ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৬ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২

ফটিকছড়িতে চালকের লাশ ঝুলছিল ফ্যানের সঙ্গে, খুন না আত্মহত্যা?

ওবাইদুল আকবর রুবেল, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম 

প্রকাশিত: ২১:১৪, ৫ জুলাই ২০২৫

ফটিকছড়িতে চালকের লাশ ঝুলছিল ফ্যানের সঙ্গে, খুন না আত্মহত্যা?

ছবি: জনকণ্ঠ

চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে নিজ বসতঘর থেকে মো. জাহাঙ্গীর আলম (৫৫) নামে এক ব্যক্তির রহস্যজনকভাবে লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তবে নিহতের স্বজনদের পরস্পর দোষারোপে মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) কাজী মো. তারেক আজিজ এবং ফটিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর আহমদ।

শনিবার (৫ জুলাই) সকালে উপজেলার নাজিরহাট পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ছালে আহমেদ ড্রাইভারের বাড়ি থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। নিহত ব্যক্তি ওই এলাকার মৃত কবির আহমদের পুত্র। পেশায় তিনি চালক হলেও দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সকালে জাহাঙ্গীর আলমের মা লায়লা বেগম ছেলেকে নাশতা দিতে গিয়ে দেখেন তার ঘরের দরজা-জানালা খোলা এবং সন্তান বসা অবস্থায় ফ্যানের সাথে ঝুলছে। তখন মায়ের চিৎকারে পরিবারের অন্যরা এসে ঝুলন্ত অবস্থায় তাকে নামিয়ে পুলিশে খবর দেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।

জানা যায়, নিহত জাহাঙ্গীর আলম দুটি বিয়ে করেছিলেন। প্রথম স্ত্রীর বসতঘর থেকে দ্বিতীয় স্ত্রীর বসতঘরের দূরত্ব প্রায় এক কিলোমিটার। দুই স্ত্রীর একাধিক সন্তান রয়েছে। সম্প্রতি তাদের সন্তানদের বিয়ে ও ঘর নির্মাণকে কেন্দ্র করে পারিবারিক কলহে জড়ায় তারা। সেই কলহ একপর্যায়ে মারামারিতে রূপ নেয়। এরপর তিনি ভাড়া বাসা ছেড়ে পৈতৃক বসতভিটায় চলে আসেন। সেখানে তার রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় এলাকাবাসী ও স্বজনদের মধ্যে চরম হতাশা ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

নিহতের প্রথম স্ত্রীর দ্বিতীয় সন্তান মো. শাহাদাত ইসলাম বলেন, ‘বাবার মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। সন্দেহ হচ্ছে, বাবাকে কেউ মেরে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিয়েছে। চাচারা এর সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন। কারণ, দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলছিল। আমরা সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক বিচার চাই।’

তবে ভিন্ন কথা বলেছেন নিহতের ছোট ভাই মো. আলমগীর আলম। তিনি দাবি করেন, ‘তার নিজের সন্তানেরা তাকে মেরে ফাঁসির সাথে ঝুলিয়ে দিয়ে আত্মহত্যা বলে প্রচার চালাচ্ছেন। আমি বাড়িতে থাকা সিসিটিভির ফুটেজ পুলিশকে দিয়েছি। পুলিশ তদন্ত করছে। আমি ভাই হত্যার বিচার চাই।’

লাশের সুরতহাল প্রস্তুতকারী ফটিকছড়ি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘ঝুলন্ত নয়, শোয়া অবস্থায় থাকা লাশটি উদ্ধার করেছি। শরীরে কোনো আঘাত, ফোলা বা জখমের চিহ্ন ছিল না। তবে পরিবারের লোকজন একটি ঝুলন্ত অবস্থার ছবি সরবরাহ করেছেন।’

এ বিষয়ে ফটিকছড়ি থানার ওসি নূর আহমদ বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে এটি রহস্যজনক মৃত্যু বলে মনে হচ্ছে। পরিবারের লোকজন ও নিহতের ভাইয়েরা পরস্পরবিরোধী মৌখিক অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়েছি। আপাতত অপমৃত্যু মামলা করে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শহীদ

×