ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২

গর্ভ ছাড়াই জন্ম নিচ্ছে প্রাণ! ডিম্বাণু নয়, শুক্রাণু নয় এই শিশুর পেছনে

প্রকাশিত: ২২:৪৯, ১৮ জুলাই ২০২৫

গর্ভ ছাড়াই জন্ম নিচ্ছে প্রাণ! ডিম্বাণু নয়, শুক্রাণু নয় এই শিশুর পেছনে

সংগৃহীত

বিশ্ববিজ্ঞান এখন এক বিস্ময়কর মুহূর্ত অতিক্রম করছে। যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (Caltech) একদল বিজ্ঞানী ডিম ও শুক্রাণু ছাড়াই গবেষণাগারে তৈরি করেছেন একটি কৃত্রিম ইঁদুর ভ্রূণ।

অবাক করা ব্যাপার হলো, এই ভ্রূণটির রয়েছে ধড়ফড় করা হৃৎপিণ্ড, প্রাথমিক মস্তিষ্ক, এবং গঠিত হচ্ছে মেরুদণ্ডও।

এই ভ্রূণ কোনো মায়ের জরায়ুতে তৈরি হয়নি। বরং সম্পূর্ণভাবে স্টেম সেল (গর্ভজাত কোষ) থেকে, বিশেষ রকম রাসায়নিক সংকেত ও ত্রিমাত্রিক (3D) কাঠামোর মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে এই ভ্রূণ।

  • ভ্রূণটি তৈরি হয় পেট্রি ডিশে, কৃত্রিম জরায়ুর মতো এক চেম্বারে।
  • ৮ দিন পর দেখা যায় হৃদপিণ্ডের স্পন্দন।
  • মস্তিষ্কের কোষ গঠিত হতে থাকে।
  • নটোকর্ড নামের কাঠামো দেখা দেয়, যা পরবর্তীতে মেরুদণ্ডে রূপ নেবে।

এই ভ্রূণের বিকাশ প্রায় প্রকৃত ভ্রূণের মতোই হয়েছিল, যদিও এটি ৯ দিন পর স্বাভাবিকভাবে থেমে যায়।

না, এটি এখনো জীবন্ত প্রাণ নয় এবং বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি জন্ম দেওয়ার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়নি। তবে এর গুরুত্ব অসীম:

  • গর্ভাবস্থার প্রথম দিকের জটিলতা বোঝার জন্য এটি এক বড় সাফল্য
  • মিসক্যারেজ বা জন্মগত রোগের উৎস শনাক্তে সহায়ক হতে পারে
  • ভবিষ্যতে রোগীর নিজের কোষ থেকে কিডনি, লিভার বা হৃৎপিণ্ড তৈরি করা সম্ভব হতে পারে

তবে এই আবিষ্কার নিয়ে বিশ্বজুড়ে নৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে। অনেকেই বলছেন, এটি সৃষ্টির স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করে। বিজ্ঞানীদের একাংশ আবার মনে করছেন, যদি সঠিক নীতিমালার মধ্যে থাকে, তবে এটি হতে পারে চিকিৎসা বিজ্ঞানে এক নতুন বিপ্লব।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পদ্ধতি ব্যবহার করে একদিন মানব ভ্রূণের অনুরূপ সিনথেটিক মডেল তৈরি করা সম্ভব হবে। যদিও এর জন্য কঠোর নীতিগত নির্দেশনা ও নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।

 এই গবেষণার তাৎপর্য

  •  এটি ক্লোনিং নয়, বরং পুরোপুরি স্টেমসেল থেকে গঠিত সৃষ্টি
  •  কোনও জীবন্ত প্রাণীর শরীর এতে যুক্ত হয়নি
  •  গবেষণাগারে সৃষ্টি হলেও এর গঠন ও বিকাশ প্রকৃত ভ্রূণের মতোই

জীবন সৃষ্টি বরাবরই এক রহস্যময়, জটিল ও অলৌকিক প্রক্রিয়া। সেই রহস্যকে উন্মোচনের পথে এই গবেষণা এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।

যদিও এটি এখনো নৈতিক ও বৈজ্ঞানিক প্রশ্নের মুখোমুখি, তবুও মানবজাতির চিকিৎসা, জন্মগত ত্রুটি নিরাময়, অঙ্গ প্রতিস্থাপন ও বন্ধ্যাত্বের সমাধানে এই আবিষ্কার হতে পারে এক নতুন দিগন্তের সূচনা।

আজ যা কেবল একটি পরীক্ষাগারে গঠিত ভ্রূণ, আগামীকাল সেটাই হয়ত হাজারো প্রাণ রক্ষার হাতিয়ার হয়ে উঠবে।

হ্যাপী

×