ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২

এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব 

ভারতে পালিয়ে থাকা গণহত্যাকারী হাসিনার সরাসরি মদদে গোপালগঞ্জে এনসিপির উপর হামলা হয়েছে

প্রকাশিত: ০১:৩৭, ১৯ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০১:৩৮, ১৯ জুলাই ২০২৫

ভারতে পালিয়ে থাকা গণহত্যাকারী হাসিনার সরাসরি মদদে গোপালগঞ্জে এনসিপির উপর হামলা হয়েছে

গোপালগঞ্জে এনসিপি'র জুলাই পদযাত্রার উপর হামলা এবং নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ এর বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গত ১লা জুলাই থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত সারাদেশে জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে ৪টি বিভাগ ও ৩২ টি জেলায় পদযাত্রা সম্পন্ন করে গত ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে প্রবেশ করে।‌ পদযাত্রা সফল করে ফেরার পথে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্র শস্ত্র , বোমাসহ গাড়ি বহরের উপর সশস্ত্র হামলা চালায়। যা স্পষ্টত গত জুলাই অভ্যুত্থানে নিষিদ্ধ আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গণহত্যার পুনরাবৃত্তি । এনসিপি'র কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আকতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলমসহ গণ অভ্যুত্থানের বীরদেরকে হত্যার উদ্দেশ্যেই এই হামলা চালিয়েছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। এছাড়াও এই হামলাকে জাস্টিফাই করে কিছু বুদ্ধিজীবী বয়ান উৎপাদনের ঘৃণ্য চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। যা ফ্যাসিস্ট আমলেও আমরা দেখেছি। গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্টের পক্ষে এজাতীয় বয়ান উৎপাদন গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে অভ্যুত্থানকারী ছাত্র জনতা কোনভাবেই মেনে নেবে না। 

আজ ১৮ জুলাই রোজ শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাব চত্বরে কেন্দ্রীয় সংগঠক এম এম শোয়াইব ও এস এম শাহরিয়ার এর সঞ্চালনায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, ভারতে পালিয়ে থাকা গণহত্যাকারী পতিত হাসিনার সরাসরি মদদে এই হামলা চালানো হয়েছে। শুধু তাই নয় ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব জয়সোয়ালের বক্তব্যে এটাও সন্দেহ করার অবকাশ রয়েছে এই হামলার পিছনে ভারতের হাত থাকতে পারে। তিনি আরো বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এখন পর্যন্ত এই ধোঁয়াশা নিয়ে কোন বিবৃতি দেয় নি। যা আমাদেরকে আরো ভাবাচ্ছে। অবিলম্বে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের এহেন প্রটোকল বহির্ভূত বক্তব্যের বিষয়ে স্পষ্ট করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের প্রধান সমন্বয়কারী নিজাম উদ্দিন বলেন, গোপালগঞ্জে এনসিপি'র পদযাত্রায় হামলা সরকার কোনভাবেই দায় এড়াতে পারে না। যা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্যে প্রতীয়মান হয়েছে। তিনি বলছেন, গোপালগঞ্জের ঘটনায় গোয়েন্দা তথ্য ছিল, তবে এত পরিমাণ হবে সে তথ্য ছিল না। এর থেকে প্রমাণিত হয় যে, সরকারের দায়িত্বশীলতার প্রতিফলন ঘটেনি। যা দায়িত্বে অবহেলার সুস্পষ্ট প্রমাণ। গণ অভ্যুত্থান পরবর্তী গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের এমন দায়িত্বহীনতার কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। 

প্রধান বক্তার বক্তব্যে কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব ও ঢাকা মহানগর উত্তর এর প্রধান সমন্বয়কারী আকরাম হোসেন বলেন গোপালগঞ্জে যে হামলা হয়েছে এটা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। জুলাই গণ অভ্যুত্থান পরবর্তী এজাতীয় হামলা এর আগেও পতিত ফ্যাসিস্টরা করার চেষ্টা করেছে নানাভাবে। গণহত্যার দৃশ্যমান বিচার নিশ্চিত না করায় নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সকল পর্যায়ের সন্ত্রাসীরা সারাদেশে এমন অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। তিনি উদ্বেগের সাথে বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এমন পরিস্থিতিতে কোনভাবেই একটি নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন আয়োজন সম্ভব না। ফলে মোলিক সংস্কার ও বিচার ব্যতিত দেশে কোনভাবেই একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বাস্তবায়ন সম্ভব না।‌ অবিলম্বে জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। অন্যথায় বিপ্লবী গণ অভ্যুত্থানকারী ছাত্র জনতা আবারো রাজপথে নেমে আসবে। তিনি আরো বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি আবারো সীমান্তে ভারতীয় বাহিনী নির্বিচারে আমাদের নাগরিকদের হত্যা করছে। তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এহেন আচরণ আমরা মুক্তিকামী বাংলাদেশিরা কোনভাবেই মেনে নেব না। 

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় সংগঠক ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ এর যুগ্ম সমন্বয়কারী মোস্তাক আহমেদ শিশির বলেন, আমরা গণ অভ্যুত্থানের পর থেকেই দেখছি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দানকারী হাসনাত, সারজিসদেরকে হত্যার নানামুখী তৎপরতা ও ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে গণহত্যাকারী পতিত ফ্যাসিস্টরা। গোপালগঞ্জে এই হামলাও তারই পুনরাবৃত্তির বহিঃপ্রকাশ। নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও বিচারের দৃশ্যমান উন্নতি না হওয়ায় বারংবার এমন ঘটনা ঘটছে। ফলে অন্তবর্তীকালীন সরকারকে বৈধতা দেওয়ার অন্যতম কমিটমেন্টকেই তারা প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আমরা অবিলম্বে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসরদের গ্রেফতার ও বিচার বাস্তবায়ন করার দাবি জানাচ্ছি। 

বিক্ষোভ সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন মহানগর উত্তর এর সমন্বয়কারী আবদুল্লাহ আল মনসুর, মুনতাসির মাহমুদ, খন্দকার খালেদা আক্তার, সরদার আমিরুল ইসলাম, মাঈনুল ইসলাম, মহানগর দক্ষিণ এর সমন্বয়কারী মাওলানা সানাউল্লাহ,খান মোহাম্মদ মুরসালিন, মোল্লা ফারুক এহসান, ইসরাত জাহান, রাকিবুল ইসলাম, ফয়সাল আহমেদ। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের বিভিন্ন থানা সমন্বয়কারী বৃন্দ।

Jahan

×