
হার্ট অ্যাটাক শব্দটা শুনলেই আমাদের মনে যা আসে, তা হলো বুকের তীব্র ব্যথা, বাম হাতে ঝিমঝিম বা শ্বাস নিতে কষ্ট। কিন্তু এমন একটি অদ্ভুত লক্ষণ রয়েছে, যেটা নিয়ে খুব কম মানুষই জানেন। আর আশ্চর্যের বিষয় হলোএমনকি অভিজ্ঞ হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ড. উইলিয়াম উইলসনও এই লক্ষণ বুঝতে পারেননি, যখন তিনি নিজেই হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হন।ড. উইলসন নিজেই হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়েছিলেন, বলেন "আমি ভাবতেও পারিনি, এটা আমার সঙ্গে ঘটছে"
ড. উইলসনের বয়স তখন ৬৩। শরীরচর্চার সময় হঠাৎ বুকে এক ধরনের চাপ অনুভব করেন তিনি। ভিডিওতে নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, “ব্যথা ছিল না, কিন্তু বুকটা ভারি লাগছিল, এক ধরনের অস্বস্তিকর চাপ। কোনো ছুরির মতো ধারালো ব্যথা নয়, বরং চাপ দিয়ে বসে আছে এমন অনুভূতি।”
তারপর যা হলো, সেটাই সবাইকে চমকে দেয়। তিনি বলেন, “হঠাৎ এমন একটা অনুভূতি হলো যে এখনই আমাকে বাথরুমে যেতে হবে। আর সেটা জিমেই।”
হার্ট অ্যাটাক, আর হঠাৎ বাথরুমে যাওয়ার তীব্র চাপ কি সম্পর্ক?
প্রথমে শুনলে অদ্ভুতই মনে হবে। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, হার্ট অ্যাটাকের সময় শরীর এক ধরনের বিপদ সংকেত পাঠাতে শুরু করে। হার্টে রক্ত চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হলে, শরীর চরম স্ট্রেসে পড়ে যায়। তখন আমাদের স্নায়ুতন্ত্র, বিশেষ করে অটোনোমিক নার্ভ সিস্টেম, হঠাৎ করে এমন প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে যার মধ্যে হঠাৎ প্রস্রাব বা মলত্যাগের প্রবল তাগিদও থাকতে পারে।
এই অনুভূতিটা এতটাই বিভ্রান্তিকর যে, অনেকে ধরেই নেন এটা বুঝি পেটের সমস্যা, নাকি কোনো খাবার খারাপ লেগেছে। অথচ সেটাই হতে পারে হার্ট অ্যাটাকের প্রাথমিক ইঙ্গিত।
আপনি যদি হঠাৎ করে খুব দুর্বলতা অনুভব করেন, ঘামতে থাকেন, মাথা ঘোরে, বুক ভার লাগছে, আর এর সঙ্গে হঠাৎ বাথরুমে যাওয়ার প্রবল চাপ তৈরি হয় তখন সেটাকে সাধারণ খাবারের সমস্যা ভেবে বসে থাকবেন না। সেটা হতে পারে আপনার হার্টের বিপদ সংকেত।
তবে এই প্রসঙ্গে লুধিয়ানার সিবিয়া মেডিকেল সেন্টারের পরিচালক ও কার্ডিয়োলজিস্ট ড. এস এস সিবিয়া জানিয়েছেন, “সব হার্ট অ্যাটাক রোগীর এমন বাথরুম তাগিদ থাকবে এমন নয়। কিন্তু কারও যদি হৃদ্রোগ থাকে এবং মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত চাপ দেয়, তখন ‘ভ্যাগাল রেসপন্স’ হতে পারে, যা রক্তচাপ ও হৃদস্পন্দন হঠাৎ কমিয়ে ফেলে এবং অবস্থাকে আরও খারাপ করে দেয়।”
তিনি আরও বলেন, “তবে হার্ট অ্যাটাকের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ যেমন বুকের ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা বা হাত-চোয়ালে ব্যথা ছড়িয়ে পড়া এসব লক্ষণ অবহেলা করা একেবারেই উচিত নয়।”
নিজের শরীরের কথা শুনুন
শরীর সবসময়ই আমাদের সংকেত দেয়, কিন্তু আমরা অনেক সময় সেগুলো উপেক্ষা করি। কিছু লক্ষণ হয়তো অস্বাভাবিক, অস্বস্তিকর বা এমনকি বিব্রতকরও মনে হতে পারে। কিন্তু জীবন রক্ষার জন্য সেগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।
সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়াই পারে আপনাকে কিংবা আপনার প্রিয়জনকে বড় বিপদ থেকে রক্ষা করতে। মনে রাখবেন, হার্ট অ্যাটাক সবসময় কাহিল ব্যথা নিয়ে আসে না কখনো কখনো তা আসে চুপিসারে, অদ্ভুত এক অনুভূতির মোড়কে।
সূত্র:https://tinyurl.com/s4v4te8r
আফরোজা