ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৬ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২

নতুন রাজনৈতিক দল ‘আমেরিকা পার্টি’ ঘোষণা এলন মাস্কের, ট্রাম্পের বিল নিয়ে তীব্র সমালোচনার পর বড় সিদ্ধান্ত

প্রকাশিত: ১৬:২০, ৬ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৬:২০, ৬ জুলাই ২০২৫

নতুন রাজনৈতিক দল ‘আমেরিকা পার্টি’ ঘোষণা এলন মাস্কের, ট্রাম্পের বিল নিয়ে তীব্র সমালোচনার পর বড় সিদ্ধান্ত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বহুল আলোচিত মেগা বিলকে তীব্রভাবে সমালোচনা করার পর নিজের সামাজিক মাধ্যম ‘এক্স’-এ নতুন একটি রাজনৈতিক দলের ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী এলন মাস্ক।৫ জুলাই মাস্ক লিখেছেন, “অপচয় ও দুর্নীতির মাধ্যমে আমাদের দেশকে দেউলিয়া করে ফেলার ব্যাপারে আমরা একদলীয় শাসনেই আছি, এটা কোনো গণতন্ত্র নয়। আজ 'আমেরিকা পার্টি' গঠিত হলো, আপনাদের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতে।”

ট্রাম্পের মেগা বিল ঘিরে দুই সাবেক মিত্রের মধ্যে সম্প্রতি দূরত্ব তৈরি হয়। বিলটির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ঋণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে মাস্ক কংগ্রেসে রিপাবলিকানদের মধ্যে বিলের বিরোধিতায় উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করেন। পরে ট্রাম্প ৪ জুলাই বিলটিতে স্বাক্ষর করেন।

ফোর্বস-এর তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে ৪০৫ বিলিয়ন ডলারের মালিক মাস্ক অতীতে ট্রাম্প ও রিপাবলিকান প্রার্থীদের নির্বাচনে জয়ী করতে প্রায় ২৯০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছিলেন। ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সির শুরুতে তিনি সরকারি ব্যয় হ্রাসের জন্য ‘ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি’-র মাধ্যমে বিভিন্ন এজেন্সি ছাঁটাইয়ের উদ্যোগে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দুই পক্ষের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হয়। মাস্ক প্রকাশ্যে ট্রাম্পের ‘বিগ বিউটিফুল বিল’ নামে পরিচিত এই বিলটির সমালোচনা করেন, যা কর ছাড়, সীমান্ত নিরাপত্তা ও সামরিক খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি মেডিকেইড খাতে বড় ধরনের কাটছাঁটের প্রস্তাব আনে।

যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসনাল বাজেট অফিসের হিসাবে বিলটি আগামী এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণে ৩.৪ ট্রিলিয়ন ডলার যুক্ত করবে এবং ঋণসীমা ৫ ট্রিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বাড়াবে।

মাস্ক এই বিলের পক্ষে ভোট দেওয়া কংগ্রেস সদস্যদের কঠোর সমালোচনা করে লিখেছেন, “যারা সরকারি ব্যয় হ্রাসের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচিত হয়ে এসেই ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ঋণ বৃদ্ধির পক্ষে ভোট দিয়েছে, তাদের লজ্জায় মাথা নিচু করে রাখা উচিত। আমি যতদিন বেঁচে থাকব, তাদের প্রাইমারিতে হারাতে যা করা দরকার, আমি করব।”

৪ জুলাই মাস্ক এক্স-এ নতুন একটি রাজনৈতিক দলের সম্ভাবনা নিয়ে জনমত যাচাইয়ের জন্য একটি জরিপ চালান। পরদিন ৫ জুলাই তিনি জরিপের ফলাফল প্রকাশ করেন, যেখানে প্রায় ২-১ ব্যবধানে নতুন দল গঠনের পক্ষে সমর্থন উঠে আসে।

“আপনারা একটি নতুন রাজনৈতিক দল চান, এবং সেটিই আপনারা পাচ্ছেন!”লিখে আনুষ্ঠানিকভাবে দলের ঘোষণা দেন মাস্ক।

তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে নতুন দলটি সীমিতসংখ্যক নির্বাচনী আসনে সক্রিয় থাকতে পারে।“এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের একটি উপায় হতে পারে মাত্র ২-৩টি সিনেট আসন এবং ৮-১০টি হাউজ ডিস্ট্রিক্টে পুরো মনোযোগ দেওয়া,” মাস্ক লিখেছেন। “কারণ আইনসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা খুবই সীমিত, তাই এমন কয়েকটি আসনে জয় পেলেই তা বিতর্কিত আইন পাসে ‘ডিসাইডিং ভোট’ হিসেবে কার্যকর হতে পারে, যা প্রকৃত জনগণের ইচ্ছাকে প্রতিনিধিত্ব করবে।”

মাস্কের এই নতুন রাজনৈতিক অবস্থান আসে এমন সময়, যখন তিনি গত মাসে ট্রাম্প প্রশাসন থেকে বিতর্কিতভাবে পদত্যাগের পর সম্পর্ক মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছিলেন, এমনকি ব্যক্তিগতভাবে ট্রাম্পের কাছে ক্ষমাও চেয়েছিলেন।এর জবাবে ট্রাম্পও সম্প্রতি হুমকি দেন যে, মাস্কের প্রতিষ্ঠানগুলো ফেডারেল সরকার থেকে যে বিলিয়ন ডলারের ভর্তুকি পায়, তা বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে।

তবে মে মাসে উইসকনসিনের সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে কোটি ডলার ব্যয় করেও ব্যর্থ হওয়ার পর মাস্ক জানান, তিনি আপাতত রাজনৈতিক খরচ বন্ধ রাখছেন এবং আবার নিজের দুই প্রতিষ্ঠান টেসলা ও স্পেসএক্স এ মনোযোগ ফেরাবেন।

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে এলন মাস্কের ‘আমেরিকা পার্টি’ নতুন এক উত্তেজনার নাম হতে পারে। ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের সমর্থক হিসেবে পরিচিত এই উদ্যোক্তা এবার তার বিপরীতমুখী অবস্থান নিয়ে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছেন। 

 

 

সূত্র:https://tinyurl.com/25y26srr

আফরোজা

×