
ছবি: সংগৃহীত
১৮ বছর ধরে বারবার চেষ্টার পরও সন্তান ধারণে ব্যর্থ হওয়া এক দম্পতির জীবনে এলো বহুল কাঙ্ক্ষিত সুখবর—কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI)-এর সহায়তায় তারা এখন গর্ভধারণ করেছেন! বহুবার আইভিএফ (In Vitro Fertilisation) করেও যখন সফলতা মিলছিল না, তখনই এই যুগান্তকারী প্রযুক্তি তাদের আশার আলো দেখায়।
কী ছিল সমস্যার মূল কারণ?
স্বামী ভুগছিলেন অ্যাজোস্পার্মিয়া (Azoospermia) নামের এক বিরল রোগে—যার ফলে বীর্যে কোনও কার্যকর শুক্রাণু থাকে না। সাধারণত সুস্থ পুরুষদের বীর্যের প্রতি মিলিলিটারে লাখ লাখ শুক্রাণু থাকে। কিন্তু এই দম্পতির ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন যাবৎ চলা পরীক্ষার পরও কোনও শুক্রাণু খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।
AI-এর মাধ্যমে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত
শেষমেশ তারা যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি ফার্টিলিটি সেন্টারে (CUFC) যান। সেখানেই গবেষকরা ব্যবহার করেন নতুন এক এআই-নির্ভর প্রযুক্তি—STAR (Sperm Tracking and Recovery) নামের পদ্ধতি, যা শুক্রাণুর খোঁজে অভাবনীয় সাফল্য এনে দেয়।
গবেষকরা একটি বিশেষ চিপে বীর্য নমুনা রেখে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ইমেজিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে এক ঘণ্টার মধ্যে ৮০ লাখের বেশি ছবি ধারণ করেন। এরপর এআই অ্যালগরিদম সেই ছবিগুলো বিশ্লেষণ করে লুকিয়ে থাকা শুক্রাণু চিহ্নিত করে। যেখানে দুই দিন ধরে খুঁজেও কিছুই পাওয়া যায়নি, সেখানে এআই মাত্র এক ঘণ্টায় ৪৪টি কার্যকর শুক্রাণু শনাক্ত করে।
এই শুক্রাণুগুলো দিয়ে স্ত্রীর ডিম্বাণু নিষিক্ত করে আইভিএফ পদ্ধতিতে গর্ভধারণ নিশ্চিত করা হয়। এতে তিনি হয়ে ওঠেন STAR পদ্ধতিতে গর্ভধারণ করা বিশ্বের প্রথম নারী।
প্রতিক্রিয়ায় আবেগাপ্লুত দম্পতি
‘প্রেগন্যান্সি টেস্টে পজিটিভ আসার পর আমার বিশ্বাসই হচ্ছিল না,’ বলেন ওই নারী। ‘প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে ভাবি—এটা কি সত্যি? এখনো স্ক্যান না দেখা পর্যন্ত বিশ্বাস করতে পারি না আমি গর্ভবতী।’
গবেষণার পেছনে দীর্ঘ পরিশ্রম
পাঁচ বছরের গবেষণার ফল এই STAR পদ্ধতি, জানান গবেষণার নেতৃত্ব দেওয়া ড. জেভ উইলিয়ামস। তাঁর ভাষায়, ‘যেখানে দুই দিনেও মানবচোখ কিছু খুঁজে পায়নি, এআই মাত্র এক ঘণ্টায় ৪৪টি শুক্রাণু খুঁজে বের করেছে। এই প্রযুক্তি ভবিষ্যতে বন্ধ্যত্ব সমস্যায় ভোগা দম্পতিদের জন্য বিশাল সম্ভাবনা তৈরি করবে।’
সূত্র: এনডিটিভি।
রাকিব