ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৭ জুলাই ২০২৫, ২৩ আষাঢ় ১৪৩২

জমি নিয়ে বিরোধে প্রতিপক্ষকে দমাতে চাঁদাবাজির মামলা

নিজস্ব সংবাদদাতা, হাতিয়া

প্রকাশিত: ১৫:৩১, ৬ জুলাই ২০২৫

জমি নিয়ে বিরোধে প্রতিপক্ষকে দমাতে চাঁদাবাজির মামলা

জমি নিয়ে বিরোধ মীমাংসায় দেওয়া হয় প্রস্তাব। তাতে সম্মতি না পাওয়ায় দেখানো হয় অর্থের লোভ। তাতেও কাজ না হওয়ায় দেওয়া হয় মামলা। চাঁদাবাজির অভিযোগের মামলাটি করা হয় আদালতে। আদালতের নির্দেশে দেওয়া প্রতিবেদনে সত্য ঘটনা বলে স্বীকৃতি দেন এসআই। তাতে অনেকটা নাজেহাল পল্লিচিকিৎসক নুর উদ্দিনসহ গ্রামের অসহায় কয়েকজন দিনমজুর। ঘটনাটি ঘটেছে নোয়াখালীর হাতিয়ার বুড়িরচর ইউনিয়নে।

এদিকে চাঁদাবাজির এই মামলার প্রধান সাক্ষী সামছল আলম জানান, চাঁদাবাজির অভিযোগটি সঠিক নয়। মামলা করতে হলে সত্য-মিথ্যা গল্প জড়াতে হয়। তিনি এই মামলায় ১ নম্বর সাক্ষী। অথচ তিনি চাঁদাবাজির বিষয়ে কিছুই জানেন না।

শুধু সামছল আলম নয়, এই মামলার অন্যান্য সাক্ষীদের মধ্যে মাওলানা ফখরুল ইসলাম ও বেলাল উদ্দিন দুজনেই এই মামলার সম্পর্কে কিছুই জানেন না। তাদের মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে—এটা আগে থেকে জানতেন না। বিভিন্ন সময় এসব সাক্ষীদের সঙ্গে মোবাইলে কথা হয় সাংবাদিকদের। এসব কথোপকথন রেকর্ড করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, জমির মালিকানা নিয়ে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে দ্বন্দ্ব চলছে মো. আলীদের পরিবার ও পল্লিচিকিৎসক নূর উদ্দিনের পরিবারের সাথে। মো. আলীর বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রিপুর ইউনিয়নে। হাতিয়ার বুড়িরচর ইউনিয়নের জোড়খালী গ্রামে পল্লিচিকিৎসক নূর উদ্দিনদের বাড়ির পাশে জমি নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। মো. আলীদের পূর্বপুরুষের অনেক সম্পত্তি রয়েছে এখানে। জমি নিয়ে বিরোধের কারণে আপস-মীমাংসায় বশে আনতে না পেরে মো. আলী উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রতিপক্ষের গরিব-অসহায় একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করেন। এই কাজে মো. আলীকে সহযোগিতা করছে স্থানীয় কিছু লোক।

ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা যায়, জমির মালিকানা নির্ধারণে আদালতে একটি মামলা চলমান রয়েছে। কিন্তু হঠাৎ মো. আলী বাদী হয়ে ১০ এপ্রিল হাতিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৮ জনকে আসামি করে একটি চাঁদাবাজির মামলা করেন। আদালত অভিযোগটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য হাতিয়া থানাকে নির্দেশ দেন। তাতে দায়িত্ব দেওয়া হয় সাগরিয়া পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক ফরহাদ হোসেনকে। ফরহাদ হোসেন দায়িত্ব পেয়ে অভিযোগটি তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন। তাতে তিনি ১১ জন সাক্ষীর মধ্যে ৭ জনের সাথে কথা বলার কথা উল্লেখ করেছেন। আবার প্রত্যেকের স্বাক্ষর করা জবানবন্দি আদালতে জমা দেন—বাস্তবে দেখা যায় তার বিপরীত। সাক্ষীদের অনেকে তদন্ত কর্মকর্তার সাথে দেখা হয়নি বলেও জানান ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।

চাঁদাবাজির মামলার আসামি পল্লিচিকিৎসক মো. নূর উদ্দিন বলেন, “মো. আলীর সাথে আমার ওয়ারিশসূত্রে জমির মালিকানা নিয়ে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে দ্বন্দ্ব চলছে। আমাদের পূর্বপুরুষের নামে বন্দোবস্ত হওয়া জমি তাদের নামে রেকর্ড হয়ে গেছে। সেই রেকর্ড বাতিল চেয়ে আদালতে মামলা করেছি আমরা। এই মামলার রায় তাদের বিরুদ্ধে যাবে মনে করে তারা আমাকে বিভিন্নভাবে বিপাকে ফেলতে চাচ্ছে। সামাজিকভাবে তারা বিভিন্ন লোকজন দিয়ে হুমকি দিচ্ছে। এরপরও কিছুই করতে না পেরে আমিসহ কয়েকজন অসহায় লোককে চাঁদাবাজির মামলায় জড়িয়ে দিয়েছে। মামলার অন্য আসামিরা সবাই দিনমজুর, অসহায়। মামলাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। মো. আলী লক্ষ্মীপুরে থাকেন। হাতিয়ায় তেমন একটা আসেন না। এখানে কিছু লোককে টাকা-পয়সা দিয়ে এসব কলকাঠি নাড়ছেন।”

এই বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাগরিয়া পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক ফাহাদ হোসেন বলেন, “মামলাটি হওয়ার পরপরই নূর উদ্দিনকে আপস-মীমাংসা করার জন্য বলেছি। তিনি তা শোনেননি।” চাঁদাবাজির অভিযোগে করা মামলার সাক্ষীরা কিছুই জানে না—প্রতিবেদন কিভাবে দিলেন, এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “সবাই লিখিত বক্তব্য দিয়েছে।” সাক্ষীদের কথা রেকর্ড আছে—এধরনের তথ্য দিলে তিনি বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যান।

হাতিয়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা একেএম আজমল হুদা বলেন, “তদন্তকারী কর্মকর্তার তদন্তের বিষয়ে আপত্তি থাকলে আমাকে প্রতিবেদন দেওয়ার আগে জানালে আমি ব্যবস্থা নিতাম। সঠিকটা খুঁজে বের করা পুলিশের কাজ। এরপরও আমি বিষয়টি দেখবো।” 

সানজানা

×