
ছবি: সংগৃহীত
ইন্টারনেটের গতি বাড়ানোর ক্ষেত্রে নতুন এক যুগে প্রবেশ করছে বিশ্ব। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা এমন একটি নতুন প্রজন্মের লেজার অ্যামপ্লিফায়ার তৈরি করেছেন, যার মাধ্যমে বর্তমান প্রযুক্তির তুলনায় দশ গুণ বেশি ডেটা পাঠানো সম্ভব হবে। এই অত্যাধুনিক আবিষ্কার ইন্টারনেট যোগাযোগের গতি ও ক্ষমতায় আনবে বিপ্লব।
এই লেজার অ্যামপ্লিফায়ার মূলত আলোক রশ্মির শক্তি বৃদ্ধি করে, যা বাড়িয়ে দেয় ব্যান্ডউইথ—অর্থাৎ তথ্য আদানপ্রদানের সর্বোচ্চ গতি। এর ব্যান্ডউইথ যত বেশি, একসঙ্গে তত বেশি তথ্য আদানপ্রদান করা সম্ভব।
নোকিয়া বেল ল্যাবসের এক রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে ডেটা ট্রাফিক হবে দ্বিগুণ, যার পেছনে কাজ করছে স্ট্রিমিং, স্মার্ট ডিভাইস এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যপক ব্যবহার। ফলে প্রয়োজন বাড়ছে উন্নত, গতিসম্পন্ন অপটিক্যাল নেটওয়ার্কের।
বর্তমান অপটিক্যাল কমিউনিকেশন সিস্টেম ফাইবার অপটিক কেব্লের মাধ্যমে লেজার আলো ব্যবহার করে ডেটা পাঠায়। কিন্তু এই প্রযুক্তির গতি নির্ভর করে অ্যামপ্লিফায়ারের ব্যান্ডউইথের উপর। আর এখানেই বড় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে নতুন আবিষ্কারটি।
সুইডেনের চালমার্স ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির অধ্যাপক পিটার আন্দ্রেকসন বলেন, ‘বর্তমানে ব্যবহৃত অ্যামপ্লিফায়ারের ব্যান্ডউইথ যেখানে ৩০ ন্যানোমিটার, সেখানে আমাদের নতুন প্রযুক্তির ব্যান্ডউইথ ৩০০ ন্যানোমিটার।’
তিনি জানান, এর ফলে প্রতি সেকেন্ডে ১০ গুণ বেশি ডেটা পাঠানো সম্ভব হবে।
এই নতুন অ্যামপ্লিফায়ার তৈরি হয়েছে সিলিকন নাইট্রাইড দিয়ে, যা একটি টেকসই ও উচ্চ তাপমাত্রা সহ্যক্ষম সিরামিক পদার্থ। এতে ব্যবহার করা হয়েছে সর্পিলাকার ওয়েভগাইড, যা অল্প জায়গায় লম্বা অপটিক্যাল পথ তৈরি করে এবং সিগন্যালের গুণমান বাড়ায়।
এই প্রযুক্তি ১৪০০ থেকে ১৭০০ ন্যানোমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোতে কাজ করে, যা অবলোহিত (infrared) আলোর সীমার মধ্যে পড়ে। গবেষকরা জানান, পরবর্তী ধাপে এই প্রযুক্তি দৃশ্যমান ও দীর্ঘতর অবলোহিত তরঙ্গদৈর্ঘ্যেও কাজ করতে পারে কিনা, তা পরীক্ষার পরিকল্পনা রয়েছে।
শুধু ইন্টারনেট নয়, মেডিক্যাল ইমেজিং, স্পেকট্রোস্কোপি, হলোগ্রাফি ও অণুবীক্ষণেও এই প্রযুক্তি বড় ভূমিকা রাখতে পারে। আকারে ছোট হওয়ায় চিপ আকারেই বহু অ্যামপ্লিফায়ার বসানো যাবে, ফলে লেজার ডিভাইসগুলো হবে আরও ছোট ও সাশ্রয়ী।
এই আবিষ্কার প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ‘নেচার’ জার্নালে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি শুধু দ্রুত ইন্টারনেট নয়, বরং ডিজিটাল ভবিষ্যতের জন্য এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।
সূত্র: লাইভ সায়েন্স।
রাকিব