
যুক্তরাষ্ট্রের স্বনামধন্য টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফুল ফান্ড স্কলারশিপে পিএইচডি প্রোগামে ডাক পেয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী মোঃ সাবিত হাসান। তিনি প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ৯ম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। ২০১৯ সালে এই বিভাগের ‘বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণ’ শাখা থেকে তিনি স্নাতকোত্তর পাশ করেন।
পেশায় সাবিত হাসান বন্যপ্রাণী গবেষক। ৩০ টির বেশি গবেষনা প্রবন্ধ রয়েছে তার ঝুড়িতে। আমেরিকায় পড়াশুনা করলেও তিনি প্রাথমিকভাবে তার পিএইচডি গবেষণার ফিল্ড রেখেছেন বাংলাদেশে। এখানে তিনি নিশাচর বানর গোত্রীয় প্রাণী নিয়ে গবেষণা করবেন।
সাবিত হাসান জানান, বাংলাদেশের প্রাণীদের নিয়ে কম কাজ হয়েছে, তাই আমরা এদের বিষয়ে অনেক কম জানি। নিজ দেশের প্রাণীদের সংরক্ষণে কাজ করতে পারা ভাগ্যের বিষয়। আমি তা করার চেষ্টা করছি।
২০২০ সালে বন্যপ্রাণী গবেষক হিসাবে ইসাবেলা ফাউন্ডেশনে সাবিত হাসানের কর্মজীবন শুরু। কিন্তু তিনি গবেষণার সাথে সম্পৃক্ত হয়েছেন ২০১৫ সালে স্নাতক ২য় বর্ষ থেকেই। তখন কাজ করার সুযোগ পান লজ্জাবতী বানরের গবেষণার প্রকল্পে সহকারী গবেষক হিসাবে। এখান থেকেই বানর গোত্রীয় প্রাণীদের আচার-আচরণের বিচিত্রতা তাকে আকৃষ্ট করে। এই লজ্জাবতী বানরের গবেষণাপত্র ছাপা হয় Cambridge University Press থেকে প্রকাশিত ‘Ecology and Conservation of Lorises and Pottos’ নামক বইয়ে।
মাস্টার্সে তার গবেষণার বিষয় ছিল—‘পরিবেশের ঋতুকালিন পরিবর্তন একটি উল্লুক গিবন (Hoolock hoolock) পরিবারের আচরণ ও বিচরণের উপর কীরূপ প্রভাব ফেলে’। এই গবেষণার জন্য তিনি বাংলাদেশের National Science and Technology Fellowship এবং যুক্তরাষ্ট্রের U.S. Fish and Wildlife Service থেকে আর্থিক সহযোগিতা পান। তার এই গবেষণা Springer প্রকাশিত International Journal of Primatology তে প্রকাশিত হয়।
এ পর্যন্ত তার ঝুড়িতে রয়েছে ৩০ টার অধিক গবেষণা প্রবন্ধ, যা ৯২ টি প্রকাশনায় উদ্ধৃতি পেয়েছে। স্বনামধন্য জার্নাল Science Advance, Ecologies, Reptiles and Amphibians সহ দেশি- বিদেশি অনেক জার্নালেই রয়েছে তার প্রকাশিত গবেষণাপত্র।
এছাড়াও বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ নিয়ে তিনি বিভিন্ন সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিনে লিখেছেন। তার গবেষণার প্রধান বিষয়—বানর গোত্রীয় প্রাণী হলেও তিনি কাজ করছেন পাখি, সাপ, ব্যাঙ, বাদুড়, কাঠবিড়ালি ও প্রজাপতি নিয়ে।
তিনি IUCN SSC Primate Specialist Group’s South Asia Section & Section on Small Apes (SSA), International Primatological Society, Long-tailed Macaque-Denmark, Save the Frogs!, Bangladesh Bird Club, Zoological Society of Bangladesh এর সদস্য পদে রয়েছেন।
