ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২

বিএনপির কেন্দ্রীয় চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম

গণঅভ্যুত্থানের ঐক্য টিকিয়ে রাখতে না পারলে শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা হবে

নুরউদ্দীন খান সাগর, চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ২৩:৩৯, ১৮ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ২৩:৪০, ১৮ জুলাই ২০২৫

গণঅভ্যুত্থানের ঐক্য টিকিয়ে রাখতে না পারলে শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা হবে

ছবি: জনকণ্ঠ

বিএনপির কেন্দ্রীয় চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, "জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান ছিল এ দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়। যারা তখন বুকের রক্ত দিয়ে শাসকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন, তারা কোনো দল-মতের জন্য নয়, দেশের মানুষের অধিকার ও ভবিষ্যতের জন্য আত্মত্যাগ করেছিলেন। কিন্তু আজ, সেই শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পরিবর্তে আমরা যদি তাদের চেতনা ও ঐক্য ধরে রাখতে না পারি, তাহলে সেটা হবে এক সরাসরি বেইমানি।"

তিনি বলেন, "আজ যখন আবারও দেশে একদলীয় শাসনের নতুন ছক আঁকা হচ্ছে, তখন আমাদের আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে। রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়িয়ে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটিয়ে একটি মহল ভিত্তিহীন অজুহাতে আবারও একটি প্রহসনের নির্বাচন সাজাতে চায়। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই— জনগণকে বাইরে রেখে, শহীদদের আত্মত্যাগকে অবমূল্যায়ন করে আর কোনো প্রহসনের নির্বাচন এই দেশের মাটিতে হতে দেওয়া হবে না।"

তিনি আরও বলেন, "বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতার লোভে রাজনীতি করে না। আমাদের রাজনীতি দেশের মানুষের ভোটাধিকার ও বেঁচে থাকার অধিকারের জন্য। শহীদদের স্বপ্ন ছিল একটি বৈষম্যহীন, সন্ত্রাসমুক্ত, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। তারেক রহমানের দূরদর্শী নেতৃত্বে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য বিএনপি বদ্ধপরিকর। শহীদদের স্বীকৃতি ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদা আদায়ের মধ্য দিয়ে বিএনপি শহীদ পরিবারের পাশে থাকবে।"

শহীদদের হত্যার বিচার এখনো না হওয়াকে রাষ্ট্রের ব্যর্থতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সেই বিচার আদায় করাই হবে বিএনপির আগামী দিনের প্রধান লক্ষ্য।

ঐতিহাসিক জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি চট্টগ্রাম মহানগর এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে  কালো ব্যাচ ধারণ ও মৌন মিছিল কর্মসূচির সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন ।

শুক্রবার বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটে নগরীর কাজীর দেউড়িস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে নুর আহমেদ সড়কে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

সংক্ষিপ্ত সমাবেশের পর কালো ব্যাজ ধারণ করে মৌন মিছিল বের করেন নেতাকর্মীরা। মিছিলটি নুর আহমেদ সড়ক থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে নিউমার্কেট মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। মৌন মিছিলে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন, যা পুরো নগরজুড়ে গণ-আন্দোলনের আবহ সৃষ্টি করে।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান। সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী বেলাল উদ্দিন।

প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন। তিনি বলেন," 'জুলাই বিপ্লব' আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক সাহসী অধ্যায়, যেখানে ছাত্র ও জনতার শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দুঃশাসনের বিরুদ্ধে একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছিল। এই আন্দোলনের শহীদরা ছিলেন জনগণের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আত্মোৎসর্গকারী যোদ্ধা। কিন্তু আজও তাঁদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই। আমরা যখন তাঁদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলি, তাঁরা ব্যথাভরা কণ্ঠে শুধু বলেন— “আমার সন্তানের রক্তের মূল্য কি এই নীরবতা?” এই প্রশ্ন আমাদের বিবেককে কাঁপিয়ে দেয়। শহীদদের আত্মত্যাগের মর্যাদা ও বিচারের দাবিই আজ আমাদের আন্দোলনের মূল প্রেরণা।"

