
অধ্যাপক ড. সায়েমা হক বিদিশা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) হিসেবে কর্মরত রয়েছেন অধ্যাপক ড. সায়েমা হক বিদিশা। ড. বিদিশা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে যুক্তরাজ্যের বাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি করেছেন। এছাড়া কমনওয়েলথ স্কলারশিপ স্কিমের অধীনে ইউনিভার্সিটি অব নটিংহ্যাম থেকে শ্রম অর্থনীতিতে করেছেন
পিএইচডি। সম্প্রতি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দৈনিক জনকণ্ঠের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি।
পূর্ব বাংলার শিক্ষা-দীক্ষা এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কতখানি সফল বলে মনে করেন।
ড. সায়েমা হক বিদিশা: শুরুর দিকে এই অঞ্চলে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না। পরে বেশ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে এবং সাম্প্রতিক সময়ে আরও অনেক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমানে এসব বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের শিক্ষা বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও প্রচুর জ্ঞানী-গুণী ও দক্ষতাসম্পন্ন মানুষ বেরিয়ে এসেছেন।
যারা আজ দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, জ্ঞান-বিজ্ঞান প্রসারের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিয়োজিত; তাদের অনেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেছেন। দেশের তৃণমূল পর্যায়ে যে মেধাবী শিক্ষার্থীরা রয়েছেন, তাদের শিক্ষিত করাÑ সর্বোপরি শিক্ষার আলো ছড়ানোর ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। এটি বৈষম্যহীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
এখানে শিক্ষার চেয়ে রাজনীতি বেশি চর্চা হয়। এটা কেন?
ড. সায়েমা হক বিদিশা: দেশের জ্ঞানী-গুণী, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের একটি বড় অংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় ঐতিহাসিকভাবেই সচেতন নাগরিক তৈরিতে ভূমিকা রাখে, ফলে এখানকার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সকলেই নাগরিক অধিকার নিয়ে সচেতন থাকেন। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কোনো বাধা আসলে তারা প্রতিবাদ করে। এই প্রক্রিয়া আমরা অতীতেও দেখেছি, এখনো দেখছি। আমি বলব, এটা আমাদের একটি গর্বের বিষয়। একটি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে শিক্ষা ও গবেষণার পাশাপাশি যে কোনো গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তারা নেতৃত্ব দিয়ে চলেছে। সেখানে রাজনীতি বা গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের মানসিকতা থাকাটা স্বাভাবিক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং নিয়ে সবসময় কথা ওঠে। এ সমস্যার কেন সমাধান হচ্ছে না? কেন ভালো করতে পারছে না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়?
ড. সায়েমা হক বিদিশা: একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং বিভিন্ন ইন্ডিকেটরের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয় যেমন : গবেষণা, পড়াশোনা ইত্যাদি। কিন্তু এর বাইরেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি বৈষম্যহীন শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য কাজ করে যাচ্ছে, যেটা র্যাংকিংয়ে প্রতিফলিত হয় না। সমাজের যে মানুষটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার আর্থিক সামর্থ্য রাখে না, তার আর্থিক প্রতিকূলতা কাটিয়ে ওঠার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সহায়তা করা হয়। মেধার ভিত্তিতে একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের ভর্তি করা হয়।
এছাড়াও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যে ভূমিকা রাখে, সেটাও র্যাংকিং ইন্ডিকেটরের মধ্যে পড়ে না। এই দুটি ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গর্ব করতে পারে।
গবেষণা করতে হলে আর্থিকভাবে একটি ভালো ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ বলা হয়। কিন্তু আপনি যদি অক্সফোর্ডের বাজেটের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট তুলনা করেন, তাহলে একটি বড় পার্থক্য দেখতে পাবেন। আর্থিক দিক থেকে এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ, যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং ও সামগ্রিক শিক্ষাক্ষেত্রে প্রভাব ফেলছে।