
ছবি: সংগৃহীত
ফুসফুস আমাদের দেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। প্রতিটি নিঃশ্বাসে আমরা শরীরের কোষে অক্সিজেন পৌঁছে দিই, যা মূলত ফুসফুসের মাধ্যমেই সম্ভব। কিন্তু দূষণ, ধূমপান, জীবাণু সংক্রমণ ও অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের কারণে বাংলাদেশে ফুসফুসজনিত রোগ দ্রুত বাড়ছে। অনেকে বুঝতেই পারেন না যে তাদের ফুসফুস ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে—যখন বোঝেন, তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, তিনটি নির্দিষ্ট লক্ষণ আছে যেগুলো দেখলে ফুসফুসের জটিলতা ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে কি না, তা বুঝতে হবে এবং দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
১. দীর্ঘমেয়াদি কাশি ও শ্বাসকষ্ট
প্রায় তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কাশি থাকলে এবং কাশির সঙ্গে বুকে ব্যথা বা শ্বাস নিতে কষ্ট হলে এটি হতে পারে ফুসফুসের বড় ধরনের সমস্যার পূর্বাভাস। বিশেষ করে যদি কাশির সঙ্গে কফে রক্ত আসে, তবে তা হতে পারে ফুসফুস ক্যান্সার, যক্ষ্মা কিংবা ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (COPD)-এর ইঙ্গিত।
২. হঠাৎ শ্বাস-প্রশ্বাসে ব্যাঘাত বা হাঁপানি বেড়ে যাওয়া
স্বাভাবিক কার্যকলাপে (যেমন সিঁড়ি বাওয়া, হাঁটাহাঁটি, হালকা কাজ) হঠাৎ শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দিলে তা ফুসফুসের কার্যক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার লক্ষণ হতে পারে। এটি সাধারণ হাঁপানি বা ব্রঙ্কাইটিস ছাড়াও ফুসফুসে পানি জমা, পালমোনারি ফাইব্রোসিস কিংবা হৃদযন্ত্রসংক্রান্ত রোগ থেকেও হতে পারে।
৩. নীলাভ ঠোঁট ও আঙুল (Cyanosis)
যখন শরীরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছায় না, তখন ঠোঁট, আঙুলের ডগা বা ত্বকের রঙ নীলচে হয়ে যেতে পারে। এ অবস্থাকে "সায়ানোসিস" বলা হয় এবং এটি জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা বোঝায়। ফুসফুস যদি সঠিকভাবে অক্সিজেন রক্তে সরবরাহ করতে না পারে, তবে তা মস্তিষ্ক ও হৃদপিণ্ডেও প্রভাব ফেলতে পারে।
অতিরিক্ত সতর্কতা যেসব ক্ষেত্রে প্রয়োজন:
বুকে ধমধম শব্দ বা “হুইজিং”
ঘন ঘন শ্বাসের গতি বেড়ে যাওয়া
রাতে ঘুমানোর সময় শ্বাস আটকে আসা
অস্বাভাবিক ক্লান্তি ও মাথা ঝিমঝিম করা
ফুসফুস ভালো রাখতে যা করবেন:
ধূমপান সম্পূর্ণরূপে পরিহার করুন
দূষিত এলাকায় মাস্ক ব্যবহার করুন
ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস পরীক্ষা করান
হাঁপানি বা ব্রঙ্কাইটিস থাকলে নিয়মিত ইনহেলার ব্যবহার করুন
ঘর ও কর্মস্থলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন
ফুসফুস নীরব ঘাতক রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তাই শরীরের সংকেতগুলো উপেক্ষা না করে সতর্ক হোন। এই তিনটি প্রধান লক্ষণ—দীর্ঘমেয়াদি কাশি, শ্বাসকষ্ট, ও নীলাভ ঠোঁট—আপনার ফুসফুসের ভয়াবহ সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে। সময়মতো চিকিৎসা ও সচেতনতা পারে প্রাণ বাঁচাতে।
ফারুক