তিনি আরও বলেন, জাতি এখন একটি নতুন নির্বাচনকালীন সময়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। নির্বাচনের পূর্ব ঘোষণা এসেছে, কিন্তু জনগণের আস্থা ও গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করতে হলে প্রয়োজন একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থা। শহীদদের আত্মত্যাগ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়— জনগণের ভোটাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ছাড়া কোনো গণতন্ত্র টিকে থাকতে পারে না। তাই ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও নিরপেক্ষ প্রশাসনিক ব্যবস্থার মাধ্যমে সত্যিকারের নির্বাচন আয়োজনে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

তিনি  বলেন, জুলাই শহীদরা আমাদের হৃদয়ে আজীবন বেঁচে থাকবেন। আগামীর বাংলাদেশ হবে সন্ত্রাসমুক্ত, মাদকমুক্ত, বৈষম্যহীন এক নতুন বাংলাদেশ। তারেক রহমানের নেতৃত্বে ও নির্দেশনায়, জুলাই শহীদদের স্বীকৃতি ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে বিএনপি শহীদ পরিবারের পাশে থাকবে। এই অঙ্গীকার নিয়েই আমরা সামনে এগিয়ে যাবো।

সভাপতির বক্তব্যে নগর বিএনপির সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান বলেন, আজকে এই দুঃসহ সময়েও যারা শহীদদের কথা স্মরণ করছেন, তাদেরকেই দেশের ভবিষ্যৎ পরিবর্তনের দায়িত্ব নিতে হবে। শহীদদের রক্ত শুধু স্মৃতির অংশ নয়— এটি আমাদের রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা, নৈতিক অনুপ্রেরণা। তাই শহীদদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে হলে আমাদের আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমাদের আন্দোলন আর বিলম্ব করার সুযোগ নেই। এখনই সময় জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার।

সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপির শ্রম সম্পাদক এম এ নাজিম উদ্দিন, সাবেক নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, নগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক অ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তার, সৈয়দ আজম উদ্দিন, হারুন জামান, নিয়াজ মোহাম্মদ খান, শাহ আলম, আর ইউ চৌধুরী শাহীন, শওকত আজম খাজা, ইয়াসিন চৌধুরী লিটন, আহামেদুল আলম চৌধুরী রাসেল, শিহাব উদ্দিন মুবিন ও মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু।

এছাড়াও বক্তব্য দেন নগর বিএনপির সদস্য ইকবাল চৌধুরী, এম এ হান্নান, এস এম আবুল ফয়েজ, আবুল হোসেন, ইস্কান্দর মির্জা, জাহাঙ্গীর আলম দুলাল, মুজিবুল হক, মোহাম্মদ মহসিন, মোহাম্মদ খোরশেদ আলম, মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, মশিউর আলম স্বপন, মোশারফ হোসেন ডিপটি, মোহাম্মদ জাফর আহম্মদ, এ কে খান, গাজী আইয়ুব, মাহাবুব রানা, নূর উদ্দিন হোসেন নুরু, হানিফ সওদাগর, মোহাম্মদ আবু মুসা ও মোহাম্মদ আজম।

সভায় অংশগ্রহণ করেন নগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মোশারফ হোসেন দিপ্তি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক বেলায়েত হোসেন বুলু, সদস্য সচিব জমির উদ্দিন নাহিদ, ছাত্রদলের সভাপতি মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম তুহিন, মহিলা দলের সভানেত্রী মনোয়ারা বেগম মনি, তাঁতি দলের আহ্বায়ক সেলিম হাফেজ ও সদস্য সচিব মনিরুজ্জামানসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিপুলসংখ্যক নেতৃবৃন্দ।

নেতাকর্মীরা বলেন, দেশে আজ যে অস্থিরতা চলছে, তা আর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নেই। একটি গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের মানুষ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে চায়। সরকারের উচিত হবে অবিলম্বে ক্ষমতা ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে একটি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজন করা, অন্যথায় আন্দোলনের যে ঢেউ উঠেছে, তা আর ঠেকানো যাবে না। নেতারা তারেক রহমানের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

Mily

×