ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২

মহিলাদের জানা জরুরি— পিসিওডি (PCOD) ও পিসিওএস (PCOS) এর পার্থক্য

প্রকাশিত: ১৪:১১, ১৭ জুলাই ২০২৫

মহিলাদের জানা জরুরি— পিসিওডি (PCOD) ও পিসিওএস (PCOS) এর পার্থক্য

ছ‌বি: প্রতীকী

অনেক নারী আজকাল এক ধরনের হরমোনজনিত সমস্যায় ভুগছেন, যার নাম পিসিওডি (PCOD) এবং পিসিওএস (PCOS)। দুটি সমস্যার নাম প্রায় একরকম হওয়ায় অনেকেই এগুলোকে একই রোগ মনে করেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, এই দুইটি সমস্যা আলাদা এবং এদের চিকিৎসা, উপসর্গ ও প্রভাবও আলাদা। তাই নারীদের জন্য এগুলোর মধ্যে পার্থক্য জানা খুবই জরুরি।

PCOD এর পূর্ণরূপ হলো Polycystic Ovarian Disease এবং PCOS এর পূর্ণরূপ হলো Polycystic Ovary Syndrome। দুইটি অবস্থায়ই ডিম্বাশয়ে ছোট ছোট সিস্ট তৈরি হয় এবং হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। তবে এদের উৎপত্তি, জটিলতা এবং চিকিৎসার ধরণে পার্থক্য রয়েছে।

PCOD এমন একটি অবস্থা যেখানে নারীর ডিম্বাশয় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পরিমাণে পুরুষ হরমোন (অ্যান্ড্রোজেন) তৈরি করে। এর ফলে প্রতি মাসে ডিম্বাণু ঠিকভাবে নির্গত হয় না এবং ডিম্বাশয়ে সিস্ট তৈরি হতে থাকে। এই সমস্যায় ডিম্বাশয়ের কার্যক্ষমতা কিছুটা কমে যায়, তবে এটি খুব বেশি জটিল নয়। সাধারণত এটি সঠিক খাদ্যাভ্যাস, ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং জীবনধারার পরিবর্তনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

অন্যদিকে, PCOS হলো একটি হরমোনজনিত সিনড্রোম বা জটিল অবস্থা, যেখানে শরীরের বিভিন্ন অংশে একসঙ্গে সমস্যা দেখা দেয়। এখানে শুধু ডিম্বাশয় নয়, ইনসুলিন রেজিস্টেন্স, স্থূলতা, অনিয়মিত ঋতুস্রাব, মুখে বা শরীরে অতিরিক্ত লোম গজানো, চুল পড়ে যাওয়া, অনির্বচনীয় ওজন বৃদ্ধি ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়। PCOS এ ডিম্বাণু তৈরি হওয়া একেবারেই বন্ধ হয়ে যেতে পারে, ফলে সন্তান ধারণে সমস্যা হতে পারে। এটি শুধু একটি গাইনি সমস্যা নয়, বরং এটি সম্পূর্ণ একটি মেটাবলিক সমস্যা।

PCOD সমস্যায় আক্রান্ত নারীরা সাধারণত নিয়মিত ওজন নিয়ন্ত্রণ করলে এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করলে সুস্থ থাকতে পারেন। অনেক সময় ঔষধ ছাড়া শুধু ডায়েট ও ব্যায়ামের মাধ্যমে এই সমস্যা দূর করা যায়। কিন্তু PCOS-এ আক্রান্ত নারীদের চিকিৎসার জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিতে হয়। অনেক সময় হরমোন থেরাপি বা ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণের ওষুধ ব্যবহার করতে হয়।

PCOD তুলনামূলকভাবে কম জটিল এবং নারীদের প্রায় ১০ জনে ৩ জন এই সমস্যায় ভোগেন। অন্যদিকে PCOS তুলনামূলকভাবে কম সংখ্যক নারীর হলেও এটি বেশি বিপজ্জনক এবং জটিল। PCOS থাকলে ভবিষ্যতে টাইপ-২ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এমনকি বন্ধ্যত্বের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।

এই দুটি অবস্থার উপসর্গ কিছুটা একরকম হলেও মূল পার্থক্য হলো জটিলতার মাত্রা এবং শরীরে প্রভাব ফেলার ধরন। একজন নারী যদি অনিয়মিত ঋতুচক্র, মুখে ব্রণ, চুল পাতলা হয়ে যাওয়া বা ওজন বেড়ে যাওয়ার মতো সমস্যায় ভোগেন, তাহলে তাকে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। অনেক সময় রক্ত পরীক্ষা, হরমোন রিপোর্ট, আল্ট্রাসনোগ্রাফি ইত্যাদির মাধ্যমে এই রোগ দুটি আলাদা করা যায়।

সঠিক সময়ে রোগ চিহ্নিত করা এবং চিকিৎসা শুরু করা খুব জরুরি। বিশেষ করে যেসব নারী ভবিষ্যতে সন্তান নিতে চান, তাদের জন্য এই সমস্যাগুলো উপেক্ষা করা মারাত্মক হতে পারে। তাই যেকোনো ধরনের হরমোনজনিত সমস্যা দেখা দিলে তা লজ্জা না পেয়ে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া উচিত।

PCOD হলো তুলনামূলকভাবে সাধারণ ও নিয়ন্ত্রণযোগ্য সমস্যা, যেখানে ডিম্বাশয়ে সিস্ট হয় কিন্তু তা সম্পূর্ণ ডিম্বাণু উৎপাদন বন্ধ করে না। অন্যদিকে PCOS একটি বড় মাত্রার হরমোনগত সমস্যা, যা শরীরের অনেক অংশে একসঙ্গে প্রভাব ফেলে এবং সন্তান ধারণে জটিলতা তৈরি করতে পারে। দুইটি সমস্যাই গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা উচিত এবং সময়মতো চিকিৎসা শুরু করলে সুস্থ জীবনযাপন সম্ভব। নারীদের উচিত এই বিষয়ে সচেতন হওয়া এবং নিজের শরীরের সংকেতগুলো মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা।

এম.কে.

×