
ছবি: সংগৃহীত।
বাণিজ্য, প্রযুক্তি আর সামরিক কৌশলের মতো এবার চিকিৎসাবিজ্ঞানে নতুন যুগের সূচনা করল চীন। চীনা বিজ্ঞানীরা এমন এক জিনগত “সুইচ” আবিষ্কার করেছেন, যার মাধ্যমে কাটা অঙ্গ পুনরায় গজিয়ে তোলার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
এই বিস্ময়কর গবেষণা সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী "সায়েন্স"-এ প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ইঁদুরের কানের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ নতুন করে কার্টিলেজসহ সম্পূর্ণ গজিয়ে উঠেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব মাইলফলক।
এই গবেষণার মূল নেতৃত্বে রয়েছেন ড. ওয়াং ওয়ে, যিনি বেইজিংয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেস-এর গবেষক। তিনি বলেন, “অঙ্গ পুনর্জন্মের জন্য আমাদের দেহে এক ধরনের জিনগত সুইচ রয়েছে, যা এতদিন বিজ্ঞানীদের অজানা ছিল। সেই সুইচ সক্রিয় করেই আমরা অঙ্গ গজানোর প্রক্রিয়াকে কার্যকর করতে পেরেছি।”
মূলত ভিটামিন-এ থেকে উৎপন্ন একটি রাসায়নিক পদার্থ, রেটিনোইক অ্যাসিড এই প্রক্রিয়ায় মূল ভূমিকা রাখে। এটি কোষকে নির্দেশ দেয়— কোথায় ও কিভাবে পুনর্গঠন শুরু করতে হবে।
গবেষণায় ব্যবহার করা হয়েছে ‘অস্টেরিওসিক’ নামের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, যেটিকে বিজ্ঞানীরা বলেন Life Camera। এটি কোষের অভ্যন্তরীণ ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ করে এবং কোন জিন কীভাবে ও কখন সক্রিয় হয়, তা শনাক্ত করতে সাহায্য করে।
সহগবেষক ডেং জিচিং, যিনি BGI রিসার্চের জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী, তিনি জানান— “এই প্রযুক্তির মাধ্যমে অঙ্গ পুনর্জন্মের সম্পূর্ণ জেনেটিক মানচিত্র আমাদের সামনে খুলে গেছে।”
বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলেছেন, মানুষের অঙ্গ ইঁদুরের মতো সরল নয়, বরং অনেক বেশি জটিল। প্রতিটি অঙ্গ ভিন্ন ভিন্ন সংকেত ও জিনের মাধ্যমে কাজ করে। তাই মানবদেহে এই প্রযুক্তি প্রয়োগে আরও সময় লাগবে।
তবে ড. ওয়াং ওয়ে আশাবাদী— “আমরা প্রমাণ করেছি— জিনগত সুইচ বাস্তবেই আছে। এখন আমাদের লক্ষ্য, মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গে সেই সুইচগুলো শনাক্ত করা।”
যদিও গবেষণাটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে, বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন এই পথ ধরেই একদিন হয়তো কাটা হাত বা পা আবার গজিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে চীনের এই সাফল্য শুধু একটি সূচনা, কিন্তু এতে ভবিষ্যতের জন্য আশার দিগন্ত খুলে গেছে।
নুসরাত