ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২

১০ লাখ লোক সমাগমে ব্যাপক প্রস্তুতি

ঢাকায় জামায়াতের জাতীয় সমাবেশ আজ

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০০:১৯, ১৯ জুলাই ২০২৫

ঢাকায় জামায়াতের জাতীয় সমাবেশ আজ

.

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আজ শনিবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে স্মরণকালের বৃহত্তম জাতীয় সমাবেশ। সমাবেশে সারাদেশ থেকে অন্তত ১০ লাখ লোকের সমাবেশ ঘটাতে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। নগদ টাকায় রিজার্ভ করা হয়েছে বেশ কয়েকটি ট্রেন ও লঞ্চ। ভাড়া করা হয়েছে দশ হাজারের বেশি বাস।

সারাদেশে ব্যানার, ফেস্টুন, মিছিল, পথসভা, লিফলেট বিতরণ ও মাইকিং করে চালানো হয়েছে ব্যাপক প্রচার। জুলাই সনদ ঘোষণা, গণহত্যার বিচার, প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ সাত দফা দাবিতে আয়োজিত এ জাতীয় সমাবেশে সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এ সমাবেশে।

জামায়াতের ইতিহাসে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রথমবারের মতো আয়োজিত জাতীয় এই সমাবেশে আহত জুলাই যোদ্ধাদের পাশাপাশি শহীদ পরিবারের সদস্যদের আম›ত্রণ জানানো হয়েছে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে। সমাবেশের কারণে রাজধানী ঢাকার বাসিন্দাদের চলাচলে সম্ভাব্য ভোগান্তির জন্য ঢাকাবাসীর কাছে আগাম দুঃখ প্রকাশ করেছেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
জাতীয় সমাবেশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার জানান, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সব রাজনৈতিক দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সমাবেশে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। উত্তরবঙ্গ থেকে প্রায় ১৫০০ বাস, চট্টগ্রাম-ঢাকা ও রাজশাহী-ঢাকা রুটে বিশেষ ট্রেন এবং নৌপথে লঞ্চ রিজার্ভেশন দেওয়া হয়েছে। শৃঙ্খলা রক্ষায় বিশেষ পোশাকে মাঠে মোতায়েন থাকবে ডিউটি কার্ডধারী ৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক।

থাকবে জরুরি পানি-বিদ্যুৎ সরবরাহ, স্ট্যান্ডবাই জেনারেটর, অতিথিদের জন্য বিশ্রামাগার, গ্রিনরুম, বৃষ্টি হলে পানি নির্গমনের বিশেষ ব্যবস্থাও। ঢাকা মহানগর ও আশপাশের জেলা থেকে আগতদের জন্য ১৫টি পার্কিং স্পট নির্ধারণ করা হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতরে ও বাইরে থাকবে ১৫টি মেডিক্যাল বুথ, প্রতিটিতে এমবিবিএস ডাক্তার, জরুরি ওষুধ এবং অ্যাম্বুলেন্স সুবিধা।
তিনি জানান, সমাবেশের সম্পূর্ণ কার্যক্রম ড্রোন ও আধুনিক ক্যামেরা দিয়ে ধারণ করা হবে। ফেসবুক, ইউটিউব ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাইভ স¤প্রচার করা হবে, মাঠে থাকবে বড় আকারের ত্রিশটি এলইডি স্ক্রিন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সঙ্গে বৈঠক করে ট্রাফিক, নিরাপত্তা ও জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে সমন্বয় করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, পুলিশ কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিতভাবে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে সহযোগিতার আশ্বাস পেয়েছে দলটি। পাড়া-মহল্লা, শপিংমল ও বিভিন্ন স্থানে লিফলেট, পোস্টার ও ব্যানারের মাধ্যমে চলছে প্রচার। এছাড়া ভ্রাম্যমাণ মাইকিং করা হচ্ছে। সাংস্কৃতিক দল নাটিকা, গানের সুর ও মঞ্চনাটকের মাধ্যমে সমাবেশের বার্তা জনগণের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে।
আয়োজক সূত্রে জানা যায়, দলীয়ভাবে ১০ লাখ লোকের সমাবেশ ঘটানোর ঘোষণা করা হলেও প্রকৃত উপস্থিতি আরও অনেক বেড়ে যেতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে এটিই হবে স্মরণকালের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় গণজমায়েত। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসান মাহবুব জোবায়ের এ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জনসমাগম আশা করছি। এরই মধ্যে ১০ হাজারের বেশি বাস, একাধিক স্পেশাল ট্রেন এবং নৌযান রিজার্ভ করা হয়েছে। তারা আশা করছেন, দুপুর ২টায় আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হলেও সকাল ১০ টার আগেই পুরো সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পরিপূর্ণ হয়ে যাবে। এজন্য সকাল ১০টায় শুরু হবে অনানুষ্ঠানিক কার্যক্রম। এ সময় সংগীত, নাটিকা, অভিনয়, আবৃত্তির মাধ্যমে আগন্তুকদের বিনোদন দেবে সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠীসহ অন্তত ২০টি সাংস্কৃতিক সংগঠন।
যে সাত দফা দাবিতে জামায়াত এই জাতীয় সমাবেশের আয়োজন করছে তা হলো ১. ২০২৪ সালের ৫ আগস্টসহ পূর্ববর্তী গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করা ২. রাষ্ট্রের সর্বস্তরে মৌলিক সংস্কার আনা ৩. ঐতিহাসিক জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন ৪. জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পুনর্বাসন ৫. পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন ৬. প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা এবং ৭. রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য সমান সুযোগ ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা। সমাবেশের মাধ্যমে ৭ দফার পক্ষে গণজাগরণ সৃষ্টির পাশাপাশি এই মঞ্চ থেকেই আগামীদিনের রাজনীতির দিকনির্দেশনা আসবে বলে আশা প্রকাশ করছেন জামায়াত নেতৃবৃন্দ।
স্মরণকালের ইতিহাসে বৃহত্তম এই জাতীয় সমাবেশের কারণে রাজধানীবাসী  দুর্ভোগে পড়তে পারেন আশঙ্কা করে এজন্য আগাম দুঃখ প্রকাশ করেছেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, আমরা ধারণা করছি রাজধানীতে বিপুল লোক সমাগম হবে। এতে কিছু যানজট ও জনদুর্ভোগ হতেই পারে। এজন্য আমরা আগেই দেশবাসীর কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি। তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছরে জামায়াত বারবার নির্যাতিত হয়েছে, রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করা হয়েছে। তবে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা রাজনৈতিক অধিকার চর্চার বাস্তব সুযোগ পেয়েছি। তাই ১৯ জুলাই রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সমাবেশের আয়োজন করেছি।
জাতীয় সমাবেশের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সবার জন্য রাজনৈতিক মাঠের সমতা (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) নিশ্চিত করা, জুলাই অভ্যুত্থানে নিহতদের বিচার ও আহতদের পুনর্বাসন, সাংবিধানিক ও নির্বাচনী সংস্কার, সংখ্যানুপাতিক ভোট ব্যবস্থা (পিআর সিস্টেম) চালুর দাবি, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা। তিনি জানান, সমাবেশ সফল করতে এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় ও মাঠপর্যায়ের বিভিন্ন কমিটি ও উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। তারা সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
 

প্যানেল মজি

×