ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৬ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২

আগ্নেয়গিরির লাভা দিয়ে গড়ে উঠবে ভবিষ্যতের টেকসই নগরী!

প্রকাশিত: ০১:০৮, ৬ জুলাই ২০২৫

আগ্নেয়গিরির লাভা দিয়ে গড়ে উঠবে ভবিষ্যতের টেকসই নগরী!

ভয়াবহ আগ্নেয়গিরির লাভা বরাবরই ধ্বংসের প্রতীক হিসেবে পরিচিত—গৃহ, অঞ্চল, জীবিকা সবকিছু ধ্বংস করে দিতে পারে এর প্রবাহ। তবে আইসল্যান্ডের স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান s.ap arkitektar এখন সেই ধ্বংসাত্মক লাভাকেই ভবিষ্যতের নগর গঠনের উপাদান হিসেবে কল্পনা করছে।

ভেনিস আর্কিটেকচার বিয়েনালেতে নতুন ধারণা ‘Lavaforming’

এই সাহসী ও কল্পনামূলক প্রকল্প ‘Lavaforming’ উপস্থাপন করা হয়েছে চলমান Venice Architecture Biennale 2025-এ। এতে লাভাকে ভবনের দেয়াল, স্তম্ভ ও কাঠামোতে রূপান্তরের জন্য নিয়ন্ত্রিতভাবে ঠান্ডা করার কৌশল তুলে ধরা হয়েছে।

স্থপতি আর্নহিলদুর পালমাদোত্তির এবং তাঁর পুত্র আর্ণার স্কারফেদিনসন পরিচালিত প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বাস করে, লাভাকে নিয়ন্ত্রিতভাবে ঠান্ডা করে বাসযোগ্য ও টেকসই নগর গঠন করা সম্ভব।

কেন লাভা?

সাধারণত লাভা ঠান্ডা হয়ে বাসল্ট বা অবসিডিয়ান নামক আগ্নেয় শিলা তৈরি করে। গবেষকরা দেখিয়েছেন, দ্রুত ঠান্ডা হলে লাভা হয় কাঁচের মতো শক্ত অবসিডিয়ান, ধীরে ঠান্ডা হলে তৈরি হয় ক্রিস্টালাইজড শিলা, যা বিল্ডিংয়ের কাঠামো নির্মাণে উপযোগী। বাতাসের সংস্পর্শে দ্রুত ঠান্ডা হলে লাভা পরিণত হয় পিউমিস জাতীয় ইনসুলেটিভ পাথরে।

এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য কেবল নতুন উপাদান ব্যবহারই নয়, বরং সিমেন্ট-নির্ভর নির্মাণশিল্পের কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করাও। উল্লেখযোগ্য যে, সিমেন্ট উৎপাদনই বিশ্বব্যাপী মোট CO₂ নিঃসরণের প্রায় ৮% দায়ী।

তিনটি কৌশলপ্রসূত ‘লাভা নির্মাণ’ পদ্ধতি

১. লাভা খাত তৈরি: আগ্নেয়গিরির পাদদেশে পরিকল্পিত খাত খনন করে লাভাকে নির্দিষ্ট পথে প্রবাহিত করে ঠান্ডা করে কাঠামো তৈরি।

২. ৩ডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি: ভবিষ্যতের রোবট লাভা-পৃষ্ঠে ঘুরে বেড়িয়ে ভবনের উপাদান প্রিন্ট করবে।

৩. ভূপৃষ্ঠের নিচের লাভার চেম্বার: ভূগর্ভস্থ লাভাকে নির্দিষ্ট চেম্বারে এনে ঠান্ডা করে প্রিফ্যাব উপাদান তৈরি, যা জিওথার্মাল শক্তি উৎপাদনের পদ্ধতির সঙ্গে তুলনীয়।

বাসল্টের ঐতিহাসিক ব্যবহার ও নতুন দৃষ্টিভঙ্গি

বাসল্ট, লাভা ঠান্ডা হয়ে তৈরি হওয়া পাথর, প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে। উদাহরণ:

  • Qasr al-Azraq (১৩শ শতাব্দী, জর্ডান)

  • Gateway of India (১৯২৪, মুম্বাই)

  • Dominus Winery (১৯৯৭, ক্যালিফোর্নিয়া)

  • Casa Basaltica (২০২৩, মেক্সিকো)

তবে s.ap arkitektar এর চিত্র ভিন্ন। তারা লাভাকে “মনোম্যাটেরিয়াল” হিসেবে ব্যবহার করতে চায়—একই লাভা থেকে তৈরি হবে কাঠামো, জানালা, ইনসুলেশন সব কিছু, শুধু ঠান্ডা করার ধরণ অনুযায়ী রূপ বদলে।

চিন্তায় পরিবর্তন আনাই লক্ষ্য

এখনও এটি একটি চিন্তামূলক প্রকল্প হলেও এটি আগ্নেয়গিরিপ্রবণ দেশগুলো যেমন আইসল্যান্ড, হাওয়াই, ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জ–এর জন্য ভবিষ্যতে বাস্তবসম্মত হতে পারে। প্রকল্পটি প্রযুক্তিগত, ভূতাত্ত্বিক, অর্থনৈতিক ও নীতিগত দিক থেকে চ্যালেঞ্জপূর্ণ হলেও মূল লক্ষ্য হলো প্রথাগত নির্মাণশিল্পকে পরিবেশবান্ধব উপায়ে পুনর্বিবেচনা করা।

স্থপতি পালমাদোত্তির ভাষায়:
“প্রাকৃতিক দুর্যোগকে কেবল দুর্যোগ না ভেবে, কিভাবে টেকসই নগর নির্মাণে রূপান্তর করা যায়—সেই চিন্তা থেকেই আমাদের যাত্রা।”

Jahan

×