ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৬ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২

পরিবারকে ইমপ্রেস করতে পুলিশে ঢোকার অভিনব প্রতারণা

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৮:০১, ৬ জুলাই ২০২৫

পরিবারকে ইমপ্রেস করতে পুলিশে ঢোকার অভিনব প্রতারণা

ছবি: সংগৃহীত

রাজস্থানের পুলিশ বাহিনীতে অভিনব প্রতারণার ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। মোনা বুগালিয়া নামের এক নারী, যিনি ‘মুলি দেবী’ ছদ্মনামে নিজেকে পুলিশ সাব-ইন্সপেক্টর পরিচয়ে দুই বছর ধরে রাজস্থান পুলিশ অ্যাকাডেমিতে কাজ করেছেন, অবশেষে গ্রেফতার হয়েছেন।

এই তরুণী পুলিশ ইউনিফর্ম পরে ট্রেনিং নিয়েছেন, সিনিয়র অফিসারদের সঙ্গে ছবি তুলেছেন, এমনকি প্রকাশ্যে ক্যারিয়ার নিয়ে বক্তৃতাও দিয়েছেন যার সবই ছিল প্রতারণা।

২০২১ সালে রাজস্থান পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হন মোনা বুগালিয়া। এরপরই মুলি দেবী নামক ভুয়া পরিচয় তৈরি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার শুরু করেন যে তিনি ক্রীড়া কোটার মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছেন।

এই পরিচয়ে তিনি সাব-ইন্সপেক্টরদের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হন এবং রাজস্থান পুলিশ অ্যাকাডেমিতে একজন প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে হাজির হন।

দুই বছর ধরে মুলি দেবী পরিচয়ে তিনি পূর্ণ পুলিশ ইউনিফর্মে প্যারেডে অংশ নেন, ট্রেনিং গ্রাউন্ডে উপস্থিত থাকেন, এমনকি ইনস্টাগ্রামে বিভিন্ন ‘মোটিভেশনাল রিল’ পোস্ট করেন। তার ছবি দেখা গেছে সিনিয়র পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে, যেখানে তিনি জনসমক্ষে বক্তৃতাও দেন।

কিছু প্রশিক্ষণার্থী সাব-ইন্সপেক্টরের সন্দেহ হয় তার পরিচয় নিয়ে। বিষয়টি সিনিয়রদের জানানো হলে শুরু হয় অভ্যন্তরীণ তদন্ত। জিজ্ঞাসাবাদের সময় মোনা স্বীকার করেন, তিনি মুলি দেবী নন এবং ভুয়া নথিপত্র ব্যবহার করে পুলিশ প্রশিক্ষণে প্রবেশ করেছেন।

সপ্তাহের শুরুতে তাকে রাজস্থানের সিকর জেলা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার ভাড়াবাড়ি থেকে উদ্ধার হয় ৭ লাখ রুপি নগদ, তিনটি আলাদা পুলিশ ইউনিফর্ম, পরীক্ষা সংক্রান্ত নথিপত্র এবং নকল পরিচয়পত্র।

মোনা বুগালিয়ার বাড়ি রাজস্থানের নাগাউর জেলার নিম্বা কে বাস গ্রামে। তার বাবা পেশায় ট্রাকচালক। চার বোনের মধ্যে তিনি একমাত্র যিনি পুলিশে যেতে চেয়েছিলেন। পরিবারকে প্রভাবিত করতে ও পুলিশের ক্ষমতা ব্যবহার করতে চেয়েই এই পথ বেছে নেন বলে তিনি জানিয়েছেন।

এই ঘটনায় সামাজিক কর্মী বিজয় কুম্ভার বলেন, “এটি কেবল একটি ব্যর্থতা নয়, এটি একটি প্রাতিষ্ঠানিক পচন। কোনো ভেরিফিকেশন ছাড়াই কীভাবে কেউ দুই বছর পুলিশ হিসেবে কাজ করতে পারে?”

তিনি আরও বলেন, “আপনারা গোটা বিশ্বের ভেরিফিকেশন করেন, অথচ নিজের অ্যাকাডেমির ভিতরেই কে ঢুকছে তা জানেন না?”

রাজস্থান পুলিশ অ্যাকাডেমি এমন একটি জায়গা যেখানে নিরাপত্তা অত্যন্ত কঠোর। অথচ এত কড়াকড়ির মধ্যেও একজন প্রতারক কীভাবে দীর্ঘদিন ধরে প্রশিক্ষণে থাকতে পারলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনিক ব্যর্থতা ও তদারকির ঘাটতি নিয়ে।

পুলিশ জানিয়েছে, মামলাটি এখনো তদন্তাধীন। মোনার বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগ আনা হবে এবং এই প্রতারণায় আর কেউ জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

মুমু ২

আরো পড়ুন  

×