
দেশের সাম্প্রতিক ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, এ দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করার জন্য বিভিন্ন অপশক্তি বিভিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কাজেই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করার জন্য একটি দুষ্টচক্র বিভিন্নভাবে নৈরাজ্য সৃষ্টি করার প্রচেষ্টায় রয়েছে।
শুক্রবার (১৮ জুলাই) নরসিংদীর পাঁচদোনায় মোমেন খান চত্বরে 'জুলাই-আগস্টের ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের সকল শহীদের স্মরণে আলোচনা ও সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। আয়োজন করে পলাশ উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন।
মঈন খান বলেন, আমাদের সংগ্রাম কিন্তু এখনো শেষ হয়নি। স্বৈরাচার সরকারকে উৎখাত করা হচ্ছে সংগ্রামের প্রথম ধাপ। সেটা সম্পন্ন করেছি। কিন্তু আমরা এখনো একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশকে পুনর্গঠিত করতে পারিনি। সামনে আরও চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সেই চ্যালেঞ্জ আমাদের মোকাবিলা করতে হবে।
২৪ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এটি ছিল একটি মেধাভিত্তিক আন্দোলন। দেশে মেধা প্রতিষ্ঠা করার জন্য রাজপথে নেমেছিল ছাত্ররা। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে সেই মেধা আন্দোলন সরকার অপসারণের একদফা দাবিতে পরিণত হয়েছিল। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে স্বৈরাচারী সরকার দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বড় একটি অংশই ছিল বিএনপির নেতাকর্মী।
এ দেশে গণতন্ত্র ফিরে আনার জন্য আন্দোলন হয়েছে জানিয়ে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের ভোটাররা তাদের ভোট দিয়ে সংসদে প্রতিনিধি নির্বাচিত করবে। আমরা জনগণের জন্য রাজনীতি করি, বিএনপি ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করে না।
উদাহরণ টেনে আব্দুল মঈন খান বলেন, ১৯৯৬ সালে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জনগণের দাবি প্রতি শ্রদ্ধা করে প্রধানমন্ত্রীত্ব পদ ধুলায় ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলেন। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ৭ নভেম্বরের পরবর্তীতে একদলীয় শাসনের পরিবর্তে বহুদলীয় গণতন্ত্র উপহার দিয়েছেন এ দেশের মানুষকে। কাজেই বিএনপি ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করে না। এটা বারবার প্রমাণিত হয়েছে।
বাংলাদেশের জনগণের রক্তে রয়েছে প্রতিবাদ, মানুষের রক্তে রয়েছে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন বলে মন্তব্য করেন মঈন খান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে সরকারকে অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বপ্রকার সহায়তা দেবে বিএনপি। সরকারের মূল দায়িত্ব হচ্ছে অত্যাবশ্যকীয় সংস্কারগুলো করে যতদ্রুত সম্ভব দেশের মানুষের হাতে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিতে হবে। সংসদে গণতান্ত্রিক সরকার সৃষ্টি করতে হবে।
১৭৮৯ সালে বাস্তিল কারাগারে বিদ্রোহ হয়েছিল জানিয়ে মঈন খান বলেন, ২৪ সালে গণঅভ্যুত্থানে নরসিংদীর কারাগারে বিদ্রোহ করে জেল ভেঙে ফেলেছিল। এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। নরসিংদীর মানুষ বিশ্ব ইতিহাসের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে একটি মহান জেলা হিসেবে পৃথিবীতে নিজেদের অস্তিত্ব নিশ্চিত করেছে। বিদ্রোহের দিন নরসিংদী জেল কারাগার ভেঙে যারা বেরিয়ে এসেছিল, সেই মুক্তির আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছিলেন, যারা জীবন দিয়েছিলেন, যারা বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন—বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে, সেই আদর্শ থেকে তাদেরকে সম্মান জানানোর জন্য এখানে সমবেত হয়েছি।
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের জন্ম নরসিংদীতে জানিয়ে মঈন খান বলেন, ৫২'র ভাষা আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, মহান মুক্তিযুদ্ধ, ৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, ২৪ জুলাই ছাত্র-জনতা আন্দোলনে এই জেলার সংযুক্তি ছিল। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা। নরসিংদীর সন্তান হিসেবে বলতে চাই, এই জেলার মানুষ মুক্তির গৌরবের আন্দোলনে জ্বলন্ত সাক্ষী শুধু নয়, মুক্তির আন্দোলনের নায়ক।
দুপুর থেকেই ছোট ছোট মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে হাজির হন উপজেলা ও ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা। সমাবেশে বাস ও ট্রাকে করেও মিছিল নিয়ে যোগ দেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মোমেন খান চত্বর কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়।
আলোচনা সভায় ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে শহীদ তাহমিদ, শহীদ ইমন, শহীদ আমজাত হোসেন, শহীদ আশিকুল ইসলাম রাব্বি, শহীদ মো. হাসান নিয়া, শহীদ কাজী আবদুর রহমান, শহীদ আরমান মোল্লার পরিবার এবং অলিউল্লাহ (যুদ্ধাহত), মো. তানভীর মোল্লা (যুদ্ধাহত), আসিফ মাহমুদ ভূঁইয়া (যুদ্ধাহত)–এর হাতে আর্থিক অনুদান তুলে দেন মঈন খান। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন পলাশ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুস সালাম।
আফরোজা