ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২

পানে আগ্রহ হারাচ্ছে খোকসার পান চাষিরা

পুলক সরকার, খোকসা, কুষ্টিয়া

প্রকাশিত: ১৬:১০, ১৮ জুলাই ২০২৫

পানে আগ্রহ হারাচ্ছে খোকসার পান চাষিরা

ছবি:সংগৃহীত

কুষ্টিয়ার খোকসায় আবহাওয়া ভালো থাকায় পানের ফলন ভালো হলেও পানের চাহিদা ও দাম পাচ্ছেন না চাষিরা। পানের দাম না পাওয়ায় উৎপাদন খরচ তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তারা। এমন অবস্থা চলতে থাকলে পানের বরজ উঠিয়ে দিতে হবে। কাজ না থাকায় বরজে কর্মরত শ্রমিকরা বেকার হয়ে যাচ্ছেন।

উপজেলার জানিপুর ইউনিয়নের এক্তারপুর, চরবিহারীয়া, ঈশ্বরদী ও খাগডবাড়িয়া গ্রামের কৃষকদের প্রধান জীবিকা পান চাষ। দীর্ঘদিন ধরেই পান চাষ করে আসছেন কৃষকরা। এতদিন পানের চাহিদার সঙ্গে দাম ভালো থাকায় দিন দিন বাড়ছিল পানের চাষ। কিন্তু এ বছর পানের ফলন ভালো হলেও দাম না পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তারা।

গত বছর প্রতি পোয়া (৪০ বিরা) মোটা পান ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে সেই পানের দাম মাত্র ১ হাজার ২শ টাকা, আর চিকন পান মাত্র ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এরপরও দেখা দিয়েছে ক্রেতা সংকট।

খৈলসহ অন্যান্য উপকরণের দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচ বাড়লেও পানের দাম না থাকায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন পানচাষিরা।

এক্তারপুর গ্রামের পানচাষি কার্তিক মন্ডল বলেন, “একে তো পানের দাম নেই, তার ওপর পানের ক্রেতা সংকট দেখা দিয়েছে। গত বছর মোটা পান প্রতি পোয়া ৪ হাজার টাকা বিক্রি করেছিলাম, সেই পান এবার বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২শ টাকায়। এক পোয়া পান ভাঙতে শ্রমিককে দিতে হয় ২শ টাকা, কিন্তু আমাদের চিকন পান বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা। চিকন পানের দাম না থাকায় অনেক সময় হাটে পানের গাদি ফেলে রেখে আসতে হয়। খৈল ও বাঁশের দাম বেশি, সব ধরনের উপকরণের দাম বেশি, কিন্তু পানের দাম নেই।”

পানচাষি মদন মোহন মজুমদার বলেন, “আমরা যারা পানচাষি আছি, তাদের অবস্থা খুবই খারাপ। এক বিঘা জমিতে পান চাষ করেছি, তাতে খরচ হয়েছে প্রায় ৩ লাখ টাকার মতো। কিন্তু বর্তমানে পানের দাম নেই, কীভাবে সেই টাকা উঠবে জানি না। পানের এমন দাম যে শ্রমিকের মজুরির টাকাটাও উঠছে না। সরকার যদি ভর্তুকির ব্যবস্থা করত, তবে পানচাষিরা উপকৃত হতো।”

শ্রমিক আব্দুর কুদ্দুস বলেন, “পানের দাম না থাকার কারণে আমরা যারা বিভিন্ন পানের বরজে শ্রমিকের কাজ করতাম, তাদের খুব সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। বরজে এক পোয়া পান তুলে মজুরি পাই ২শ টাকা, কিন্তু বর্তমানে বাজারে পান বিক্রি হচ্ছে ২শ টাকায়। পানের দাম না থাকায় বরজ মালিকদের লোকসান গুনতে হচ্ছে, যার কারণে তারা ঠিকমতো টাকা দিতে পারছেন না। আমরা বরজ মালিকরা উভয়ই লোকসানের মুখে আছি।”

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল নোমান জনকণ্ঠকে জানান, উপজেলায় প্রায় ৩০ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়। পান চাষ বাড়াতে প্রশিক্ষণসহ কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণ এবং পানে কখন কী ওষুধ রুটিন মাফিক স্প্রে করতে হবে সে সম্পর্কে পরামর্শসহ সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। তবে পানের দামের বিষয়টি কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের আওতাধীন। তাদের অর্গানাইজেশনাল রিফর্ম হলে কৃষকরা আরও উপকৃত হবেন।
 

 

মারিয়া

×