
“আমি বাড়ি ফিরব না। আমি আমার ভাইদের, আমি আমার শহীদ ভাইদের রক্তের সাথে বেইমানি করব না”—এমন হৃদয়বিদারক আক্ষেপে কণ্ঠ ধরে এসেছিল এক আন্দোলনরত শিক্ষার্থীর। গত বছরের জুলাইয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন ও সহপাঠীদের ওপর চালানো সহিংস হামলার প্রতিবাদে এই কথাগুলো বলেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই দাঁড়িয়ে, চোখে কান্না এবং কণ্ঠে ক্ষোভ নিয়ে ওই শিক্ষার্থী বলেন, “এই ক্যাম্পাস ছেড়ে আমি বাড়িতে যেতে পারব না, বাড়িতে আমি থাকতে পারব না। আমি দেশের যে কোথাও থাকব, কিন্তু এই ক্যাম্পাসে আমি নিরাপদ না।”
তিনি অভিযোগ করেন, উপাচার্য এবং প্রক্টরিয়াল টিম আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। “আমাদেরকে ভিসি নিরাপত্তা দিতে পারে নাই, প্রক্টর নিরাপত্তা দিতে পারে নাই,”—উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “এজন্য ক্যাম্পাসটা ছেড়ে দিচ্ছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়টা ছেড়ে দিচ্ছি।”
অসামান্য গর্ব নিয়ে এই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছিলেন বলে জানিয়ে তিনি বলেন, “অনেক স্বপ্ন নিয়ে, অনেক গর্ব নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা এসেছি। আমরা প্রত্যেকটা ছাত্র। কিন্তু আমাদের সাথে এরকম কলঙ্কিত ইতিহাস—আমি কোনদিন ভাবি নাই।”
গত বছরের জুলাইয়ে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন জোরদার হয়। এই আন্দোলনে অংশ নেওয়া বহু শিক্ষার্থী দমন-পীড়ন, গ্রেপ্তার এবং হামলার শিকার হন বলে অভিযোগ উঠে। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় শিক্ষাজগতে।
২০২৪ সালের জুলাই ছাত্রদের কাছে ছিল শুধু আন্দোলনের মাস নয়, বরং ছিল বেদনার, প্রতিবাদের, আত্মত্যাগের মাস। এবং সেই ছাত্রের আর্তনাদ হয়ে উঠেছিল সেই সময়ের এক ইতিহাস—এক প্রজন্মের আত্মকথন। তাদের নিরলস প্রচেষ্টায় ফ্যাসিবাদ সরকার দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছিল।
সানজানা