
জাতীয় নারী ফুটবল দলের আলোড়ন সৃষ্টিকারী তারকা ফুটবলার ঋতুপর্ণা চাকমার মা ভুজোপতি চাকমা দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে আক্রান্ত। কিন্তু অর্থের অভাবে তাঁর উন্নত চিকিৎসা করাতে পারছেন না। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপজয়ী এই নারী ফুটবলারের মমতাময়ী মা অর্থাভাবে ধুঁকে ধুঁকে দিন পার করছেন।
দেশের হয়ে ফুটবল মাঠে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনলেও নিজের মায়ের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাড় করতে পারছেন না ঋতুপর্ণা। পুরুষশূন্য পরিবার হওয়ায় জীবনের বাস্তবতা তাদের জন্য আরও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার দুর্গম মগাছড়ি গ্রামে ঋতুপর্ণার জন্ম। সেই পাহাড়ি গ্রামেই বেড়ে উঠেছেন তিনি। প্রচণ্ড অভাবের মধ্যেও ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা তাঁকে দেশের অন্যতম শীর্ষ নারী ফুটবলারদের কাতারে নিয়ে গেছে।
মূল সড়ক থেকে তাঁদের বাড়িতে যেতে হলে প্রায় তিন কিলোমিটার পাহাড়ি পথ হেঁটে যেতে হয়। পরিবারের পাঁচ সদস্যের মধ্যে ঋতুপর্ণাই একমাত্র উপার্জনক্ষম। তিন বোনের বিয়ে হয়ে গেছে, একমাত্র ভাই তিন বছর আগে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন। বাবা বরজ বাঁশি চাকমাও ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। বর্তমানে মা ভুজোপতি চাকমা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী।
উন্নত চিকিৎসা তো দূরের কথা, নিয়মিত ওষুধ কিনতেই হিমশিম খাচ্ছে তাঁদের পরিবার।
ঋতুর বড় বোন পাম্পী চাকমা সাংবাদিকদের বলেন,
“মায়ের উন্নত চিকিৎসা করাতে পারছি না। মায়ের ব্রেস্ট ক্যান্সার হয়েছে। সরকারের কাছে অনুরোধ—আমাদের পাশে দাঁড়াক, যেন মায়ের চিকিৎসা করাতে পারি।”
সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ঋতুপর্ণাদের বাড়ি তৈরি করে দেওয়া ও রাস্তা নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি সরকার।
এই বিষয়ে কাউখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী আতিউর রহমান জানান,
“আমরা ঋতুপর্ণার মায়ের ক্যান্সারের কথা শুনেছি। তবে আমাদের কাছে কেউ সরাসরি সহায়তা চায়নি। তাঁদের জন্য ঘর নির্মাণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন, যা ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। শিগগিরই ঘরের কাজ শুরু হবে এবং একই সঙ্গে রাস্তার কাজও শুরু হবে।”
ঋতুপর্ণা বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে পড়াশোনা করছেন। ফুটবল ও লেখাপড়া মিলিয়ে জীবন ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
সম্প্রতি এএফসি উইমেন্স এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেছেন ঋতু। মিয়ানমারের বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানের জয়ে দুটি গোলই করেন তিনি। তুর্কমেনিস্তানের বিপক্ষেও একটি গোল করেন।
তবু দেশে ফিরে মায়ের চিকিৎসার জন্য সাহায্যের আবেদন জানাতে হচ্ছে এই কৃতি কন্যাকে। ঋতুপর্ণা শুধু একজন ক্রীড়াবিদ নন, তিনি পাহাড়ের হাজারো নারীর স্বপ্নের প্রতীক।
সানজানা