
ছবি: জনকণ্ঠ
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল, যেখানে প্রায় ৬০ লাখ মানুষ বসবাস করেন, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বিশ্বের প্রথম আধুনিক 'পানিশূন্য' মহানগরীতে পরিণত হতে পারে বলে সতর্ক করেছে আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থা Mercy Corps।
প্রতিবেদন অনুসারে, কাবুল শহরের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর গত এক দশকে ২৫–৩০ মিটার (৮২–৯৮ ফুট) পর্যন্ত নেমে গেছে। বর্তমানে প্রতি বছর প্রাকৃতিকভাবে রিচার্জ হওয়ার তুলনায় ৪৪ মিলিয়ন কিউবিক মিটার বেশি পানি উত্তোলন করা হচ্ছে।
UNICEF-এর তথ্য বলছে, কাবুল শহরের প্রায় অর্ধেক বোরওয়েল ইতোমধ্যে শুকিয়ে গেছে। পাশাপাশি, শহরের প্রায় ৮০% ভূগর্ভস্থ পানিতে বিষাক্ত পদার্থ, মলমূত্র, আর্সেনিক ও অতিরিক্ত লবণাক্ততার উপস্থিতি রয়েছে।
২০০১ সালে যেখানে কাবুলের জনসংখ্যা ছিল ১০ লাখের কম, বর্তমানে তা ৬০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। জলবায়ু পরিবর্তন, যুদ্ধ, দুর্বল সরকারব্যবস্থা এবং বিদেশি নিষেধাজ্ঞা একত্রে এই জলসঙ্কটের জন্য দায়ী।
সমস্যাটি আরও গভীর হয়েছে কারণ ধনী মানুষরা গভীর বোরওয়েল খুঁড়ে পানি তুলতে পারলেও দরিদ্র মানুষজন রাত-বিরাতে খালি পাত্র হাতে পানির খোঁজে ছুটছে। শিশুরাও এর ব্যতিক্রম নয়।
প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, কাবুলে কার্যরত ৫০০-র বেশি মিনারেল ও সফট ড্রিংকস কোম্পানি দৈনিক লাখ লাখ লিটার ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করছে। এর মধ্যে শুধু Alokozay কোম্পানিই বছরে ১ বিলিয়ন লিটার পানি তুলছে।
কাবুলে ৪০০ হেক্টরেরও বেশি সবজি উৎপাদনের গ্রীনহাউস আছে, যা প্রতি বছর ৪ বিলিয়ন লিটার পানি ব্যবহার করে।
গবেষণায় জানা গেছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত আফগানিস্তানে স্বাভাবিকের চেয়ে মাত্র ৪৫–৬০% বৃষ্টিপাত হয়েছে। তুষারগলা জলই ছিল প্রধান উৎস, সেটিও কমে গেছে।
২০২১ সালে তালেবান সরকার পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর, জার্মান উন্নয়ন ব্যাংক KfW ও ইউরোপীয় দাতাদের অর্থায়নে পরিচালিত একটি প্রকল্প — যেটি লোগার জলাধার থেকে বছরে ৪৪ বিলিয়ন লিটার পানি সরবরাহ করতে পারত — সেটি বন্ধ হয়ে যায়।
ভারতের সহায়তায় কাবুল নদীতে নির্মাণাধীন "Shah-Toot" বাঁধ, যা শহরকে পানিসংকট থেকে মুক্ত করতে পারত, সেটির কাজও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাবুলে অবিলম্বে পানি অবকাঠামো উন্নয়ন ও কৃত্রিম ভূগর্ভস্থ জলরিচার্জ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। চেক ড্যাম, রেইনওয়াটার হার্ভেস্টিং ও আধুনিক পাইপলাইন স্থাপন ছাড়া বিকল্প নেই।
তবে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি, অর্থ ও সাহায্য পাচ্ছে না দেশটি। ফলে খাদ্য উৎপাদন কমে যাচ্ছে, বাড়ছে দারিদ্র্য ও অভিবাসন।
গবেষক নাজিবুল্লাহ সাদিদ বলেন, "কেউ বলতে পারবে না ঠিক কবে শেষ বোরওয়েলটি শুকাবে। কিন্তু আমরা জানি, শেষ এখন খুব কাছেই।"
মুমু ২