নিয়ে একসময় চরম উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল। তবে পরবর্তীতে বাংলাদেশ ব্যাংক জরুরি সহায়তা নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়।

সামাজিক ইসলামী ব্যাংক ছিল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, যেখানে ডিপোজিট ১৫ শতাংশ কমে ৩৫,৬৮৫ কোটি টাকা থেকে ৩০,৯২১ কোটি টাকায় নেমে আসে। ন্যাশনাল ব্যাংক, বিএসসি ব্যাংকসহ বেশ কিছু ব্যাংকেরও একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। শফিউজ্জামান, সামাজিক ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বলছেন যে, ব্যাংকটির শেয়ারহিত প্রতিষ্ঠান সাআলম গ্রুপের সঙ্গে সম্পর্ক বের হয়ে আসার পর, ৫ আগস্টের পর ব্যাপক টাকা উত্তোলন ঘটেছিল। তবে পরিস্থিতি এখন কিছুটা স্থিতিশীল হয়ে এসেছে এবং গ্রাহকদের বিশ্বাস পুনঃস্থাপন করার জন্য তারা কাজ করছে।

অন্যদিকে, যেসব ব্যাংক ভালো অবস্থানে ছিল, সেগুলোর ডিপোজিটের হার বেড়েছে। সবচেয়ে ভালো পারফরম্যান্স করেছে ব্র্যাক ব্যাংক, যেখানে ৩২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ডিপোজিট দাঁড়িয়েছে ৭৭,৭০৫ কোটি টাকায়। সিটি ব্যাংকও ভালো করেছে, তাদের ডিপোজিট বেড়ে ৩১ শতাংশে পৌঁছেছে। জামুনা ব্যাংক ও অন্যান্য কিছু ব্যাংকেও গত বছর বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

ব্যাংকিং খাতে একাধিক নতুন ব্যাংক, যেমন মিদল্যান্ড ব্যাংক, বাঙলাদেশ কমার্শিয়াল ব্যাংক, মেঘনা ব্যাংক ইত্যাদি ভাল ফলাফল দেখিয়েছে। প্রায় ২০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে এসব ব্যাংকের ডিপোজিট।

এবং, বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, এই সব পরিবর্তন শুধুমাত্র টাকার স্থানান্তরের ফলাফল নয়, এটি গ্রাহকদের নতুন বিশ্বাস এবং সঠিক ব্যাংক নির্বাচন করার একটি স্বাভাবিক প্রবণতা। প্রফেসর শাহ মোহাম্মদ আহসান হাবিব মনে করেন, এটা আর্থিক স্থিতিশীলতার প্রতি গ্রাহকদের এক ধরনের নতুন মনোভাব।

এবার, রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তনের ফলে ব্যাংকিং খাতের অনেক দুর্বল দিক বের হয়ে এসেছে। গ্রাহকরা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন হয়ে উঠেছেন।

©আহসান হাবিব
তথ্যসূত্র: দ্য ডেইলি স্টার

 

মারিয়া

আরো পড়ুন  

×