
ছবিঃ সংগৃহীত
রাজস্থানে হৃদ্রোগে ৯ বছর বয়সী এক শিশুর মৃত্যুতে শোকের ছায়া। চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী প্রাচী কুমাওয়াত দুপুরে খাবার খেতে বসে হঠাৎ অচেতন হয়ে পড়ে যান এবং আর জ্ঞান ফিরে পাননি। সাধারণত হৃদ্রোগ বা হার্ট অ্যাটাক শুনলেই অনেকের মনে আসে মধ্যবয়সী কিংবা বৃদ্ধদের কথা। কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো, শিশুরাও হৃদ্রোগে আক্রান্ত হতে পারে—যদিও তা খুব বিরল। তবুও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা থাকলে সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব। জেনে নিন শিশুদের হৃদ্রোগ সম্পর্কে ৫টি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
১. শিশুদের হৃদ্রোগ বিরল হলেও অসম্ভব নয়
শিশুদের ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাক খুবই বিরল ঘটনা, কিন্তু তা হতে পারে। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাক সাধারণত ধমনিতে ব্লক হওয়ার কারণে হয়, যা বহুদিন ধরে ধীরে ধীরে জমা হওয়া প্লাকের ফলে ঘটে। কিন্তু শিশুদের হার্ট অ্যাটাক সাধারণত অন্য কারণ থেকে হয়, যেমন—
-
জন্মগত হৃদ্রোগ (Congenital Heart Disease): জন্ম থেকেই হৃদ্যন্ত্রের গঠনে সমস্যা থাকলে রক্ত সঞ্চালনে জটিলতা হয়।
-
সংক্রমণ ও প্রদাহ: ভাইরাসজনিত ইনফেকশন থেকে হার্টের পেশিতে প্রদাহ (Myocarditis) হতে পারে।
-
গুরুতর আঘাত: খেলার সময় বুকে তীব্র আঘাত হৃদ্যন্ত্রে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
-
জেনেটিক সমস্যা ও বিরল রক্তরোগ: কিছু রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা বা বংশগত রোগও হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
২. উপসর্গগুলো সবসময় স্পষ্ট হয় না
শিশুরা সবসময় তাদের শারীরিক সমস্যা বুঝিয়ে বলতে পারে না। কিছু লক্ষণ আছে, যেগুলোর প্রতি অভিভাবকদের সতর্ক হওয়া জরুরি:
-
শারীরিক পরিশ্রমের সময় বুকে ব্যথা
-
খেলার সময় হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাওয়া (Syncope)
-
অনিয়মিত বা দ্রুত হৃদস্পন্দন
-
শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
-
অতিরিক্ত দুর্বলতা বা ক্লান্তিভাব
-
ঠোঁট, আঙুল বা পায়ের ত্বকে নীলচে বা ধূসর রঙ
-
অকারণে ঘাম হওয়া
শিশুদের ক্ষেত্রে বাড়তি লক্ষণ:
-
খেতে না চাওয়া
-
অস্বাভাবিক রকমের রাগ বা কান্না (Irritability)
-
ওজন না বাড়া বা কমে যাওয়া
-
কোনও কারণ ছাড়াই ডায়রিয়া বা বমি
৩. শিশুদের হৃদ্রোগের কারণ আলাদা
প্রাপ্তবয়স্কদের মতো নয়, শিশুদের হৃদ্রোগের কারণ ভিন্ন। এর মধ্যে রয়েছে:
-
জন্মগত হৃদ্রোগ: হৃদ্যন্ত্র বা রক্তনালির গঠনে সমস্যা
-
কাওয়াসাকি রোগ (Kawasaki Disease): এটি রক্তনালির প্রদাহ সৃষ্টি করে, যা হার্টে প্রভাব ফেলে
-
ভাইরাসজনিত মায়োকার্ডাইটিস: হৃদ্পেশিতে প্রদাহ ও দুর্বলতা
-
অস্বাভাবিক ইলেকট্রিক্যাল রিদম: জন্ম থেকেই হৃদ্যন্ত্রের বৈদ্যুতিক ছন্দে সমস্যা থাকলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে
-
বংশগত বা অধিগ্রহণযোগ্য রোগ: রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা, বুকে আঘাত, অথবা বিরল রোগসমূহ
৪. দ্রুত শনাক্তকরণ ও চিকিৎসাই জীবন বাঁচাতে পারে
হৃদ্রোগের উপসর্গ দেখা দিলে সময়ক্ষেপণ না করে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া জরুরি। কী করবেন:
-
শিশু যদি হঠাৎ অচেতন হয় বা শ্বাস নিতে না পারে, তাৎক্ষণিকভাবে অ্যাম্বুলেন্স ডাকুন।
-
শিশুর শ্বাস বন্ধ হয়ে গেলে বা নাড়ি অনুভব না করলে সিপিআর (CPR) শুরু করুন—এটি বাঁচার সম্ভাবনা দ্বিগুণ বা তিনগুণ বাড়াতে পারে।
-
স্কুল বা খেলার মাঠে AED (Automated External Defibrillator) থাকলে তা ব্যবহার করুন।
-
শিশু সজাগ থাকলেও উপসর্গ থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন—বিশেষ করে যদি পরিবারে হার্টের রোগের ইতিহাস থাকে।
৫. প্রতিরোধ ও ঝুঁকি হ্রাস করা সম্ভব
শিশুদের জন্মগত বা বংশগত রোগ থাকলেও কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে:
-
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: বিশেষ করে যারা খেলাধুলায় অংশ নেয়
-
সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়াম: শিশুর ওজন ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে
-
পারিবারিক ইতিহাস জানা: পরিবারের হৃদ্রোগের ইতিহাস থাকলে সতর্ক থাকা জরুরি
-
চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা: হৃদ্রোগে আক্রান্ত শিশুরা যেন সময়মতো ওষুধ ও সঠিক চিকিৎসা পায়
-
নিরাপদ খেলার পরিবেশ: চিকিৎসক-নির্ধারিত বিধিনিষেধ ও সুরক্ষার ব্যবস্থা মানা
হৃদ্রোগ শুধুই বড়দের সমস্যা নয়—শিশুরাও ঝুঁকিতে থাকতে পারে। সচেতনতা, সতর্ক নজর এবং দ্রুত পদক্ষেপই পারে একটি শিশুর প্রাণ বাঁচাতে।
ইমরান