ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৬ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২

বিএনপির সমর্থন শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জন

আল জুবায়ের

প্রকাশিত: ২৩:৩৮, ৫ জুলাই ২০২৫

বিএনপির সমর্থন শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জন

৬ জুলাই, ২০২৪ ছিল কোটা সংস্কার আন্দোলনের ৬ষ্ঠ দিন

৬ জুলাই, ২০২৪ ছিল কোটা সংস্কার আন্দোলনের ৬ষ্ঠ দিন। এদিকে কোটা পুনর্বহালের দাবিতে উত্তাল দেশ। দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি-বেসরকারি কলেজসহ সর্বস্তরের ছাত্রজনতা নেমে এসেছিল রাজপথে। সবার দাবি, কোটা বাতিল না করে ঘরে ফিরবেন না। কোটা বাতিলের দাবিতে এদিন দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে  বিক্ষোভ মিছিল করেন ছাত্রজনতা। এর আগে শুক্রবার (৫ জুলাই) কয়েকটি স্থানে সড়ক অবরোধ ও মানববন্ধন এবং অনলাইনে কোটাবিরোধী প্রচার চালান শিক্ষার্থীরা।

অনলাইন কর্মসূচি চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭টি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করলে এ খবর দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়লে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ও ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করা শুরু করে। এ নিয়ে দুদফায় সারাদেশে সড়ক-মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন আন্দোলনকারীরা। 
এদিকে ছাত্রলীগের তোপের মুখে পড়তে হয় আন্দোলনকারীদের। ঢাবি, জাবি, জবি, রাবি, চবি, ইবি, ঢাকা কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। সব বাধা উপেক্ষা করে ফের রাজপথে নেমে আসে শিক্ষার্থীরা। যখন কোটা নিয়ে সরব ছাত্রজনতা ঠিক তখন তৎকালীন সরকারের হয়ে আওয়ামী লীগের ৎসাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য ছাত্রজনতাকে আরও উত্তেজিত করে তোলে।

কোটার বিষয়ে তিনি বলেছিলেন, আমরা কোটা মুক্ত রেখেছিলাম, এখন আদালত রায় দিয়েছে। সরকারের দোষ কী! সরকার তো এটা করেনি। সরকারের এখানে কি করার আছে। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে এমন বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিকেল ৩টায় ঢাবি এলাকায় বিক্ষোভ করেন কোটা আন্দোলনকারীরা। 
বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটের দিকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা শাহবাগ মোড়ে সড়ক অবরোধ করেছিলেন। তবে অবরোধ তুলে নেওয়ার আগে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি দেন সাবেক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও বর্তমান জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, কাল বেলা তিনটা থেকে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হলো। শুধু শাহবাগ মোড় নয়, শাহবাগ ও ঢাকা শহরের সায়েন্সল্যাব, চানখাঁরপুল, নীলক্ষেত, মতিঝিলসহ প্রতিটি পয়েন্টে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা নেমে এসে কর্মসূচি সফল করবেন।

ঢাকার বাইরের জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করবেন। এ সময় নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থী ও আদালতকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়ে সরকার দায়িত্বহীন আচরণ করছে। নির্বাহী বিভাগ তার দায় এড়াতে পারে না। ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, কোটা থাকবে না তাহলে কোটা কেন আবার ফিরে এলো? কেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রহসন করা হচ্ছে? দাবি আদায়ে প্রয়োজনে আমরা হরতালের মতো কর্মসূচি পালন করব এটা শুধু শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নয় শিক্ষক-অভিভাবকদেরও আন্দোলনে নেমে আসতে হবে।

‘শিক্ষকেরা ক্লাসে ফিরে গেলেও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্লাসে ফিরে যাব না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার দ্রুত খুলে দিতে হবে, নয়তো আমরা নিজ দায়িত্বে সেটি খুলে নিতে বাধ্য হব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে হলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বাধা দিচ্ছে ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশীরা। আমরা কিন্তু হলের তালা ভাঙতে জানি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এ ব্যাপারে তৎপর হওয়ার আহ্বান জানাই।’
এর আগে সেদিন বেলা সোয়া তিনটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের সামনে থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে মিছিল বের হয়। মিছিলটি ক্যাম্পাসের শ্যাডো ও মূল চত্বর প্রদক্ষিণ করে মাস্টারদা সূর্যসেন হল ও হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের সামনে দিয়ে স্মৃতি চিরন্তন চত্বর, টিএসসি ও বকশীবাজার হয়ে বুয়েট ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়ে পলাশী ও আজিমপুর এলাকা ঘুরে আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়ে শাহবাগ মোড়ে এসে থামে। মিছিলে ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজসহ আশপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এসে যোগ দেয়।
এদিন শুধু ঢাকাতেই নয় দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ শুরু করেন। ছাত্রদের কোটাবিরোধী  আন্দোলন মেনে নিতে আহ্বান জানান তৎকালীন আওয়ামী লীগের বিরোধী দল বিএনপি। বিএনপির পক্ষ থেকে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি কোনো শ্রেণিতেই কোটা পদ্ধতি মেধা বিকাশে সহায়ক হতে পারে না এবং মেধা ভিত্তিক বৈষম্যহীন জাতি ও সমাজ বিনির্মাণে মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

বর্তমান অবৈধ, অনির্বাচিত, কর্তৃত্ববাদী সরকার বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে অর্থাৎ আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে জনগণের ন্যায্য দাবিসমূহ দমিয়ে রাখার ঘৃণ্য পুরোনো কৌশলেই তারা ছাত্রসমাজের ন্যায্য আন্দোলনকে দমানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব ছাত্রদের আন্দোলনকে সমর্থন দিয়ে বলেন, আইন ও বিচার বিভাগের দোহাই দিয়ে ছাত্র সমাজের যৌক্তিক দাবিসমূহকে দমানোর সকল অপচেষ্টাই ব্যর্থ হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। ইতিহাসের শিক্ষা হচ্ছে জনগণের ন্যায়সংগত আন্দোলন কখনোই দমানো যায় না। আমরা আশাকরি সরকার সময় থাকতে ছাত্রসমাজের যৌক্তিক ও ন্যায্য দাবিসমূহ মেনে নেবে।
ছাত্রদের এই যৌক্তিক আন্দোলন ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়লে বেশ অস্বস্তিতে পড়ে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ। তখন আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরেও নানা আলোচনা-সমালোচনা হয়। সেই সময় তাদের কয়েকজন শীর্ষ পর্যায়ের নেতা জানিয়েছিলেন, ছাত্র-শিক্ষকদের আন্দোলন জ্বলে ওঠার রসদ জুগিয়েছে সরকার, এটিই দলের ভেতর অস্বস্তির কারণ। আওয়ামী লীগ সরকারের শীর্ষ কয়েকজন নেতার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল বলে মনে করেন দলীয় অনেক নেতাকর্মী।

তারা বলেন, ছাত্রদের আন্দোলন ছিল যৌক্তিক তবে দলীয়প্রধান ও তার আশপাশের মানুষজনের অগোছালো কিছু সিদ্ধান্ত ছাত্র ও শিক্ষকদের রাস্তায় নামার সুযোগ করে দিয়েছিল। সরকারি চাকরিতে নিয়োগে বয়সসীমা নিয়ে আন্দোলন চলে আসছিল। তারই মধ্যে আবার কোটা আন্দোলন ইস্যু তুলে দেওয়া হয়েছিল ছাত্রদের। পেনশন ও কোটা নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে না হলে ছোট ছোট পরিসরে আলোচনা করা ও জনমত সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া যেত।

প্যানেল হু

×