ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৬ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২

সাগরে বৈরী আবহাওয়া

ইলিশের মৌসুমে লোকসানে কলাপাড়ার ট্রলার মালিকরা

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ০১:২৬, ৬ জুলাই ২০২৫

ইলিশের মৌসুমে লোকসানে কলাপাড়ার ট্রলার মালিকরা

বৈরি আবহাওয়ায় মিলছে না কাক্সিক্ষত ইলিশ। তারপরও সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি জেলেদের

গত শুক্রবার সাগর থেকে ফিরেছেন এফ বি মায়ের দোয়া ট্রলারের মালিক শামসু বেপারি। জেলেদের সঙ্গে নিজেও বোটে থাকেন। পশ্চিম সোনাতলা গ্রামের এই বাসিন্দা জানালেন, ২২ কেজি ইলিশ ও বিভিন্ন ধরনের কিছু সাদা মাছ পেয়েছেন। সব মিলে মাত্র ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন। আবারও সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। 
শামসু বেপারির ভাষ্য, ‘অবরোধের পরে পাঁচটা ট্রিপ দিছি। প্রত্যেক ট্রিপে ১৭-১৮ জন জাইল্যা লইয়া যাইতে অইছে। একেকবার কমপক্ষে পৌণে দুই লাখ টাকার বাজার লাগে। এখন পর্যন্ত প্রায় আট লাখ টাকা দেনা অইছি।’
আবার জাল সেলাই করে সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন শামসু বেপারি। ট্রলারের মাঝি ইউনুস জানান, একেকবারে খালি তেল লাগে ১২-১৩শ’ লিটার। কিনার থেকে ৭০-৯০ মাইল গভীর সাগরে যেতে প্রায় ১৪ ঘণ্টা বোট চালাইতে হয়। সাগরে জাল ফেলে টেকা যায় না। উত্তাল ঢেউয়ের কারণে আবার কিনারে ফেরত আসতে হয়। 
তার ভাষায়, ‘সাগর আচুক্কা (হঠাৎ)  আবহাওয়া খারাপ অইয়া যায়। পরিস্থিতি খুব খারাপ। আছি মহা দুশ্চিন্তার মধ্যে। তার পরও সাগরে নামার জন্য জাল, ট্রলার, লোক রেডি করছি।’ এভাবে লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে মাছের আশায় ফের সাগর যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ট্রলার মালিক ও জেলেরা।
দক্ষিণের সাগরপারের জনপদ পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় দ্বিতীয় বৃহত্তম এই জেলে পেশায় যেন ভয়াবহ সংকটকাল চলছে। ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছের বৃহৎ মোকাম মহিপুর ও আলীপুর সংলগ্ন খাপড়াভাঙ্গা নদীর তীরে শত শত ট্রলার আবারও সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। জেলেদের ব্যস্ততার শেষ নেই। কেউ ছেঁড়া জাল সেলাই শেষে ট্রলারে তুলছেন। কেউ বরফ কিংবা জ্বালানি সংগ্রহে ব্যস্ত রয়েছেন। হাজারো জেলের ব্যস্ততা থাকলেও চোখে মুখে হতাশা বিরাজ করছে। নেই স্বস্তির ছাপ, সবাই ধার দেনায় জর্জরিত হয়ে আছেন। 
মহিপুর মৎস্য আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি রাজু আহমেদ রাজা জানান, এবারের দুরবস্থার শেষ নাই। কেউ লাভে নাই। তিনি জানান, দুর্যোগের মধ্যেও জীবন ঝুঁকি নিয়ে সাগরে গিয়ে বাঁশখালীর এফ বি সনিয়া আক্তার নামের একটা বোট প্রায় ২০ মণ বড় সাইজের ইলিশ নিয়ে ঘাটে ফিরেছে। দামও খুব বেশি থাকায় ২০ লাখ টাকায় বিক্রি করছেন বলে কালু মাঝি জানান।

এভাবে জীবন ঝুঁকি নিয়ে আরও একটা বোট মাত্র ১৮ মণ ইলিশ ১৮ লাখ টাকায় বিক্রি করছেন। শুক্রবার এরা কিনারে এসেছেন। রাজু আহমেদ জানালেন,  জেলেদের সেলুনে সেভ করার টাকা পর্যন্ত বাকি রাখতে হচ্ছে।  তবে তার ভাষ্য, ‘ওয়েদার ভালো থাকলে মাছ পাওয়া যাবে। সাগর ঠিক অইলে মাছের দেখা মেলতে পারে। আল্লাহ ভরসা। ’
তবে অধিকাংশ জেলে ট্রলার ও আড়ত মালিকরা জানান, মৌসুম শুরুর ২৪ দিনে তারা কয়েকশ’ কোটি টাকার লোকসানে পড়েছেন।  এ পেশায় তারা ভয়াবহ সংকট দেখতে পাচ্ছেন। আর তা হচ্ছে প্রাকৃতিক দূর্যোগ। প্রকৃতি যেন অনেক বেশি  বৈরী আচরণ করছে । তার পরও মনে আশা নিয়ে সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন জেলেরা।

প্যানেল হু

×