
আজ ১০ মহররম। পবিত্র আশুরা।
আজ ১০ মহররম। পবিত্র আশুরা। হিজরি সনের প্রথম মাস মহররমের ১০ তারিখ পবিত্র আশুরা হিসেবে পরিচিত। বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও শোকাবহ এক দিন এই ১০ মহররম। এদিন মহান আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা পাওয়ার আশায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা নফল রোজা, নামাজ, দান-খয়রাত ও জিকির-আসকারের মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করেন।
যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশে আজ রবিবার সারাদেশে ১৪৪৭ হিজরি সনের পবিত্র আশুরা উদ্যাপিত হবে।
পবিত্র আশুরা উপলক্ষে আজ রবিবার সরকারি ছুটি। আশুরা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বাণীতে বলেন, পবিত্র আশুরার শোকাবহ এই দিনে আমি সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসেন (রা.) এবং কারবালার প্রান্তরে মর্মান্তিকভাবে শাহাদাতবরণকারী সবার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করি।
তিনি বলেন, ইসলাম সত্য, ন্যায় এবং শান্তির ধর্ম। ইসলামের এই সুমহান আদর্শ সমুন্নত রাখতে গিয়ে হিজরি ৬১ সনের ১০ মহররম হজরত ইমাম হোসেন (রা.), তার পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠ সহচররা বিশ্বাসঘাতক ইয়াজিদের সৈন্যদের হাতে কারবালার প্রান্তরে শহীদ হন। অত্যাচারীর অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে ইসলামের বীর সৈনিকদের এই আত্মত্যাগ পৃথিবীর ইতিহাসে চিরভাস্বর হয়ে থাকবে। জুলুম ও অবিচারের বিপরীতে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় মানবজাতিকে শক্তি ও সাহস যোগাবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, কারবালার বিয়োগাত্মক ঘটনা ছাড়াও পবিত্র আশুরা ইসলামের ইতিহাসে অন্যতম ফজিলতপূর্ণ একটি দিন। সমগ্র পৃথিবী সৃষ্টিসহ নানা তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা এদিনে সংঘটিত হয়েছে। হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসুল (সা.) পবিত্র আশুরা উপলক্ষে দুটি রোজা রাখার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। আসুন এই মহিমান্বিত দিনটির তাৎপর্য ধারণ করে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভে সবাই বেশি বেশি নেক আমল করি। সমাজে সাম্য, ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি পবিত্র আশুরার এই দিনে আমি মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, সংহতি ও অব্যাহত অগ্রগতি কামনা করছি। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।
এ উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আজ দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে পবিত্র আশুরার গুরুত্ব ও তাৎপর্য শীর্ষক আলোচনা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মদিনাতুল উলুম মডেল ইনস্টিটিউট মহিলা কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মুফতি মাওলানা মো. মুজির উদ্দীন এবং সভাপতিত্ব করবেন দ্বীনি দাওয়াত ও সংস্কৃতি বিভাগের পরিচালক ড. মোহাম্মদ হারুনুর রশীদ।
আরবি ‘আশারা’ শব্দের অর্থ দশ। আর আশুরা মানে দশম। আর মহররম অর্থ সম্মানিত। হিজরি ৬১ সনের ১০ মহররম সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে যুদ্ধ করতে গিয়ে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসেন (রা.) এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা কারবালার প্রান্তরে ফোরাত নদীর তীরে নির্মমভাবে শহীদ হন।
শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম ইসলামের মহান আদর্শকে সমুন্নত রাখতে হজরত ইমাম হোসাইন (রা.)-এর আত্মত্যাগ মানবতার ইতিহাসে সমুজ্জ্বল হয়ে আছে। কারবালার এই শোকাবহ ঘটনা অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে অনুপ্রেরণা জোগায়। সত্য ও সুন্দরের পথে চলার প্রেরণা জোগায়। শিয়া সম্প্রদায় এদিন বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। এর মধ্যে তাজিয়া মিছিল উল্লেখযোগ্য।
শ্রেষ্ঠ নবী হজরত মুহম্মদ (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসেনের (রা.) মহিমান্বিত আত্মত্যাগ ও করুণতম হৃদয়বিদারী স্মৃতিজড়িত দিন ১০ মহররম। ফোরাত নদীর তীরে তাঁকে এবং তাঁর সঙ্গী-সাথীদের মর্মান্তিকভাবে জীবন দিতে হয় এদিন। ¯্রােতস্বিনী ফোরাত থেকে এক ফোঁটা পানিও পান করতে দেওয়া হয়নি তাঁদের। বিশ্বাসঘাতক, পাপিষ্ঠ ইয়াজিদের হাতে নির্মমভাবে শহীদ হন চতুর্থ খলিফা হজরত আলীর (রা.) পুত্র ইমাম হোসেন (রা.)। তাঁর মা ফাতিমা জোহরা (রা.) ছিলেন গুণবতী ও মহীয়সী নারী। দিনটি ইসলামের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ।
আসলে ইসলামের সর্বোত্তম মর্যাদাকে কলুষিত করতে চেয়েছিল একদল নরপশু। পারেনি তারা। কারণ ইসলাম শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে পূর্ণতা পেয়েছে হজরত মুহম্মদ (সা.)-এর মাধ্যমে। ইয়াজিদসহ নরপশুরা নিয়েছিল প্রতারণার আশ্রয়। অনৈতিকভাবে ক্ষমতা দখলের মোহ এবং বিত্তবাসনা মানুষকে করে তোলে পশুরও অধম। ইয়াজিদ এর ঘৃণ্য উদাহরণ।
উমাইয়া বংশের প্রতিষ্ঠাতা আমির মুয়াবিয়ার পুত্র ইসলামের ঘনিষ্ঠ ও আদর্শবান অনুসারীদের নিশ্চিহ্ন এবং পদানত করার জন্য নির্মম চক্রান্ত করেছিল। কিন্তু পবিত্র ইসলামের মর্যাদা ও রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশকে সমুন্নত রাখার জন্য হজরত ইমাম হোসেন (রা.) বীরত্ব ও শৌর্য নিয়ে ইয়াজিদের বিশাল সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করেন। এতে ইমাম হোসেনসহ ৭২ সঙ্গী-সাথী শাহাদাতবরণ করেন।
তাঁর এই আত্মত্যাগ শুধু মুসলিম জাহানের জন্য অনুকরণীয় নয়, শান্তিকামী পুরো বিশ্বের জন্যও। প্রতারক ও লোভীরা সংখ্যায় বেশি হলেও ইতিহাস থেকে মুছে যায় ওরা। প্রকৃত বীরের সম্মান পান ইমাম হোসেন ও তাঁর অনুসারীরা বিশ্ববাসীর কাছে চিরকাল।
তবে শুধু কারবালার ঘটনা নয়, ঐতিহাসিকভাবে নানা ঘটনার জন্য হিজরি বর্ষের প্রথম মাসের এই দিনটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। মহররমের এই দিনে হজরত আদম (আ.)-এর দেহে রুহ প্রদান, হজরত নূহ (আ.)-এর নৌকা তীরে ভেড়া, হজরত মুসা (আ.)-এর নীলনদ পাড়ি দেওয়াসহ অনেক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনার সূত্রপাত এই দিনে। কিন্তু সবচেয়ে করুণ ও বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটে কারবালা প্রান্তরে। হজরত ইমাম হোসেন (রা.)-এর শাহাদাতবরণ আমাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং ন্যায়ের পক্ষে লড়তে উদ্বুদ্ধ করে।