ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৬ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২

৫ দশকের অবহেলা

এলাকাবাসীর অর্থায়নে রাস্তা মেরামত

সংবাদদাতা, নাগেশ্বরী, কুড়িগ্রাম

প্রকাশিত: ০১:১৮, ৬ জুলাই ২০২৫

এলাকাবাসীর অর্থায়নে রাস্তা মেরামত

কালীগঞ্জে এলাকাবাসীর অর্থায়নে রাস্তা মেরামত

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার কালীগঞ্জ ও নুনখাওয়া ইউনিয়নের মাঝামাঝি প্রায় এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে একটি কাঁচা রাস্তা, যেটি স্থানীয়ভাবে ‘শাহেবগঞ্জ ও চরকাঠগিরী সংযোগ সড়ক’ নামে পরিচিত। স্বাধীনতার পর ৫৪ বছর পেরিয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত এই রাস্তাটি কোনো সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় আসে নি। দুই ইউনিয়নের সীমান্তে হওয়ায় দায়িত্ব নেওয়ার ক্ষেত্রে দ্বিধাবোধ এবং অবহেলার কারণে বছরের পর বছর ধরে হাজারও মানুষকে পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি।
প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে শত শত শিক্ষার্থী, রোগী, শ্রমজীবী ও বৃদ্ধ মানুষ যাতায়াত করেন। বর্ষার সময় কাদা এতটাই জমে যায় যে হাঁটাচলা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। রাস্তাটি পঁচিশ থেকে ত্রিশ সেন্টিমিটার গভীর কাদা ও জলমগ্ন থাকায় হেঁটে চলাটা জীবন বিপন্নকর। অথচ এই রাস্তাটির পাশেই অবস্থিত একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মাদ্রাসা ও একটি কমিউনিটি ক্লিনিক, যেখানে প্রতিদিন প্রায় ৮০০ শিক্ষার্থী এবং শতাধিক মানুষ যাতায়াত করেন। দীর্ঘদিনের এই দুরবস্থা আর সহ্য করতে না পেরে এবার এলাকাবাসী স্ব-অর্থে উদ্যোগ নিয়ে রাস্তা মেরামত করেছে।
শাহেবগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা ও নুনখাওয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক খাইরুজ্জামান (৬৫) বলেন, জন্ম থেকে দেখছি এই রাস্তায় কখনও সরকারি টাকা বরাদ্দ হয়নি। সব সময় জনগণই জোটবদ্ধ হয়ে সংস্কার করে এসেছে।
অন্য একজন স্থানীয় বাসিন্দা ও অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্র হুমায়ুন কবীর বলেন, প্রাথমিক থেকে অনার্স পর্যন্ত পড়াশোনা করছি, ততদিনে এই রাস্তায় কোনো চেয়ারম্যান বা মেম্বারকে সংস্কার করতে দেখিনি। যা কিছু হয়েছে, তা প্রয়োজনবোধে আমরা এলাকার মানুষের অর্থায়নে করেছি।
মোটরসাইকেল চালক রবিউল ইসলাম জানান, এই রাস্তায় বাইক চালানো মানে প্রতিদিন দুর্ঘটনার ঝুঁকি নেওয়া। যাত্রীদের জন্যও এটি খুব কষ্টকর। স্থানীয় মাওলানা মকবুল হোসেন বলেন, আমাদের শিশু ও বৃদ্ধরা রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে পড়ে যায়। তাই প্রতিবারের মতো নিজেদের উদ্যোগে মাটি ও কিছু খোয়া ফেলে রাস্তাকে সমান করে দিয়েছি, যেন অন্তত স্কুল-কলেজে যাওয়া যায়।
বিশেষভাবে লক্ষণীয়, রাস্তার পশ্চিম পাশে পাকা এবং পূর্ব পাশে সিসি ঢালাই করা হলেও মাঝের প্রায় এক কিলোমিটার কাঁচা ও কর্দমাক্ত রয়েছে। যেন উন্নয়নের মাঝে এক ‘অনুন্নয়নের ফাঁক’ থেকে গেছে। দুই ইউনিয়নের সীমান্ত হওয়ায় কেউ দায়িত্ব নিতে আগ্রহী নয়। কালীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য (মুকুল চন্দ্র বাবু) বলেন, আমি দুবার মেম্বার হয়েছি, কিন্তু চেয়ারম্যান কখনোই এই রাস্তায় বরাদ্দ দেন নি।

নুনখাওয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য (আবুল কাশেমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। কালীগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান (রিয়াজুল ইসলাম প্রধান) বলেন, শাহেবগঞ্জের ২ কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরণের জন্য আমরা এলজিইডি অফিসে বরাদ্দ চেয়েছিলাম, তবে তারা মাত্র এক কিলোমিটার কাজ করেছে। আমি আর কী করতে পারি।
অন্য দিকে, নুনখাওয়া ইউপি চেয়ারম্যান (আমিনুল ইসলাম) জানান, রাস্তাটি দুই ইউনিয়নের মধ্যে হওয়ায় সমস্যা হয়েছে। তবে আরডিআরএস কর্তৃপক্ষ আগামী অর্থবছরে হিরিং রাস্তা করার জন্য বরাদ্দ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।
নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সিব্বির আহমেদ বলেন, রাস্তাটির বিষয়ে এখন জানলাম। জনপ্রতিনিধি বা এলাকাবাসী যোগাযোগ করলে এবং বরাদ্দ পাওয়া গেলে আগামী অর্থবছরের শুরুতেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

×