ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৬ জুলাই ২০২৫, ২১ আষাঢ় ১৪৩২

সিয়ার্স টাওয়ারের গর্বিত নির্মাতা, অথচ মাদারীপুরে নেই কোনো স্মৃতি!

সুবল বিশ্বাস, মাদারীপুর

প্রকাশিত: ২১:০১, ৫ জুলাই ২০২৫

সিয়ার্স টাওয়ারের গর্বিত নির্মাতা, অথচ মাদারীপুরে নেই কোনো স্মৃতি!

ছবি: জনকণ্ঠ

বিশ্বখ্যাত স্থপতি ড. এফ. আর. খান ছিলেন স্থাপত্যশিল্পের পথিকৃৎ। ক্ষণজন্মা এই মনীষীর জন্ম মাদারীপুরে। সারা পৃথিবীর মানুষ যাকে চেনে, তাঁকে নিয়ে গর্ব করে। অথচ, মাদারীপুরবাসীর অনেকেই তাঁকে চেনে না। বর্তমান প্রজন্ম তো তাঁর নামই শোনেনি। কেউ কেউ বইপত্রে তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবনী পড়ে থাকতে পারে, তবে গভীরে গিয়ে মূল্যায়ন করেছেন এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা খুবই কম।

তবুও মাদারীপুরবাসী এমন এক মহান ব্যক্তির জন্য গর্বিত। মহান সৃষ্টিকর্তা যুগে যুগে এমন কিছু মানুষ সৃষ্টি করেন, যাঁদের সৃষ্টিশীলতা শুধু তাঁকেই নয়, গোটা জাতিকে গর্বিত করে এবং উপকৃত করে মানবজাতিকে। ড. ফজলুর রহমান খান, যিনি ড. এফ. আর. খান নামে বিশ্বজুড়ে পরিচিত, ছিলেন তেমনই একজন প্রতিভাবান স্থপতি। বিশেষ করে আমেরিকা ও সৌদি আরবে তিনি অশেষ শ্রদ্ধার পাত্র।

তিনি ১৯২৯ সালের ৩ এপ্রিল মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার ভাণ্ডারীকান্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা ছিলেন বিখ্যাত সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ খান বাহাদুর আব্দুর রহমান খান, এবং মাতা খাদিজা খাতুন, পাবনার দুলাইয়ের জমিদার পরিবারের কন্যা।

জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম মুনসীর তথ্য অনুযায়ী, ছোটবেলা থেকেই ড. খান ছিলেন মেধাবী। ১৯৫০ সালে আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৯৫৩ সালে ইলিনয় ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে এমএস এবং ১৯৫৫ সালে তাত্ত্বিক ও ফলিত মেকানিক্সে এমএস ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭৩ সালে নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।

সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হয়েও তিনি বিশ্বব্যাপী একজন স্থপতি হিসেবে পরিচিত। তিনি ছিলেন শিকাগোর ১১০ তলা বিশিষ্ট সিয়ার্স টাওয়ারের স্থপতি, যেটি টিউব সিস্টেমে নির্মিত হয়েছিল। এছাড়া ১১৫০ ফুট উচ্চতা সম্পন্ন জন হ্যানকক সেন্টার, সৌদির জেদ্দা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, এসব তাঁর স্থাপত্য মেধার নিদর্শন।

তিনি বিশ্বাস করতেন, ঢাকার ৭০ লক্ষাধিক মানুষের জন্য একটি ভবনে আবাসনসহ সব নাগরিক সুবিধা দেওয়া সম্ভব। জীবিত থাকলে হয়তো তা বাস্তবায়ন হতো।

ড. খান ছিলেন শিকাগোর ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের প্রধান। ৬০টির অধিক গবেষণা প্রবন্ধের লেখক এবং একাধিকবার “ম্যান অব দ্য ইয়ার” সম্মাননায় ভূষিত। ১৯৭৩ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল একাডেমি অব ইঞ্জিনিয়ারিং-এর সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯৫৯ সালে তিনি অস্ট্রিয়ান লিজেলকে বিয়ে করেন এবং তাঁদের একমাত্র কন্যা ইয়াসমিন। ১৯৮২ সালের ৩ মার্চ জেদ্দায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৫৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।

তাঁর মৃত্যুর পরে শিকাগো শহর তাঁর স্মরণে একটি সড়কের নামকরণ করে "ফজলুর আর. খান ওয়ে"। অথচ দুঃখজনকভাবে, জন্মস্থান মাদারীপুরে তাঁর কোনো স্মৃতিচিহ্ন নেই। কেউ তাঁর নামে ভবন বা স্থাপনার নামকরণ করেনি, যা একটি জাতির জন্য লজ্জাজনক ব্যর্থতা।

শহীদ

×