ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৭ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২

ছোট ভাইয়ের লাশ আনতে গিয়ে, লাশ হয়ে একই অ্যাম্বুলেন্সে ফিরল বড় ভাই ও ফুফাতো ভাই

ওবাইদুল আকবর রুবেল, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ২০:৪১, ৬ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ২০:৪২, ৬ জুলাই ২০২৫

ছোট ভাইয়ের লাশ আনতে গিয়ে, লাশ হয়ে একই অ্যাম্বুলেন্সে ফিরল বড় ভাই ও ফুফাতো ভাই

আনোয়ারা বেগম তার প্রবাসী ছেলের লাশের অপেক্ষায় চেয়ে ছিলেন, কিন্তু তার আঙ্গিনায় এলো একে একে তিনটি কফিন। বিদেশফেরত মেঝো ছেলের লাশের সঙ্গে ফিরল বড় ছেলে আর ফুফাতো ভাইয়ের নিথর দেহ। সন্তানহারা মায়ের বুকফাটা আহাজারিতে ফটিকছড়ির ভূজপুর ইউনিয়নের তালুকদার পাড়া শনিবার মধ্যরাতে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছিল।

যখন গাড়ি থেকে একে একে তিনটি লাশের খাটিয়া নামানো হলো, আনোয়ারা বেগম যেন পাথর হয়ে গিয়েছিলেন। মুখে কোনো কথা নেই, চোখে শূন্যতা। কাঁপা কাঁপা হাতে স্পর্শ করলেন কফিনগুলো। এরপর বুক চাপড়ে আহাজারি করতে করতে বিলাপ করছিলেন, “বাবা, একবার কথা বল, শুধু একবার। তোরা না বলেছিলি ভাইয়ের লাশ আনবি, তোরা কেন কথা বলছিস না?” কিন্তু সন্তানদের কাছ থেকে আর কোনো উত্তর মিলল না।

পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে গত বছর সৌদি আরবে গিয়েছিলেন কৃষক ফুল মিয়া ও আনোয়ারা দম্পতির মেঝো ছেলে মোহাম্মদ রুবেল (২৭)। সেখানে এক তুচ্ছ ঘটনায় দোকান মালিকের নির্যাতনের শিকার হয়ে গুরুতর আহত হন তিনি। দীর্ঘ চিকিৎসার পর গত বছরের ১৭ জুলাই মারা যান রুবেল। প্রায় এক বছরের আইনি লড়াই শেষে শনিবার তার লাশ দেশে ফেরে।

ভাইয়ের লাশ গ্রহণ করতে ঢাকা বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন বড় ভাই মোহাম্মদ বাবুল (৩৭) এবং ফুফাতো ভাই ঠিকাদার মো. ওসমান গণি (৩৫)। কিন্তু শনিবার বিকেলে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বাতিসা এলাকায় ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় তারা দুজনই প্রাণ হারান। যে ভাই ছোট ভাইয়ের লাশ আনতে গিয়েছিলেন, সেই ভাইও ফিরলেন একই অ্যাম্বুলেন্সে কফিনে বন্দি হয়ে।

শনিবার রাত ১১টায় সরেজমিনে দেখা যায়, রুবেলের লাশ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স বাড়িতে পৌঁছালে কান্নার রোল পড়ে যায়। স্বজন, প্রতিবেশী এবং বন্ধুরা বুকফাটা আহাজারিতে ভেঙে পড়েন। নিহত বাবুলের স্ত্রী সাহেদা আক্তার বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। অবুঝ দুই কন্যাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, “আমি এখন আমার সন্তানদের কী বলব? কী নিয়ে বাঁচব আমি? কে দেবে তাদের সান্ত্বনা?”

অন্যদিকে, নিহত ওসমানের স্ত্রী নুসরাত জাহান শিমা বলেন, “দুর্ঘটনার কয়েক মিনিট আগেও ও ফোন করেছিল। বলল লাশ নিয়ে ফিরছি। অথচ সে নিজেই ফিরল কফিনে বন্দি হয়ে।”

১৭ বছর বয়সী ছোট বোন রুম্পা আক্তার কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, “ভাইয়েরাই ছিল আমাদের ভরসার জায়গা। বাবা-মায়ের আশ্রয়। হে আল্লাহ, আমাদের কী করলে তুমি?”

মিমিয়া

×