
উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মের চূড়া যখন আমাদের সামনে, তখন আশ্চর্যের বিষয় হলো—এই সময়েই পৃথিবী সূর্য থেকে সবচেয়ে দূরে অবস্থান করছে।
গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৩:৫৫ মিনিটে (ET) পৃথিবী পৌঁছায় তার কক্ষপথের অ্যাফেলিয়ন পয়েন্টে—অর্থাৎ সূর্য থেকে সবচেয়ে দূরের বিন্দুতে। এই দূরত্ব সাধারণ সময়ের চেয়ে প্রায় ৩০ লাখ মাইল বেশি।
তাহলে গ্রীষ্মে এত গরম কেন?
অনেকে ভাবেন, সূর্যের কাছাকাছি মানেই গরম, আর দূরে মানেই ঠাণ্ডা। কিন্তু বাস্তবতা হলো, পৃথিবীর সূর্য থেকে দূরত্বের তারতম্য ঋতু পরিবর্তনের মূল কারণ নয়।
আসল কারণ হচ্ছে পৃথিবীর কক্ষচ্যুতি বা টিল্ট (23.5 ডিগ্রি কোণে হেলে থাকা অবস্থান)। এই হেলানো অবস্থানের কারণেই বছরের নির্দিষ্ট সময়গুলোতে পৃথিবীর ভিন্ন অংশে সূর্যের আলো বেশি বা কম পড়ে।
উদাহরণস্বরূপ, জুলাই মাসে উত্তর গোলার্ধ সূর্যের দিকে হেলে থাকে, ফলে সূর্যের আলো বেশি সরাসরি পড়ে, দিন হয় দীর্ঘ, আর সূর্যের কোণও বেশি হয়—এই সবকিছু মিলে সৃষ্টি করে প্রচণ্ড গরম।
পৃথিবীর কক্ষপথ ও দূরত্বের ভূমিকা
যদিও পৃথিবীর কক্ষপথ একেবারে বৃত্তাকার নয়—বরং সামান্য ডিম্বাকৃতি—তবুও সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্বে পার্থক্য খুবই সামান্য।
জানুয়ারিতে, যখন পৃথিবী সূর্যের সবচেয়ে কাছে থাকে (পেরিহেলিয়ন), তখন দূরত্ব কমে যায় প্রায় ৯ কোটি ৩০ লাখ মাইল থেকে ৯ কোটি ২৭ লাখ মাইলে।
এই পার্থক্য মোট দূরত্বের মাত্র ৩.৩%, ফলে এতে সূর্যের আলো ও তাপের মাত্রা কমে মাত্র ৭%, যা পৃথিবীর টিল্টের প্রভাবের তুলনায় নগণ্য।
বাস্তব প্রমাণ: সূর্যালোকের তারতম্য
উত্তর গোলার্ধের শহরগুলোর মধ্যে, যেমন হিউস্টন, নিউ অরলিন্স ও ফিনিক্স, গ্রীষ্মে সূর্যালোকের পরিমাণ শীতকালের চেয়ে দুই গুণেরও বেশি।
আরো উত্তরে, যেমন নিউইয়র্ক, ডেনভার ও কলম্বাস, শীতকালে যেখানে সূর্য শক্তি মাত্র ১৪৫ ওয়াট/স্কয়ার মিটার, গ্রীষ্মকালে তা হয় ৪৩০ ওয়াট/স্কয়ার মিটার—প্রায় ৩০০% বেশি!
তাই, আমরা এখন সূর্য থেকে দূরে থাকলেও গ্রীষ্মের তীব্রতা কমছে না। কারণ, তাপমাত্রা নির্ধারণে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে আমাদের পৃথিবীর হেলানো কৌণিক অবস্থান, সূর্যের সঙ্গে পৃথিবীর দূরত্ব নয়।
Jahan