
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা সম্প্রতি তাঁর এক বক্তব্যে জুলাই শহীদ পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলতে গিয়ে বলেন, একটা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বাহিনী নিজের
সন্তানকে খুন করেছে এটা আসলে মেনে নেয়া কষ্টকর। সন্তানের যেকোনো মৃত্যুই কষ্টকর কিন্তু এইভাবে সন্তান হারাবেন সেটাতো কেউ চিন্তা করেননি। যেইজন্য আপনাদের এই ট্রামাটার দায় রাষ্ট্রেরই নিতে হবে।
জুলাই আন্দোলনে নিহতদের পরিবারকে সম্বোধন করে ডা. তাসনিম বলেন, “একটা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বাহিনী নিজের সন্তানকে খুন করেছে, এটা আসলে মেনে নেওয়া কষ্টকর। সন্তানের যেকোনো মৃত্যুই কষ্টকর, কিন্তু এইভাবে সন্তান হারাবেন সেটা তো কেউ চিন্তা করেননি। যেইজন্য আপনাদের এই ট্রামাটা আমাদের রাষ্ট্রেরই দায় নিতে হবে।”
তিনি বলেন, “আপনারা যে ট্রামার মধ্য দিয়ে গেছেন, সেটা আসলে ভোলার মতো না। অনেকেই হয়তো ভাবছেন, কেন সেদিন ছেলেটাকে যেতে দিলাম? কেন ওইদিন বাধা দিই নাই? কেন ওকে রেখে দিই নাই কাছে? অনেকের মধ্যেই অপরাধবোধ কাজ করছে। আবার কারো কারো মানসিক অবস্থা এতটাই ভেঙে পড়েছে যে দৈনন্দিন কাজগুলো আর করতে ইচ্ছা করে না, যেগুলো আগে ভালো লাগতো সেগুলো করতে পারছেন না। সন্তানের কথা মনে পড়ছে, ভাইয়ের কথা মনে পড়ছে। এই অবস্থার দায় রাষ্ট্রকে নিতে হবে।”
শহীদ পরিবারের পুনর্বাসনের বিষয়েও গুরুত্ব দেন ডা. তাসনিম। তিনি বলেন, “যারা আহত আছেন, তাদের চিকিৎসার দায়ভার রাষ্ট্রের। যারা শহীদ হয়েছেন, সেই পরিবারের পুনর্বাসন রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আমরা বারবার সরকারের সাথে কথা বলছি যাতে আপনাদের নিরাপত্তা, পুনর্বাসনের দায় রাষ্ট্র ভালোভাবে পূরণ করে। যদিও আমরা জানি, অনেক ক্ষেত্রেই সেটি ব্যর্থ হচ্ছে, দেরি হচ্ছে।”
তিনি চিকিৎসা সেবায় অনিয়মের কথাও তুলে ধরেন। বলেন, “শহীদ পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে গেলে বলা হচ্ছে ফার্স্ট প্রায়রিটি দেবে। কিন্তু বাস্তবে আপনি যখন হাসপাতালে যান, কাকে বলবেন, কোথায় বলবেন সেই নির্দেশনাটা নাই।”
মানসিক বিপর্যয় মোকাবিলায় রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন তিনি। “আপনাদের মানসিক অবস্থার বিপর্যয় অনেকের ক্ষেত্রেই হয়েছে। সেই ক্ষেত্রেও আমার মনে হয় রাষ্ট্রীয়ভাবেই একটা উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। কারণ ট্রামাটা যতদিন যাবে, তত স্পষ্ট হয়ে উঠবে। অনেকের ক্ষেত্রে এটা প্রকট আকার ধারণ করতে পারে। সেজন্য রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার মাধ্যমেই এর সমাধান হওয়া উচিত।”
শহীদ পরিবারদের পাশে থাকার অঙ্গীকার করে ডা. তাসনিম বলেন, “আপনাদের যেকোনো সমস্যায় আমাদের সাকিব ভাই আছেন, আরও অনেকে আছেন। আমরা পাশে থাকব এটা এনসিপি বা কোনো রাজনৈতিক দলের দৃষ্টিকোণ থেকে না। দেশের প্রতি আপনারা যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, সেই দায় থেকেই আমরা আপনাদের পাশে থাকতে চাই। আমাদের সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে, কিন্তু আমাদের একটি ডেডিকেটেড টিম আছে, যারা আপনাদের খেয়াল রাখবে। আপনারা যোগাযোগ করবেন লোকাল প্রতিনিধিদের সাথে। আমরা সর্বোচ্চটা দিয়ে পাশে থাকার চেষ্টা করব।”
ভবিষ্যতের বাংলাদেশ যেন আর কখনো এই রকম সহিংসতার শিকার না হয়, সেই প্রত্যাশা জানিয়ে ডা. তাসনিম বলেন, “আপনাদের প্রিয়জন যে স্বপ্ন নিয়ে দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হবে। আমরা চাই না, সেই পুরনো বাংলাদেশে ফিরে যেতে যেখানে ১৬-১৭ বছরের কিশোর-কিশোরীদের শুধু ন্যায়ের কথা বলার জন্য, অন্যায়ের প্রতিবাদ করার জন্য আঘাত করা হয়, ক্ষতি করা হয়, কারো চোখ কেড়ে নেওয়া হয়, কারো হাত কেটে নেওয়া হয়, কারো জীবনটাই কেড়ে নেওয়া হয়। এমন বাংলাদেশ আমরা আর চাই না।”
আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর সংস্কারের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, “সেইজন্য আইনে, আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোতে যেসব পরিবর্তন দরকার, সেগুলোর কথাই আমরা বলছি। আমরা এমন একটা দেশ চাই, যেখানে রাষ্ট্র মানুষের জন্য কাজ করে। আপনারা যে অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে গেছেন, সেটা যেন আর কারো সাথেই না ঘটে এই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি।”
ডা. তাসনিম বলেন, “আমরা আপনাদের সাথে থাকব, এবং চাই আপনারাও আমাদের সাথে থাকেন, যাতে এই কঠিন কাজগুলো আমরা একসাথে করতে পারি। আমাদের জন্য শুভকামনা রাখবেন।”
আফরোজা