ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৫ জুলাই ২০২৫, ২১ আষাঢ় ১৪৩২

যে কৌশলে নিজের ক্ষমতা বাড়ালেন ট্রাম্প

প্রকাশিত: ০৮:৪৭, ৫ জুলাই ২০২৫

যে কৌশলে নিজের ক্ষমতা বাড়ালেন ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প

গত কয়েকটি দিন ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ও মোড় ঘোরানোর মতো। দ্বিতীয় মেয়াদের মাত্র ছয় মাসের মাথায় এখন তিনি তার রাজনৈতিক ক্ষমতার শীর্ষে রয়েছেন বলেই মনে করা হচ্ছে। গত সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্টের এক রায় প্রেসিডেন্টের নির্বাহী ক্ষমতার আরও বিস্তৃত ব্যবহারের পথ খুলে দিয়েছে। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় তার হামলা গাজায় সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতির জন্য নতুন গতি তৈরি করেছে বলে মনে করা হচ্ছে। এ ছাড়া গত সপ্তাহের ন্যাটো সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে নতুন প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প এমন এক অর্থনীতির নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যা এখনো নতুন চাকরির ক্ষেত্র তৈরি করে চলেছে। শুল্ক আরোপের হুমকিতে বাজারে উদ্বেগ আছে সত্যি। তবে তার কড়া অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ নীতিমালার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঐতিহাসিকভাবে কমে এসেছে বলে জানা যাচ্ছে। বিলটি প্রতিনিধি পরিষদে পাস হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর এয়ারফোর্স ওয়ানের বাইরে ট্রাম্প বলেন, আমি মনে করি এখন আমার আরও ক্ষমতা আছে, সত্যিই তাই।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ক্ষমতার প্রশ্নে এক অদ্ভুত মোড়ে এসে দাঁড়ান বৃহস্পতিবার। এত ক্ষমতা থাকার পরও একটা বিল পাস করাতে তাকে টানা ২০ ঘণ্টা লড়াই করতে হয়েছে রিপাবলিকান নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে। শেষমেশ তিনি তার বহু কাক্সিক্ষত ‘বিগ বিউটিফুল’ বিলটি পাস করাতে পেরেছেন। তবে বিলটি পাস করানো মোটেও সহজ ছিল না ট্রাম্পের জন্য। পুরো প্রক্রিয়ায় রিপাবলিকানদের সমর্থন আদায়ে বহু কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। তার বিস্তৃত অভ্যন্তরীণ বিলটির প্রতি সমর্থন আদায়ে কখনো হুমকি, কখনো আশ্বাস দিতে হয়েছে তাকে। অনেক চেষ্টার পরও বিলের পক্ষে প্রতিনিধি পরিষদের ধীরগতির ভোট প্রক্রিয়ার দৃশ্য টেলিভিশনে দেখে ট্রাম্প কিছুটা বিরক্ত হয়ে পড়েছিলেন। রাত ১২টার দিকে বিলের ভোট কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছিল। তখন ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, রিপাবলিকানরা কী জন্য অপেক্ষা করছে? কী প্রমাণ করতে চাইছে? মাগাতে (মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন) খুশি না আর এতে তোমরা ভোট হারাচ্ছ! মূলত ওই পোস্ট দেওয়ার পরেই ধীরে ধীরে বরফ গলতে থাকে। টানা ১৪ ঘণ্টা পর অবশেষে বিলটি পাস হয়। মাত্র দুজন রিপাবলিকান এতে ভিন্নমত পোষণ করেন। সিএনএন জানিয়েছে, শুক্রবার বিকেলে হোয়াইট হাউজে এক বড় অনুষ্ঠানে বিলটিতে স্বাক্ষর করবেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। অনুষ্ঠান থেকে আকাশে ওড়ানো হবে সেই বি-২ বোমারু বিমান, যেগুলো গত মাসে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বাংকার বাস্টার বোমা ফেলেছিল।

একাধিক জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের বড় একটি অংশ বিলটি নিয়ে সন্দিহান। ফলে সামনের মাসগুলোতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য বড় কাজ হবে, এই বিল নিয়ে জনমত পরিবর্তন করা। বিলটি যেভাবে ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন হবে, তাতে ট্রাম্প কিছুটা সুবিধা পেতে পারেন। বিল অনুযায়ী কর হ্রাসের বিষয়টি অদূর ভবিষ্যতেই কার্যকর হবে। কিন্তু মেডিকেইড ও খাদ্য সহায়তা প্রোগ্রামের বড় পরিবর্তনগুলো কার্যকর হবে আগামী বছরের মধ্যবর্তী নির্বাচনের পর। তবে সাম্প্রতিক ইতিহাস বলছে, সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুযোগ নিয়ে বড় আইন পাস করিয়েছেন এবং ভেবেছেন এটি তাদের রাজনৈতিক ঐতিহ্য গড়ে দেবে, এমন প্রেসিডেন্টরা পরবর্তী সময়ে আফসোস করেছেন। কারণ তারা পরে বুঝতে পারেন যে, তারা সাধারণ জনগণের কাছে সেই বিলের পক্ষে যথেষ্ট প্রচার চালাননি। আর এর খেসারত দিতে হয়েছে নির্বাচনে।

গত সপ্তাহে বিভিন্ন সময়ে ট্রাম্প নিজেও স্বীকার করেছেন, সামাজিক নিরাপত্তা খাতের খরচ বেশি কাটা হলে রিপাবলিকানদের রাজনৈতিকভাবে চাপে পড়তে হতে পারে। গত মঙ্গলবার সিএনএনকে তিনি বলেন, আমি খুব বেশি কাটছাঁট করতে চাই না। হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তারা জানান, ব্যক্তিগত আলোচনায় ট্রাম্প রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদের বলেছেন, মেডিকেইড, মেডিকেয়ার ও সোশ্যাল সিকিউরিটি পরিবর্তন করার বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে পরাজয় ডেকে আনতে পারে। তাই হোয়াইট হাউজ আইনপ্রণেতাদের বোঝাতে চেয়েছে, মেডিকেইডে পরিবর্তনের বাস্তব প্রভাব সাধারণ মানুষের ওপর দ্রুত পড়বে না। রাজ্য সরকার ও হাসপাতালগুলোকে সময় দেওয়া হবে এসব পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে। একই সঙ্গে আইনপ্রণেতাদের স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে, প্রতিটি রাজ্য ঠিক কীভাবে মেডিকেইড ফান্ড ব্যবহার করবে। ২০১৭ সালে ওবামাকেয়ার বাতিলের ব্যর্থ চেষ্টা থেকে শিক্ষা নিয়েই এবার ট্রাম্পের টিম রিপাবলিকানদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছে। তারা চেষ্টা করেছেন আরও স্পষ্টভাবে বোঝাতে, কেন এ বিল কার্যকর হবে।

তাসমিম

×