ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৩ জুলাই ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২

শূন্য থেকে মানব ডিএনএ তৈরির যুগের সূচনা—বিজ্ঞান কি বদলে দেবে মানব জাতির ভবিষ্যত?

প্রকাশিত: ০৮:৫৩, ৩ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০৮:৫৩, ৩ জুলাই ২০২৫

শূন্য থেকে মানব ডিএনএ তৈরির যুগের সূচনা—বিজ্ঞান কি বদলে দেবে মানব জাতির ভবিষ্যত?

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বে প্রথমবারের মতো শূন্য থেকে মানব জীবনের মূল উপাদান, অর্থাৎ মানব ডিএনএ তৈরির একটি গবেষণা শুরু হয়েছে।

আগে এই ধরনের গবেষণা প্রায় নিষিদ্ধ ছিল কারণ আশঙ্কা ছিল এটি ‘ডিজাইনার বেবি’ বা ভবিষ্যতে অপ্রত্যাশিত প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে।

তবে এখন বিশ্বের বৃহত্তম চিকিৎসা দাতব্য প্রতিষ্ঠান ওয়েলকম ট্রাস্ট ১০ মিলিয়ন পাউন্ড অনুদান দিয়ে এই প্রকল্প শুরু করেছে। তারা মনে করে এই গবেষণা অনেক কঠিন রোগের চিকিৎসায় সাহায্য করতে পারে।

কেমব্রিজের এমআরসি ল্যাবরেটরির ডঃ জুলিয়ান সেল বলেন, “আমরা এমন থেরাপি তৈরি করতে চাই যা মানুষকে বয়স বাড়লেও সুস্থ ও রোগমুক্ত থাকতে সাহায্য করবে। ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গ যেমন লিভার, হার্ট কিংবা রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারে ব্যবহারযোগ্য কোষ তৈরি করাই আমাদের লক্ষ্য।”

তবে কিছু বিজ্ঞানী আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনৈতিক গবেষকরা পরিবর্তিত বা উন্নত মানুষ তৈরি করতে পারে।

বিজ্ঞানী ডঃ প্যাট থমাস বলেন, “বিজ্ঞান ভালো কাজে ব্যবহৃত হয় আশা করি, কিন্তু এটি ভুল কাজে ও ব্যবহার হতে পারে, যেমন যুদ্ধের জন্য।”

মানব জেনোম প্রকল্পের ২৫ বছর পূর্তির দিনে এই গবেষণার কথা জানা গেছে। ওই প্রকল্পে মানব ডিএনএর সম্পূর্ণ মানচিত্র তৈরি হয়েছিল।

ডিএনএ চারটি ছোট ব্লক (এ, জি, সি, টি) নিয়ে গঠিত। এই নতুন প্রকল্পে গবেষকরা কেবল ডিএনএ পড়বেন না, বরং শূন্য থেকে কৃত্রিমভাবে ডিএনএর বড় বড় অংশ তৈরি করার চেষ্টা করবেন, যা শেষ পর্যন্ত একটি পুরো ক্রোমোসোমও হতে পারে।

এই ক্রোমোসোমগুলো আমাদের শরীরের বিকাশ, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ন্ত্রণ করে।

এই গবেষণার মাধ্যমে কীভাবে জিন কাজ করে তা বোঝা যাবে এবং জিনের ত্রুটির কারণে যেসব রোগ হয় সেগুলোর উন্নত চিকিৎসা তৈরি করা সম্ভব হবে।

গবেষণা শুধু পরীক্ষাগারে সীমাবদ্ধ থাকবে, কোনো কৃত্রিম জীবন সৃষ্টি করা হবে না। তবে প্রযুক্তির অপব্যবহারের আশঙ্কা থেকে মুক্ত নয়।

কেউ যদি এই প্রযুক্তি দিয়ে জীবাণু-অস্ত্র বা পরিবর্তিত প্রাণী তৈরি করে তাহলে তা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে বলেও সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা।

ওয়েলকম ট্রাস্ট এই প্রকল্পে কেন অর্থায়ন করল, এমন প্রশ্নের জবাবে বলা হয়েছে—“এই প্রযুক্তি একদিনই তৈরি হবে, তাই এখনই দায়িত্বসহকারে কাজ করা জরুরি।”

প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত একটি সামাজিক গবেষণা বিভাগ সাধারণ মানুষের মতামত ও উদ্বেগ জানার চেষ্টা করবে।

আবির

×