
ছবি: প্রতীকী
ডিমেনশিয়া মানেই ভুলে যাওয়া—এই প্রচলিত ধারণা অনেক সময় রোগ শনাক্তে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কারণ, ডিমেনশিয়ার শুরু অনেক সময় হয় আচরণগত পরিবর্তনের মাধ্যমে—যা আমরা ভুলভাবে স্ট্রেস, হতাশা বা বার্ধক্যজনিত সমস্যা বলে ধরে নিই। এতে করে রোগ শনাক্ত ও চিকিৎসা শুরুতে দেরি হয়, ফলে সুযোগ নষ্ট হয় প্রয়োজনীয় যত্ন ও পরিকল্পনা নেওয়ার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিমেনশিয়ার প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে দেখা দিতে পারে সন্দেহপ্রবণতা, আগ্রহহীনতা, অতিরিক্ত মেজাজ পরিবর্তন, সহানুভূতির অভাব এবং একই কাজ বারবার করার প্রবণতা। এই আচরণগুলো মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল লোবের ক্ষতির ফলে দেখা দেয়, যা সাধারণত স্মৃতিভ্রষ্টতার আগেই শুরু হয়।
আচরণ বদলে যায়, অথচ কেউ বুঝতে পারে না
অনেক সময় দেখা যায়, শান্ত স্বভাবের একজন মানুষ হঠাৎ করে পরিবারে রেগে যাচ্ছেন, কোমলমতি একজন দাদি হঠাৎ করে কথাবার্তায় রুক্ষ বা নিষ্ঠুর হয়ে উঠেছেন, বা একজন দায়িত্বশীল সহকর্মী আচমকাই সময় মেনে অফিসে আসছেন না, সহকর্মীদের ওপর চেঁচামেচি করছেন। সাধারণত এগুলোকে আমরা মানসিক চাপ, সম্পর্কের টানাপোড়েন বা অবসাদ বলে ধরে নিই—কিন্তু এর পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারে ডিমেনশিয়া।
ফ্রন্টোটেম্পোরাল ডিমেনশিয়ার (FTD) ক্ষেত্রে এই ধরনের আচরণগত পরিবর্তন অনেক আগে থেকেই দেখা যায়, এমনকি স্মৃতি সমস্যার আগেই। ৬৫ বছরের কম বয়সীদের মধ্যেও এটি হতে পারে।
অকারণে সন্দেহপ্রবণতা
ডিমেনশিয়ার শুরুর দিকে রোগীরা অনেক সময় পরিবারের সদস্যদের ওপর সন্দেহ করতে শুরু করেন—ধরে নেন কেউ চুরি করছে, জীবনসঙ্গী প্রতারণা করছে কিংবা অন্যরা তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এটি মস্তিষ্কের তথ্য বিশ্লেষণের অক্ষমতার ফল। বিশেষ করে লুই বডি ডিমেনশিয়া বা আলঝেইমার রোগে এমন আচরণ বেশি দেখা যায়।
আগ্রহহীনতা বা নিষ্ক্রিয়তা
প্রিয় শখ-আহ্লাদ, নাতি-নাতনিদের সঙ্গে সময় কাটানো কিংবা পছন্দের বই পড়া থেকেও সরে আসেন অনেকেই। এটিকে অনেকে অলসতা বা বিষণ্নতা ভেবে ভুল করেন। কিন্তু বাস্তবে এটি ডিমেনশিয়াজনিত আগ্রহহীনতা, যার পেছনে থাকে স্নায়বিক কারণ।
হঠাৎ করে মেজাজের পরিবর্তন
ডিমেনশিয়ার প্রভাব পড়ে আবেগ নিয়ন্ত্রণে। ফলে বিনা কারণে রাগ, কান্না বা বিরক্তি দেখা দিতে পারে। পরিবেশের সামান্য পরিবর্তন—যেমন আওয়াজ বা সময়সূচির হেরফের—রোগীর মধ্যে অপ্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে।
সহানুভূতির অভাব
একসময় যারা ছিলেন খুব সহানুভূতিশীল ও আবেগপ্রবণ, ডিমেনশিয়ার প্রভাবে তারাই হয়ে উঠতে পারেন উদাসীন। এমনকি কেউ কাঁদছে, কষ্টে আছে—তাতেও তারা তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখান না। এটি মানসিক শূন্যতা নয়, বরং স্নায়বিক ক্ষতির লক্ষণ।
একই কাজ বারবার করা
দরজার লক বারবার চেক করা, অপ্রয়োজনীয় জিনিস জমিয়ে রাখা, কিংবা নির্দিষ্ট রুটিন বা অভ্যাসে অতি-নির্ভরশীল হয়ে পড়া—এগুলোও হতে পারে ডিমেনশিয়ার সূচনালগ্নের লক্ষণ।
কেন এই লক্ষণগুলো নজর এড়িয়ে যায়?
এই আচরণগত পরিবর্তনগুলোকে সাধারণত চিকিৎসাজনিত সমস্যা হিসেবে না দেখে ব্যক্তিগত বা আবেগজনিত সংকট হিসেবে দেখা হয়। ফলে রোগী নিজের সমস্যার কথা বুঝতে পারেন না, পরিবারের ওপরই পড়ে দায়িত্ব—এমনকি সেটি অস্বস্তিকর হলেও।
শুরুতেই শনাক্ত হলে যা করা সম্ভব
যদিও ডিমেনশিয়ার স্থায়ী চিকিৎসা নেই, তবে শুরুর দিকে শনাক্ত হলে সঠিক যত্ন, পরিকল্পনা এবং চিকিৎসার মাধ্যমে রোগের অগ্রগতি ধীর করা সম্ভব। এতে রোগীর নিজেই নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ থাকে, আর পরিবারও সহজে সহানুভূতির জায়গা থেকে পাশে দাঁড়াতে পারে।
কী করবেন সন্দেহ হলে?
আপনার পরিচিত কেউ আচরণগত পরিবর্তনের পাশাপাশি ভুলোমন, একাকিত্ব বা বিভ্রান্তিতে ভুগলে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন। মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। সময় থাকতে রোগ শনাক্ত হলে, জীবন বদলে যেতে পারে।
নোট: এই প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র তথ্য দেওয়ার উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে। এটি কোনো চিকিৎসা পরামর্শ, রোগ নির্ণয় বা চিকিৎসার বিকল্প নয়। উপসর্গ দেখা দিলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।
রাকিব