ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৬ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২

চমকে দিচ্ছে ‘চাম কাঁঠাল’! হারিয়ে যাওয়া ফল আবারও বাজারে

আবুল ফজল মো. আবদুল হাই, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার

প্রকাশিত: ১৮:১৭, ৬ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৮:২১, ৬ জুলাই ২০২৫

চমকে দিচ্ছে ‘চাম কাঁঠাল’! হারিয়ে যাওয়া ফল আবারও বাজারে

ছবি: জনকণ্ঠ

চাম কাঁঠাল একটি বুনো ফল। চলছে ফলের মৌসুম। গ্রীষ্মকালীন বিভিন্ন ফলের পাশাপাশি বাজারে এখন দেখা মিলছে এক সময়ের প্রায় হারিয়ে যাওয়া চাম কাঁঠালের। দেখতে অনেকটা কাঁঠালের মতো হলেও এ ফল বেশিরভাগ মানুষ চেনেন না। এটি আকারে ছোট এবং স্বাদেও কাঁঠাল থেকে ভিন্ন।

ফলটি চাম কাঁঠাল নামে পরিচিত হলেও, এটি মূলত পাহাড়ি চাপালিশ বা চামল গাছের ফল। এলাকাভেদে একে চাম্বল, চাম্বুল, কাঁঠালি চাম্বুল, চাম ফল, চাপালিশ ফল, বুনো ফল, বনো কাঁঠাল ইত্যাদি নামেও ডাকা হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Artocarpus chama।

গত কয়েক বছরে এ ফলটি অনেকটা দুর্লভ হয়ে উঠলেও সংরক্ষিত বনাঞ্চলে চাপালিশ গাছ রোপণের ফলে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশে সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, মধুপুর, রাঙামাটি ও পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় সামান্যসংখ্যক এই গাছ রয়েছে। চাপালিশ একটি সুউচ্চ পত্রঝরা গাছ, যার উচ্চতা ৯০ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। গাছটিতে মার্চ-এপ্রিল মাসে ফুল আসে এবং জুন-আগস্ট মাসে ফল পাকে।

বনাঞ্চলে চাপালিশের বীজ থেকেই চারা গজায়। এছাড়া অন্যান্য ফলদ গাছের পাশাপাশি বন বিভাগও এই গাছের চারা রোপণ করে। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের আসাম, আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ, সিকিম, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, চীন, লাওস, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ায় এ গাছ প্রচুর দেখা যায়।

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, বড়লেখা উপজেলার সমনভাগ, জুড়ী উপজেলার পাথারিয়া, লাঠিটিলা, কুলাউড়া উপজেলার বরমচালসহ জেলার সংরক্ষিত বনাঞ্চলগুলোতে রয়েছে এ ফলের অসংখ্য গাছ। এসব গাছের ফল বর্তমানে শহরের বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। চলতি বছরে প্রতিটি চাম কাঁঠাল সাইজভেদে ৫০ থেকে ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছ রোড রেলগেইট এলাকার চাম কাঁঠাল বিক্রেতা আজিজুর রহমান বলেন, “আগে প্রচুর পরিমাণে চাম কাঁঠাল পাওয়া যেত। মাঝে এটি অনেকটা দুষ্প্রাপ্য হয়ে যায়। এ বছর আবার প্রচুর পাওয়া যাচ্ছে। কয়েক বছর আগেও ৫-১০ টাকায় প্রতিটি চাম কাঁঠাল বিক্রি করেছি। এখন সাইজভেদে ৫০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি করছি। শমসেরনগর থেকে এনে এখানে ব্যবসা করছি। তবে পরিচিতি ও চাহিদা বাড়ায় এখন বেশি দামে কিনতে হচ্ছে, তাই বিক্রি মূল্যও তুলনামূলক বেশি।”

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক জামিল মোহাম্মদ খান স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, “আমার কর্ম এলাকা কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া এবং চুনারুঘাটের সাতছড়ি বনাঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে চাপালিশ বা চামল গাছ রয়েছে। এ গাছটির ফল অত্যন্ত সুস্বাদু এবং অনেক বন্যপ্রাণীর প্রিয় খাবার।”

শহীদ

×