
যদি ‘সুখ’ হতো কোনো পাসপোর্ট, তবে এই দেশগুলো হতো পৃথিবীর প্রথম শ্রেণির গন্তব্য। সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্ব সুখ রিপোর্ট ২০২৫ অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশের মুকুট ধরে রেখেছে ফিনল্যান্ড। এটি দেশটির পরপর অষ্টমবার শীর্ষস্থান দখলের গৌরব।
জাতিসংঘের Sustainable Development Solutions Network এই প্রতিবেদনটি গ্যালাপ এবং Oxford Center for Well-Being Research-এর সহযোগিতায় প্রকাশ করে। সুখ বা জীবনসন্তুষ্টি পরিমাপের জন্য এতে ছয়টি প্রধান সূচক বিবেচনায় নেওয়া হয় প্রতি মাথাপিছু আয়, সামাজিক সহায়তার সুযোগ, স্বাস্থ্যকর আয়ু, নিজের জীবন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা, উদারতা এবং দুর্নীতির ধারণা।
চলুন দেখে নেওয়া যাক ২০২৫ সালের সুখ সূচকে শীর্ষ ১০টি দেশ কোনগুলো:
১. ফিনল্যান্ড
শিক্ষাব্যবস্থা থেকে শুরু করে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ফিনল্যান্ড যেন ভালোভাবে বেঁচে থাকার গোপন সূত্রটি জেনে ফেলেছে। শক্তিশালী সরকারি সেবা এবং ঘনিষ্ঠ সামাজিক বন্ধন তাদের জীবনকে করে তোলে আনন্দময়।
২. ডেনমার্ক
সমতা ও সামাজিক আস্থার ওপর গড়ে ওঠা ডেনিশ সংস্কৃতি তাদের সমাজকে করেছে সুষম ও স্বস্তিদায়ক। ‘হাইগে’ নামের আরামদায়ক জীবনের ধারণা ডেনমার্কে বেশ জনপ্রিয়।
৩. আইসল্যান্ড
সংখ্যায় কম মানুষ, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ এই দুটি মিলে আইসল্যান্ডে তৈরি করেছে নিরাপদ ও সহায়ক এক সমাজ। লিঙ্গসমতা ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এদেশের সুখবোধে বড় ভূমিকা রাখে।
৪. সুইডেন
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে আধুনিক সুবিধার অনন্য মিশ্রণ সুইডেন। দীর্ঘ মাতৃত্ব ও পিতৃত্বকালীন ছুটি, মানসম্মত শিক্ষা সব মিলিয়ে তাদের অবস্থান স্বাভাবিকভাবেই ওপরের দিকেই।
৫. ইসরায়েল
জটিল রাজনৈতিক বাস্তবতার মধ্যেও ইসরায়েলিরা জীবনের প্রতি সন্তুষ্ট। পারিবারিক মূল্যবোধ ও দৃঢ় মনোবল এখানে সুখের ভিত্তি গড়ে দিয়েছে।
৬. নেদারল্যান্ডস
সহনশীলতা ও প্রগতিশীল মানসিকতার জন্য পরিচিত নেদারল্যান্ডস। এখানে রয়েছে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা, সবুজ এলাকা এবং মজবুত অবকাঠামো।
৭. নরওয়ে
বিশ্বের অন্যতম উদার সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা নরওয়েকে করেছে সুখী। দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ বিশেষত তেল-সম্পদকে ব্যবহার করা হয়েছে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও জীবনমান উন্নয়নে।
৮. লুক্সেমবার্গ
ক্ষুদ্র ইউরোপীয় দেশ হলেও জীবনমানে অনেক বড়। উচ্চ আয় এবং দক্ষ সরকারি কাঠামো গড়ে তুলেছে উন্নত জীবনযাত্রা।
৯. সুইজারল্যান্ড
পরিচ্ছন্ন শহর, মনোমুগ্ধকর পর্বত, শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনধারা সুইজারের জীবনযাত্রা নিরাপদ, পরিপাটি এবং সুশৃঙ্খল।
১০. অস্ট্রেলিয়া
সূর্যালোক, উন্মুক্ত প্রাকৃতিক পরিবেশ ও আরামপ্রিয় মনোভাব অস্ট্রেলীয়দের বিশ্বের সবচেয়ে সুখী জনগোষ্ঠীগুলোর একটি করে তুলেছে।
আফ্রিকার প্রেক্ষাপটে
এদিকে নাইজেরিয়া এবারের প্রতিবেদনে ১৪৭টি দেশের মধ্যে ১০৫তম অবস্থানে রয়েছে, যা ২০২৪ সালের ১০২তম স্থান থেকে কিছুটা নিচে। তবে আফ্রিকায় এটি এখনও ১০তম সুখী দেশ হিসেবে গণ্য হচ্ছে, যেখানে মহাদেশের শীর্ষে রয়েছে লিবিয়া (৭৯তম)।
২০২৫ সালের রিপোর্টে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে সহানুভূতি, ভাগাভাগি এবং সংযোগ—এই মানবিক উপাদানগুলোর উপর, যেগুলো বিশ্বজুড়ে মানুষের সুখবোধকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।
সুখ মানে কেবল উন্নয়ন নয়, বরং সামাজিক সংহতি, সমতা এবং সচেতন নীতির ফলাফল। বিশ্ব সুখ সূচকের এ তালিকা আমাদের শেখায়, কীভাবে নীতিনির্ধারণ ও সমাজব্যবস্থার গুণগত পরিবর্তন মানুষের জীবনে আনতে পারে সত্যিকারের পরিতৃপ্তি ও মঙ্গল।
সূত্র:https://tinyurl.com/386853es
আফরোজা