
টিকটকে ৪ লক্ষাধিক অনুসারী বিশিষ্ট আয়ুর্বেদিক থেরাপিস্ট এবং মেকআপ আর্টিস্ট কীর্তি তেওয়ানি বলছেন, “বোটক্সের দরকার নেই, একেবারেই নেই!” — এমন সাহসী বক্তব্য দিয়ে তিনি নিজের মুখে ঘষছেন একটি পাকা কলার খোসা। তার দাবি, এতে থাকা লুটেইন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বককে উজ্জ্বল, হাইড্রেট ও কোমল করে।
ভিডিওটি এখন পর্যন্ত ২২ লাখের বেশি বার দেখা হয়েছে এবং পছন্দ করেছেন ৬১ হাজারেরও বেশি মানুষ। কীর্তি জানান, নিজের ছেলেমেয়ের খাওয়া কলার খোসা তিনি নিয়মিত মুখে ব্যবহার করে দেখেছেন এবং এক মাসের মধ্যেই মুখের ‘স্মাইল লাইন’ তুলনামূলকভাবে ফোলাভরা ও মসৃণ হয়েছে।
‘ন্যাচারস বোটক্স’ ট্রেন্ড: রান্নাঘরের উপকরণেই ত্বকের যত্ন!
এ শুধু কীর্তির অভিজ্ঞতা নয়। ইউগার্ট, ফ্ল্যাক্সসিড (তিসির বীজ), এমনকি গরুর চর্বিও এখন ব্যবহার হচ্ছে DIY স্কিন কেয়ারে — খাওয়ার জন্য নয়, সরাসরি মুখে লাগানোর জন্য। এই প্রবণতাকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় বলা হচ্ছে #NaturesBotox।
টিকটকের তথ্যানুসারে, ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই হ্যাশট্যাগে ৫,০০০-এর বেশি ভিডিও শেয়ার হয়েছে, যার বেশিরভাগই সাম্প্রতিক মাসগুলোতে। রান্নাঘরের চাল পর্যন্ত এখন রূপচর্চার উপকরণে পরিণত হয়েছে।
স্কিন কেয়ারে কেন ফিরছে ঘরোয়া উপকরণ?
গ্লোবাল রিসার্চ সংস্থা Mintel বলছে, মানুষ এখন ডিআইওয়াই (DIY) বিউটি ট্রিটমেন্টে আগ্রহী কারণ:
-
খরচ কম: নামী ব্র্যান্ডের পণ্য সবার নাগালের মধ্যে নয়।
-
সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব: কমিউনিটি-চালিত আবিষ্কারে আছে মজা।
-
স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বোধ: অনেকে রাসায়নিকের চেয়ে ঘরোয়া উপাদানকে নিরাপদ মনে করেন।
ভারতীয় ঐতিহ্য থেকে অনুপ্রাণিত: তেওয়ানি ও মার্টিনেজের অভিজ্ঞতা
কীর্তি জানান, “আমার শৈশব থেকেই মুখে পেঁপে, শসা কিংবা দই ব্যবহার করাটা ছিল স্বাভাবিক। আমি ভয় পাই না এসব প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করতে।”
একই কথা বলছেন ড্যানিয়েলা মার্টিনেজ, একজন মার্কিন কন্টেন্ট ক্রিয়েটর। তিনি সপ্তাহে ১-২ বার ফ্ল্যাক্সসিড সেদ্ধ করে একটি মাস্ক তৈরি করেন, যা মুখে লাগিয়ে আধা ঘণ্টা রাখেন। ফলাফল? “অবিশ্বাস্য টাইটনিং ইফেক্ট। ত্বক মসৃণ ও উজ্জ্বল মনে হয়,” বলেন তিনি।
বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা: ‘বোটক্স’ নয়, বরং ঝুঁকি হতে পারে
তবে ত্বক বিশেষজ্ঞ ড. মুনিব শাহ বলেন, “বোটক্সের মতো ফল পেতে হলে সুনির্দিষ্ট রাসায়নিক লাগে, যেমন রেটিনল বা আর্জিরিলিন। কলার খোসা, গরুর চর্বি বা ফ্ল্যাক্সসিডের কার্যকারিতা এখনো প্রমাণিত নয়।”
দিজা আয়োডেলে, একজন ব্রিটিশ অ্যাস্থেটিশিয়ান, সতর্ক করেন: “লেবুর মতো ফলের অ্যাসিড সূর্যের সংস্পর্শে ত্বকে ফটোসেনসিটিভিটি বাড়াতে পারে — যা ভয়ানক ক্ষতি করতে পারে।”
গরুর চর্বি: কি কার্যকর না ক্ষতিকর?
গ্রেস মে, লস অ্যাঞ্জেলসের একজন কনটেন্ট ক্রিয়েটর, সম্প্রতি বিফ ট্যালো (গরুর চর্বি) ব্যবহার করেছিলেন, তবে ফলাফল সুখকর হয়নি। “আমার ত্বক আরো তৈলাক্ত হয়ে ওঠে এবং ব্রণ বেড়ে যায়,” বলেন তিনি। পরবর্তীতে তিনি তা পুরোপুরি বন্ধ করেন।
স্কিন কেয়ার ও গবেষণার বাস্তবতা
ড. শাহ বলেন, “গরুর চর্বির মতো উচ্চ ওলেইক অ্যাসিডযুক্ত তেল ত্বকে সহজেই জলীয় ভারসাম্য ভাঙতে পারে এবং ব্রণ তৈরি করতে পারে।”
সবার জন্য এক পদ্ধতি নয়
বিভিন্ন পদ্ধতি একেকজনের ত্বকে একেকরকম প্রতিক্রিয়া দিতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে কোনো ঘরোয়া পদ্ধতি ব্যবহারের আগে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
কলার খোসা বা তিসির বীজ হয়তো মজার এক্সপেরিমেন্ট, তবে প্রমাণিত কার্যকারিতা না থাকলে তা স্কিন কেয়ারে বোটক্সের বিকল্প নয়।
প্রাকৃতিক পদ্ধতি ভালো, কিন্তু ভাবনা-চিন্তা করে ত্বকের সঙ্গে মানানসই পন্থাই বেছে নেওয়া উচিত।
Jahan