
ছবি: সংগৃহীত
হার্ট অ্যাটাক মানেই কি তীব্র ব্যথায় মাটিতে লুটিয়ে পড়া? নাকি বুক চেপে ধরা? সবসময় না। অনেক সময় হার্ট অ্যাটাক এতটাই নীরবে আসে যে রোগী টেরই পান না।
হার্ট অ্যাটাকের প্রচলিত ছবি—বুকে যন্ত্রণা, বাম হাতে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট। কিন্তু চিকিৎসকদের মতে, কিছু হার্ট অ্যাটাক এতটাই সূক্ষ্ম উপসর্গে আসে যে রোগী বুঝতেই পারেন না, আর চিকিৎসা হয় অনেক দেরিতে।
‘সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক’ কী?
কার্ডিওলজিস্ট ড. রবার্ট গ্রিনফিল্ড জানান, ‘রোগীর হার্টে ক্ষতি হয়ে গেছে, কিন্তু এতটাই মৃদু উপসর্গ ছিল যে ইমারজেন্সি রুমে যাওয়ার প্রয়োজনও মনে হয়নি।’
প্রথম হার্ট অ্যাটাকের খবর অনেকেই দ্বিতীয়বার পরীক্ষা করাতে গিয়ে জানতে পারেন। এমনকি ঘুমের মধ্যেও এটি ঘটে যেতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস, ধূমপান, মানসিক চাপ ও পারিবারিক ইতিহাস—সবকিছুই এর ঝুঁকি বাড়ায়।
বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে এই ধরনের হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বেশি। ডা. ওলুজিমি আজিজোলা জানান, ‘ডায়াবেটিস দীর্ঘদিন থাকলে হৃদযন্ত্রের অটোনোমিক নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা সাধারণত উপসর্গ জানান দেয়।’
নারীরাও অনেক সময় বুক ব্যথা ছাড়াই হার্ট অ্যাটাকের শিকার হন—তাদের ক্ষেত্রে পেট ব্যথা, চোয়ালে চাপ, বা অসুস্থ লাগা এমন উপসর্গ হয়।
নিচে এমন ৬টি সূক্ষ্ম উপসর্গ দেওয়া হলো, যেগুলো ‘সাইলেন্ট’ হার্ট অ্যাটাকের ইঙ্গিত হতে পারে:
শ্বাসকষ্ট
হঠাৎ হাঁটার সময় বা এমনকি বসে থাকলেও যদি হাপিয়ে যান, এটি হৃদযন্ত্রের সংকটের ইঙ্গিত হতে পারে। অনেকেই এটিকে প্যানিক অ্যাটাক ভাবেন, কিন্তু যদি তা সহজে ‘রিসেট’ না হয়, ডাক্তার দেখানো জরুরি।
হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া
হার্ট যদি স্বাভাবিক না থাকে, তখন তা নিজের মতো করে দ্রুত রক্তচালনা করতে চেষ্টা করে। এতে স্পন্দন বেড়ে যেতে পারে বা অনিয়মিত (আরিথমিয়া) হতে পারে।
হঠাৎ দুর্বলতা বা ক্লান্তি
হার্ট যখন সঙ্কটে পড়ে, তখন তা শরীরের অন্যান্য অঙ্গ থেকে শক্তি সরিয়ে নেয়। ফলে পা ও হাত দুর্বল লাগে, দাঁড়িয়ে থাকা বা হাঁটা কষ্টকর হয়।
বমি বমি ভাব বা হজমের সমস্যা
হৃদপিণ্ডের সংকটে পেটের রক্তচলাচল কমে যায়। এতে হঠাৎ বমি ভাব, বুক জ্বালা বা পেটব্যথা হয়। অনেকে এটিকে এসিডিটি বা গ্যাস ভেবে এড়িয়ে যান।
ব্রেইন ফগ বা অস্বচ্ছ চিন্তা
যদি হার্ট ঠিকমতো রক্ত না পাম্প করে, তাহলে মস্তিষ্কে অক্সিজেন কম পৌঁছায়। এতে বিভ্রান্তি, মাথা ঝিমঝিম বা কিছু মনে রাখতে অসুবিধা হয়।
‘ভালো না লাগা’ অনুভূতি
ডা. অ্যাড্রিয়ানা ক্যামাচো বলেন, “সবচেয়ে ধরা কঠিন উপসর্গ এটি। সকালবেলা হঠাৎ ক্লান্ত লাগছে, মন খারাপ, একটু ঘাম হচ্ছে—এসব সাধারণ মনে হলেও এটি হতে পারে সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক।”
কী করবেন এই ঝুঁকি কমাতে?
- রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল পরীক্ষা করান
- বেশি করে ফল ও সবজি খান
- নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করুন
- পর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করুন
- ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ নিন, বিশেষ করে যদি পরিবারে কারও হার্ট অ্যাটাকের ইতিহাস থাকে
ডা. গ্রিনফিল্ড বলেন, ‘হৃদযন্ত্রের যত্ন মানেই শুধু হার্ট নয়, জীবন উপভোগ করার নতুন সুযোগ।’
সূত্র: https://www.prevention.com/health/a65429305/symptoms-silent-heart-attack/
রাকিব