
দেখতে অবিকল আপেলের মতো সুন্দর এই ফলের নাম ‘লাভ লাভ’। কিন্তু পুরো ফলটাই বিষে ভরা। ভালোবাসার নামের আড়ালে লুকিয়ে আছে এর নির্মম ভয়ংকর দিক। বাহ্যিক সৌন্দর্য থাকলেও এর ভেতরে রয়েছে মারাত্মক বিষ।
‘লাভ লাভ’ ফলের ফুলে থাকে তীব্র সুগন্ধ, যা দূর থেকে মানুষকে আকর্ষণ করে। বর্ষা শুরুর আগে গাছে ফুল আসে, আর বর্ষাকালেই ফল পাকতে শুরু করে। দেখতে যতটা সুন্দর, এর ভেতরে রয়েছে আঠালো এক সাদা রস, যা অত্যন্ত বিষাক্ত।
কুষ্টিয়া শহরের ‘আকাবা’ নামক একটি নার্সারিতে দেখা মিলেছে এ ফলটির। নার্সারিতে ঢুকতেই চোখে পড়ে গাছটি। সেখানে ঝুলছে একাধিক ‘লাভ লাভ’ ফল।
এ ধরনের গাছ সাধারণত ভারতের কেরালা ও মাদাগাস্কারে পাওয়া যায়। সেখানে এই ফল খেয়ে প্রতি বছর অনেকেই আত্মহত্যা করেন। যদিও এটি খাওয়ার জন্য নয়, এর রস দিয়ে কীটনাশক তৈরি করা হয়।
স্থানীয়ভাবে এ ফলের নাম ‘লাভ লাভ’ হলেও এর বৈজ্ঞানিক নাম Cerbera odollam। এ ফলের ভেতরে রয়েছে কার্ডিয়াক গ্লাইকোসাইড নামক এক ধরনের বিষাক্ত রাসায়নিক, যা মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে সরাসরি হৃদপিণ্ডের ক্রিয়া বন্ধ করে দিতে পারে।
নার্সারির মালিক ডা. রুহুল আমিন জানান, “১৬ বছর আগে বগুড়া থেকে চারা এনে লাগিয়েছিলাম। গাছের ফুলে রয়েছে তীব্র সুগন্ধ—অনেক দূর থেকেও পাওয়া যায়। গাছের ফল দেখতে আপেলের মতো সুন্দর, তবে এটি খাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অনেকেই সৌন্দর্যের কারণে চারা কিনে নিয়ে যান। ফলের মধ্যে তেমন কোনো বীজ নেই—ভেঙে দেখলে ভেতরে সাদা আঠালো রস দেখা যায়।”
কুষ্টিয়া সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রূপালি খাতুন বলেন, “‘লাভ লাভ’ ফলের গাছকে অনেকে সুইসাইড ট্রি হিসেবেও চেনেন। এটি সাধারণত ভারতসহ কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চলে পাওয়া যায়। এর ফুলের সুগন্ধ অত্যন্ত তীব্র—এই কারণে অনেকেই বাড়িতে রোপণ করেন। কিন্তু এ ফল খাওয়া যায় না—খেলে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে এই ধরনের গাছ রোপণ এবং বিক্রি না করার পরামর্শ দিচ্ছি।”
তিনি আরও জানান, “ফসলের পোকামাকড় দমনে সতর্কতার সঙ্গে এই ফলের রস ব্যবহার করে কীটনাশক হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।”
সানজানা