
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা একটি নতুন রহস্যময় মহাজাগতিক বস্তু শনাক্ত করেছেন, যেটি সম্ভবত আমাদের সৌরজগতের বাইরের কোনো স্থান থেকে এসেছে। বস্তুটির নাম দেওয়া হয়েছে 3I/Atlas, যা এটি তৃতীয় ইন্টারস্টেলার বস্তু হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।
এই বস্তুটি প্রথম আবিষ্কৃত হয় চিলির Asteroid Terrestrial-impact Last Alert System (ATLAS) টেলিস্কোপের মাধ্যমে। পরবর্তীতে নাসার বিশ্লেষণে দেখা যায়, বস্তুটির গতিপথ ও গতি বিশ্লেষণ করে ১৪ জুন পর্যন্ত তার উপস্থিতি শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।
কী জানা গেছে বস্তুটি সম্পর্কে?
-
বর্তমানে বস্তুটি সূর্য থেকে প্রায় ৪১৬ মিলিয়ন মাইল দূরে এবং ঘণ্টায় প্রায় ৬০ কিলোমিটার (৩৭ মাইল/সেকেন্ড) বেগে সৌরজগতের ভেতর দিয়ে ছুটে চলছে।
-
এটি ধনু (Sagittarius) নক্ষত্রপুঞ্জের দিক থেকে এসেছে এবং একটি অত্যন্ত দীর্ঘ ও হাইপারবোলিক কক্ষপথে চলমান—যা ইঙ্গিত দেয় যে এটি আমাদের সৌরজগতের বাইরের কোনো উৎস থেকে এসেছে।
-
বস্তুটির একটি আলোকমণ্ডল (coma) এবং ছোট লেজ রয়েছে—যা এটিকে ধূমকেতুর বৈশিষ্ট্য দিচ্ছে। তাই এটিকে আরও একটি নাম দেওয়া হয়েছে C/2025 N1।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
ড. মার্ক নরিস, ইউনিভার্সিটি অব সেন্ট্রাল ল্যাঙ্কাশায়ারের জ্যোতির্বিজ্ঞানের সিনিয়র লেকচারার বলেন:
“যদি এটি সত্যি ইন্টারস্টেলার বস্তু হয়, তাহলে এটি হবে আমাদের আবিষ্কৃত তৃতীয় ইন্টারস্টেলার ভ্রমণকারী—যা প্রমাণ করে যে এমন ভিনগ্রহীয় বস্তু গ্যালাক্সিতে হয়তো অনেক বেশি প্রচলিত।”
২০১৭ সালে আবিষ্কৃত ’Oumuamua এবং ২০১৯ সালের 2I/Borisov ছিল পূর্ববর্তী দুটি ইন্টারস্টেলার বস্তু।
পৃথিবীর জন্য কোনো ঝুঁকি আছে?
না, নাসা নিশ্চিত করেছে যে এই বস্তুটি পৃথিবীর জন্য কোনো হুমকি নয়। এটি সূর্য থেকে ১৩০ মিলিয়ন মাইল দূরত্বে আসবে ৩০ অক্টোবরের দিকে, যা মঙ্গলের কক্ষপথের ভেতরে। তবে এটি পৃথিবী থেকে কমপক্ষে ১.৬ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিট (প্রায় ১৫০ মিলিয়ন মাইল) দূরে থাকবে।
কলিন স্নোডগ্রাস, ইউনিভার্সিটি অব এডিনবরার গ্রহীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানের অধ্যাপক বলেন:
“যদি এটি ধূমকেতু হয়, তবে এর উজ্জ্বলতার বড় অংশ আসছে তার চারপাশের ধুলোমণ্ডল থেকে, সেক্ষেত্রে বস্তুটির কঠিন কেন্দ্র আসলে অনেক ছোট হতে পারে।”
এই আবিষ্কার মহাকাশ গবেষণায় এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এটি বোঝায় যে আমাদের সৌরজগত শুধু নয়, পুরো গ্যালাক্সি একটি গতিশীল মহাবিশ্ব, যেখানে বহিরাগত বস্তু মাঝেমধ্যেই আমাদের নিকটবর্তী অঞ্চলে প্রবেশ করে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে, এ ধরনের আরও আবিষ্কার ভবিষ্যতে আমাদের মহাবিশ্ব সম্পর্কে বোঝার দিগন্ত আরও প্রসারিত করবে।
Jahan