
ছবি: সংগৃহীত
কিডনিতে পাথর হওয়া একটি যন্ত্রণাদায়ক ও ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্য সমস্যা, যা বিশ্বব্যাপী লাখো মানুষকে প্রভাবিত করছে। প্রস্রাবে থাকা অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম, অক্সালেট ও ইউরিক অ্যাসিড একত্রিত হয়ে তৈরি করে এই কঠিন খনিজ স্ফটিক, যা কিডনিতে আটকে থেকে তীব্র ব্যথা, প্রস্রাবে সমস্যা এবং জটিল ক্ষেত্রে কিডনি ক্ষতির কারণ হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জিনগত কারণ, চিকিৎসা ইতিহাস এবং পানি কম খাওয়ার পাশাপাশি, খাদ্যাভ্যাস কিডনির পাথর গঠনের অন্যতম প্রধান কারণ। আবার সঠিক ডায়েট মেনেই এই পাথর গঠনের ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব।
কীভাবে কিডনিতে পাথর তৈরি হয়?
যখন শরীর পর্যাপ্ত পানি না পায়, তখন প্রস্রাব ঘন হয়ে যায় এবং এতে থাকা খনিজ উপাদান যেমন ক্যালসিয়াম, অক্সালেট বা ইউরিক অ্যাসিড একত্র হয়ে স্ফটিক তৈরি করে। প্রস্রাবে পর্যাপ্ত সাইট্রেট না থাকলে (যা সাধারণত স্ফটিক গঠন প্রতিরোধ করে), তখন এই ছোট স্ফটিকগুলি বড় পাথরে পরিণত হয়।
কিডনির পাথরের প্রকারভেদ:
ক্যালসিয়াম অক্সালেট পাথর: সবচেয়ে সাধারণ। ক্যালসিয়াম ও অক্সালেটের মাত্রা বেশি হলে গঠিত হয়।
ইউরিক অ্যাসিড পাথর: মূলত বেশি পরিমাণ লাল মাংস বা অঙ্গপ্রত্যঙ্গজাত খাবার খেলে হয়।
স্ট্রুভাইট পাথর: প্রস্রাবের সংক্রমণের কারণে হয়।
ক্যালসিয়াম ফসফেট পাথর: প্রস্রাবের উচ্চ পিএইচ এবং মেটাবলিক সমস্যা থেকে সৃষ্টি হয়।
সিস্টিন পাথর: জেনেটিক কারণে সিস্টিন অতিরিক্ত প্রস্রাবে নিঃসৃত হলে তৈরি হয়।
কিডনিতে পাথর তৈরির ঝুঁকি বাড়ায় এমন ১০টি খাবার:
1. পালং শাক – উচ্চমাত্রার অক্সালেট রয়েছে
2. বিট – রক্তে অক্সালেট বাড়ায়
3. বাদাম ও বাদামের মাখন – আমন্ড, চিনা বাদাম ইত্যাদি অক্সালেটসমৃদ্ধ
4. চকলেট – বিশেষ করে ডার্ক চকলেট
5. ব্ল্যাক টি – অতিরিক্ত অক্সালেট সরবরাহ করে
6. লাল মাংস – ইউরিক অ্যাসিড বাড়ায়
7. অতিরিক্ত লবণ – প্রস্রাবে ক্যালসিয়াম নিঃসরণ বাড়ায়
8. কোলা জাতীয় পানীয় – ফসফরিক অ্যাসিড রয়েছে
9. প্রসেসড খাবার – স্যুপ, চিপস, প্যাকেটজাত খাবার
10. রুবার্ব – প্রচণ্ড পরিমাণ অক্সালেট থাকে
✅ কিডনির পাথর প্রতিরোধে সহায়ক ১০টি খাবার:
1. পানি – প্রতিদিন ২-৩ লিটার পানি পান করুন
2. লেবু, কমলা, মাল্টা – সাইট্রেট সরবরাহ করে পাথর প্রতিরোধ করে
3. দুধ, দই, পনির – খাবারের মাধ্যমে ক্যালসিয়াম গ্রহণ করুন
4. কলা – পটাশিয়াম সমৃদ্ধ, অক্সালেট কম
5. যবের পানি (Barley Water) – প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়ায়, ছোট স্ফটিক ভাঙে
6. শসা – পানিযুক্ত ও অক্সালেট কম
7. হোল গ্রেইন (ওটস, ব্রাউন রাইস) – ম্যাগনেশিয়াম সরবরাহ করে
8. তুলসী পাতা – ইউরিক অ্যাসিড কমায়
9. তরমুজ – পটাশিয়াম ও পানিতে ভরপুর
10. ডালিম – অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পটাশিয়াম সমৃদ্ধ, কিডনি সুস্থ রাখে
অতিরিক্ত সতর্কতা ও প্রতিরোধের টিপস:
🔹 ভিটামিন C সাপ্লিমেন্ট অতিরিক্ত না খাওয়া
🔹 ক্যালসিয়াম খাবার থেকে গ্রহণ করুন, ট্যাবলেট নয়
🔹 প্রাণিজ প্রোটিন (মাংস, ডিম) সীমিত করুন
🔹 নিয়মিত ব্যায়াম করুন
🔹 প্রস্রাবের pH পর্যবেক্ষণ করুন, বিশেষ করে যারা আগে পাথর ভুগেছেন
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?
যদি হয়—
🔹 তীব্র কোমর বা পেটের ব্যথা
🔹 প্রস্রাবে রক্ত বা দুর্গন্ধ
🔹 জ্বর বা কাঁপুনি
🔹 বমি বা বমি বমি ভাব
তখন দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
সতর্ক থাকুন, সচেতন হোন – সঠিক খাবার বেছে নিয়ে কিডনির পাথরের ঝুঁকি এড়িয়ে চলুন।
Mily