
ছবি: সংগৃহীত
কল্পবিজ্ঞান কিংবা সাই-ফাই সিনেমায় আমরা এক সময় যেটাকে ভবিষ্যতের জিনিস বলে মনে করতাম, সেটিই আজ আমাদের চারপাশে বাস্তব হয়ে দাঁড়িয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই (AI) এখন আর শুধু বড় কোনো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের ল্যাবেই সীমাবদ্ধ নেই, এটি ঢুকে পড়েছে আমাদের ঘর থেকে শুরু করে পেশাগত জীবনের নানা খাতে।
সহজভাবে বললে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এমন একটি প্রযুক্তি যা মানুষের মতো চিন্তা করতে পারে, শেখে, বিশ্লেষণ করে এবং সিদ্ধান্ত নিতে পারে। যেমন ধরুন, আপনি যখন মোবাইলে গুগল অ্যাসিস্ট্যান্টকে বলেন “আজকের আবহাওয়া কেমন?”, তখন সে যে তাৎক্ষণিকভাবে উত্তর দেয়, সেটিই এআই-এর কাজ।
আজকের দিনে আমরা যেসব প্রযুক্তি ব্যবহার করি, তার অনেকগুলোর মাঝেই এআই কাজ করছে। যেমন, স্মার্টফোন খুলতে মুখের দিকে তাকালেই আনলক হয়ে যায়—এটা মুখ শনাক্তকরণ প্রযুক্তি, যার ভিতরেও রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার। আবার আপনি অনলাইনে কেনাকাটা করতে গেলে কিংবা ভিডিও দেখেন, তখন যেসব পণ্য বা কনটেন্ট আপনার সামনে সাজিয়ে দেওয়া হয়, তা সবই আপনার আগের পছন্দ বিশ্লেষণ করে AI-এর তৈরি সুপারিশ।
চিকিৎসা খাতেও AI বিপ্লব ঘটাচ্ছে। রোগ শনাক্তে উন্নত স্ক্যান বিশ্লেষণ কিংবা চিকিৎসা পরিকল্পনায় সহায়তা—এই প্রযুক্তি এখন ডাক্তারদের সহযোগী হয়ে উঠেছে। এমনকি হাসপাতালের অ্যাপয়েন্টমেন্ট ব্যবস্থাপনা, রোগীর পূর্বতথ্য যাচাই কিংবা ওষুধের ডোজ নির্ধারণেও AI ব্যবহৃত হচ্ছে।
শিক্ষা এবং কৃষি খাতে এর ব্যবহারও বাড়ছে। একাধিক শিক্ষাপ্ল্যাটফর্ম এখন AI ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের উত্তর দেয়, দুর্বলতা চিহ্নিত করে আলাদা গাইডলাইন তৈরি করে দেয়। আর কৃষি ক্ষেত্রে জমির উর্বরতা, আর্দ্রতা বা কীট আক্রমণের পূর্বাভাস দিতে পারছে AI সেন্সর ও ড্রোন।
এআই ব্যবহারে সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে—মানুষের সময় ও খরচ বাঁচে, কাজের গতি বাড়ে এবং ঝুঁকিপূর্ণ কাজগুলোতে মানুষকে সরিয়ে এনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। তবে এই সুবিধার পাশাপাশি কিছু আশঙ্কাও রয়েছে। অনেকেই ভাবছেন, AI ব্যবহারের কারণে ভবিষ্যতে অনেক চাকরি হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে। আবার AI যদি ভুলভাবে শেখে কিংবা ভুল তথ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে সেটাও হতে পারে ভয়াবহ। তাছাড়া তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
বাংলাদেশেও এখন এআই প্রযুক্তি ধীরে ধীরে বিস্তৃত হচ্ছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, স্টার্টআপ ও সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে AI প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা ও ব্যবহার শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি, শিক্ষা ও প্রশাসনে সীমিত পরিসরে AI চালু থাকলেও ভবিষ্যতে এর ব্যবহার আরও প্রসারিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সবশেষে বলা যায়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখন আর কেবল প্রযুক্তিপ্রেমীদের আলোচনার বিষয় নয়—এটি আমাদের জীবন, কাজ ও চিন্তার ধরন বদলে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। তবে এই পরিবর্তনের সুফল পেতে হলে আমাদের চাই সচেতনতা, সঠিক ব্যবহার এবং প্রযুক্তির নৈতিক দিকটি মাথায় রেখে এগিয়ে চলা।
আঁখি