
আজ ১৮ জুলাই পালিত হচ্ছে নেলসন ম্যান্ডেলা আন্তর্জাতিক দিবস ২০২৫, যা দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট নেলসন ম্যান্ডেলার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে। এ দিনটি কেবল একজন নেতার জন্মদিন নয়, বরং বিশ্বজুড়ে শান্তি, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়।
ম্যান্ডেলার অবদান ও দিবসটির সূচনা
নেলসন ম্যান্ডেলা দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী শাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৬৭ বছর ধরে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে গেছেন। তার এই অবদানকে সম্মান জানিয়ে ২০০৯ সালের নভেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ১৮ জুলাইকে ‘নেলসন ম্যান্ডেলা আন্তর্জাতিক দিবস’ ঘোষণা করে।
এরপর ২০১৫ সালে জাতিসংঘ দিবসটির পরিধি বাড়িয়ে জেলখানার মানবিক পরিবেশ নিশ্চিত করা, বন্দিদের সমাজে পুনঃঅন্তর্ভুক্তি, এবং কারাকর্মীদের গুরুত্ব তুলে ধরার আহ্বান জানায়।
দিবসটির তাৎপর্য
নেলসন ম্যান্ডেলা আন্তর্জাতিক দিবস মানুষকে উৎসাহিত করে সমাজসেবায় অংশ নিতে। বিশ্বজুড়ে মানুষ এদিন ৬৭ মিনিট সমাজকল্যাণমূলক কাজ করেন, যা প্রতীকীভাবে ম্যান্ডেলার ৬৭ বছরের জনসেবাকে স্মরণ করে।
ম্যান্ডেলার জীবন ও আদর্শ একটি বৈষম্যহীন, ক্ষমাশীল এবং মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মানুষকে অনুপ্রাণিত করে।
ম্যান্ডেলার সংগ্রামী জীবন
নেলসন ম্যান্ডেলা ২৭ বছর কারাবন্দি ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে।
তিনি ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তার নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকায় শুরু হয় ক্ষমা, পুনর্মিলন এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার এক নতুন অধ্যায়।
প্রেরণাদায়ক উদ্ধৃতি
এই বিশেষ দিনে নেলসন ম্যান্ডেলার কিছু অনুপ্রেরণাদায়ক বাণী বিশ্বব্যাপী আলোচিত হচ্ছে:
“উন্নতির স্বভাবই হলো, আমাদের উচিত ভালো ও খারাপ—উভয় অভিজ্ঞতা থেকেই শেখা।”
“প্রত্যেকেই নিজ নিজ পরিস্থিতির ঊর্ধ্বে উঠতে পারে এবং সফলতা অর্জন করতে পারে, যদি সে নিবেদিত ও আন্তরিক হয় তার কাজে।”
“আমাদের বিভক্ত করে না আমাদের বৈচিত্র্য, জাতিগত পরিচয় কিংবা ধর্ম। এখন, স্বাধীনতা অর্জনের পর, কেবল একটি বিভাজন হতে পারে—গণতন্ত্রকে যারা শ্রদ্ধা করে এবং যারা করে না, তাদের মাঝে।”
বিশ্বজুড়ে কর্মসূচি
এই দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক সংগঠন ও নাগরিকরা স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ, আলোচনা সভা ও কর্মসূচির মাধ্যমে ম্যান্ডেলার আদর্শ ছড়িয়ে দিচ্ছেন।
নেলসন ম্যান্ডেলা আন্তর্জাতিক দিবস শুধু স্মরণের দিন নয়, এটি প্রতিজ্ঞা করার দিন—একটি ন্যায়ভিত্তিক, মানবিক ও সহানুভূতিশীল সমাজ গঠনে নিজ নিজ জায়গা থেকে সক্রিয় ভূমিকা রাখার।
নেলসন ম্যান্ডেলার মতো মানুষ যুগে যুগে জন্মান না। তার রেখে যাওয়া আদর্শ আজও বিশ্বের নানা প্রান্তে মানুষকে জাগিয়ে তুলছে, শেখাচ্ছে—ক্ষমা, ভালোবাসা এবং সহানুভূতির শক্তিই পৃথিবীকে সত্যিকারের সুন্দর করতে পারে।
Jahan