সাবিত এ পর্যন্ত ২টি জাতীয় ও ৪টি আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে গবেষণা উপস্থাপন করতে ৩টি দেশ ভ্রমণ করেছেন।
ইসাবেলা ফাউন্ডেশনে বন্যপ্রাণী গবেষক হিসাবে কর্মজীবন শুরু করলেও স্বনামধন্য বিজ্ঞানী ডঃ আনিসুজ্জামান খান শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করার পর তিনি পরবর্তীতে ২০২২ সালে এই প্রতিষ্ঠানের মুখ্য গবেষক হিসেবে পদোন্নতি পান। তার হাত ধরেই প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে চালু হয় ‘Dr. Anisuzzaman Khan Wildlife Fellowship’, যার আওতায় প্রতিবছর ১জন উদীয়মান গবেষককে ১ লক্ষ টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়।
তিনি দায়িত্বে থাকাকালীন প্রতিষ্ঠানের ৩টি প্রকল্পের নেতৃত্ব দেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশে ২০২২ সালে " Ecology and Conservation of Bengal Slow Loris’ " নামের প্রকল্প শুরু করেন। প্রকল্পের আওতায় তিনি বাংলাদেশে নিশাচর এই লজ্জাবতী বানরের সংখ্যা নিরূপণ, আচার-আচরণ, মিথ ও তাদের হুমকি নিয়ে বাংলাদেশের ১৫টি বনে কাজ করেছেন।
গবেষণার উদ্দেশ্যে বানরের গলায় পরিয়েছেন রেডিও কলার ট্রান্সমিটার (Radio Collar Transmitter), মানুষকে সচেতন করতে করেছেন সচেতনতামূলক নানা প্রোগ্রাম।এই গবেষণায় তিনি আর্থিক সহযোগিতা পেয়েছেন বাংলাদেশের বন বিভাগের সুফল প্রকল্প, আমেরিকার ‘Primate Action Fund’ এবং দুবাইয়ের ‘The Mohamed bin Zayed Species Conservation Fund’থেকে।
এছাড়াও ছাত্র জীবন থেকে তিনি গবেষণার জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠান থেকে পেয়েছেন Save the Frogs Day!, The Explorers Club, এবং Idea Wild থেকে গবেষণা অনুদান।
তার পিএইচডি পথযাত্রা ও বন্যপ্রাণী নিয়ে কাজ করার অনুপ্রেরণা নিয়ে জানতে চাইলে সাবিত হাসান বলেন, বাবার চাকরির তাগিদে তার শৈশবের ৮ বছর কেটেছে মোংলা বন্দরে, পড়েছেন সেন্ট পলস উচ্চ বিদ্যালয়ে। এই সময় তিনি ১৫ বার সুন্দরবন ভ্রমণ করেছেন, তার শৈশবের একটা বড় সময় কেটেছে সুন্দরবনের গাছ চুরি, বাঘের মানুষ হত্যা, বাঘের মুখ থেকে বেঁচে ফেরা, বাঘের হাত থেকে বাঁচতে বনবিবির পূজা করা—এসব গল্প শুনে। তখন থেকেই বন ও বন্যপ্রাণীদের প্রতি তার ভালবাসা তৈরি হয়। পরবর্তীতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ আজকের বন্যপ্রাণী গবেষক হয়ে উঠতে সহযোগিতা করেছে।
আমেরিকায় পিএইচডি নিয়ে তিনি বলেন, মনের মত পিএইচডি সুপারভাইজর খুঁজে পাওয়া এবং তাকে রাজি করান একটা চ্যালেঞ্জ। সেকারণে এই কাজটি একটু সময় হাতে রেখে করতে পারলে ভাল। আমি ১৭ জনের একটা লিস্ট করেছিলাম। পিএইচডিতে ফুল ফান্ড পেতে আর একটা বড় বিষয় হচ্ছে গবেষণাপত্র—কমপক্ষে ২টি হওয়া উচিত।
তিনি জানান, তার একটা বড় সুবিধা- সুপারভাইজারকে তিনি আগে থেকেই চিনতেন। মালয়েশিয়াতে বানর নিয়ে আয়োজিত একটা সম্মেলনে তার সাথে পরিচয় এবং একসাথে জঙ্গল ভ্রমণ। তিনি যেহেতু আমার কাজ সম্পর্কে আগে থেকেই কিছুটা জানতেন, সেহেতু আমি কিছুটা সুবিধা পেয়েছি।
Jahan