
ছবিঃ সংগৃহীত
গভীর রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গিয়ে দেখা গেল শ্বাস নিতে পারছেন না, বুক ভারী লাগছে, যেন কেউ গলার উপর চেপে বসেছে—এমন অভিজ্ঞতা অনেকেই একাধিকবার পেয়েছেন। কিছুক্ষণ পর সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে এলেও সেই মুহূর্তের আতঙ্ক সহজে ভুলতে পারেন না কেউই। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এ সমস্যার নাম স্লিপ অ্যাপনিয়া (Sleep Apnea)। এটি ঘুমের মধ্যে শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার একটি বিপজ্জনক স্বাস্থ্য সমস্যা, যা দিন দিন বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, স্লিপ অ্যাপনিয়া কেবলমাত্র ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায় না, বরং এটি হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। এমনকি দীর্ঘমেয়াদে মানসিক অবসাদ, স্মৃতিভ্রষ্টতা ও মনোযোগের অভাবের কারণ হতে পারে।
কী এই স্লিপ অ্যাপনিয়া?
স্লিপ অ্যাপনিয়া হচ্ছে এমন একটি অবস্থা, যেখানে ঘুমের মধ্যে একজন ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এই শ্বাস বন্ধ থাকা কয়েক সেকেন্ড থেকে এক মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে এবং রাতে অনেকবার ঘটতে পারে।
স্লিপ অ্যাপনিয়ার দুটি প্রধান ধরন রয়েছে:
অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া (OSA): গলার পেশি শিথিল হয়ে শ্বাসনালি আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়।
সেন্ট্রাল স্লিপ অ্যাপনিয়া (CSA): মস্তিষ্ক থেকে শ্বাস-প্রশ্বাসের সংকেত ঠিকভাবে না পৌঁছানোয় শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়।
কোন লক্ষণগুলোতে সতর্ক হবেন?
মাঝরাতে দম বন্ধ হয়ে হঠাৎ জেগে ওঠা
অতিরিক্ত ক্লান্তি, দিনভর ঝিমুনি বা মাথাব্যথা
মনোযোগে ঘাটতি ও আচরণে পরিবর্তন
সকালে গলা শুকিয়ে যাওয়া বা ব্যথা অনুভব
জোরে ও অনিয়মিত নাক ডাকা
প্রতিকার কী?
১. ঘুমের ভঙ্গি পরিবর্তন করুন: চিত হয়ে না ঘুমিয়ে পাশে ফিরে ঘুমানোর অভ্যাস গড়ুন।
২. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন: অতিরিক্ত ওজন গলায় চর্বি জমাতে পারে, যা শ্বাসনালিতে চাপ সৃষ্টি করে।
৩. ধূমপান ও মদ্যপান বর্জন করুন: এগুলো শ্বাসনালির পেশিকে শিথিল করে দেয়, ফলে শ্বাস বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।
৪. ঘুমের নিয়ম ঠিক রাখুন: প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যান ও ঘুমের পরিমাণ ঠিক রাখুন।
৫. চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন: ‘স্লিপ স্টাডি’ বা ‘পলিসোমনোগ্রাফি’ টেস্টের মাধ্যমে সমস্যার মাত্রা নির্ণয় করা সম্ভব। গুরুতর ক্ষেত্রে চিকিৎসক ‘সিপিএপি’ (CPAP) মেশিন ব্যবহারের পরামর্শ দেন, যা ঘুমের সময় শ্বাসপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে।
মানসিক প্রভাবকেও হালকা করবেন না
দম বন্ধ হয়ে জেগে ওঠার অভিজ্ঞতা অনেক সময় মানসিক আঘাতের সৃষ্টি করে। এতে উদ্বেগ, প্যানিক অ্যাটাক বা অবসাদ দেখা দিতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে মনোচিকিৎসক বা কাউন্সেলরের সাহায্য নেওয়া উচিত।
ঘুম আমাদের শরীর ও মনের পূর্ণ পুনর্গঠনের একটি প্রক্রিয়া। সেখানে যদি শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যাহত হয়, তবে তার প্রভাব গোটা শরীরে পড়ে। তাই ঘুমের মধ্যে দম আটকে যাওয়ার মতো সমস্যাকে অবহেলা না করে সময়মতো সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। সচেতনতা এবং সময়মতো চিকিৎসাই পারে এই সমস্যার ঝুঁকি কমিয়ে একজন মানুষকে সুস্থ রাখতে।
নোভা