
১৮ জুলাই, জয়পুরহাটের পাঁচবিবি পৌরসভা ও আশেপাশের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্থাপন করা হয়েছিল দুইশরও বেশি সিসিটিভি ক্যামেরা। কিন্তু বর্তমানে এসব ক্যামেরার অধিকাংশই গায়েব হয়েছে। যার ফলে ভারত সীমান্তবর্তী পৌর এলাকায় বাড়ছে চুরি, ছিনতাই, হত্যাকাণ্ডসহ নানা অপরাধ। তবে খুব শিগগিরই নতুন করে সিসিটিভি ক্যামেরা আবারও লাগানোর প্রতিশ্রুতি দিলেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পাঁচবিবি পৌরসভা বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার অন্তর্গত 'ক' শ্রেণির একটি পৌরসভা। ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত ১০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই পৌরসভায় মোট জনসংখ্যা ৩৬ হাজার ৭২৫ জন। পৌরসভাটি ভারত সীমান্তঘেষা হওয়ায় নানাবিধ অপরাধ লেগেই থাকে। এ অবস্থায় ২০২৩ সালে পৌর প্রশাসন ও থানা প্রশাসনের উদ্যোগে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দুইশরও বেশি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। ফলে অপরাধ প্রবণতা অনেকটাই কমে আসে।
কিন্তু ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পালানোর দিন বিক্ষুব্ধ জনতা পৌর শহরের প্রায় সবগুলো সিসিটিভি ক্যামেরা ভেঙে ফেলেন আবার কেউ কেউ সেগুলো খুলে নিয়ে যায়। ফলে সীমান্তবর্তী এই পৌর এলাকায় আবারও চুরি, ছিনতাই, হত্যাকাণ্ডসহ নানাবিধ অপরাধ।
পৌর শহরের পাঁচমাথা এলাকায় অবস্থান নেওয়া রিকশা চালক মিজানুর রহমান জানান, আগে দিনে রাতে অটো চালাতাম। সিসিটিভি ক্যামেরা থাকায় ভয় পেতাম না। এখন রাস্তার ধারে অটো রেখে প্রস্রাব করতে গেলেও ভয় লাগে। বেশ কিছু দিন থেকে শহরের বেশ কিছু চুরির ঘটনা ঘটেছে। বর্তমানে অধিকাংশ সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো অকেজো হয়েছে।
পৌর শহরের বাসিন্দা ছাত্রদল নেতা শামীম হোসেন বলেন, পৌর শহরের বিভিন্ন জায়গায় যে সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো আছে সেগুলো যদি অকেজো হয়ে থাকে তা দ্রুত মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। কারণ বর্তমান সময়ে পৌর শহর থেকে শুরু করে উপজেলা ব্যাপী বেশ কিছু এলাকায় চুরি ছিনতাই বেড়েছে।
পাঁচবিবি বণিক সমিতির সভাপতি তাইজুল ইসলাম বলেন এই শহরে ছোট বড় মিলিয়ে অন্তত ২ হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আগে আমরা খুব স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য করতাম। কিন্তু ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো গায়েব হওয়ার কারণে এখন অনেকটা আতঙ্কে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে হয়। আমরা চাই দ্রুত ক্যামেরাগুলো পুনঃস্থাপন করা হোক।
এর আগে ২০২৩ সালে পাঁচবিবি পৌর প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের উদ্যোগে স্থাপন করা সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো থানা এবং পৌরসভার কন্ট্রোল রুম থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হলেও এখন আর সেই দৃশ্য চোখে পড়ে না। বর্তমানে হাতে গোনা কয়েকটি ইলেকট্রিক পোলে ক্যামেরা থাকলেও বেশির ভাগ সেটআপ বক্স আর তার ঝুলতে দেখা যায়। তবে পৌর এলাকা এবং উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে আগের মতো আবারও ক্যামেরা স্থাপন করা হবে বলে জানালেন পৌর প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
পাঁচবিবি পৌরসভার উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ মারুফ আহসান বলেন—আমরা ইতোমধ্যেই পৌর প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশে সিসিটিভি ক্যামেরাগুলোর পয়েন্ট নির্ধারণের কাজ শুরু করেছি। এ বিষয়ে ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছি। আশা করছি খুব শিগগিরই পৌরবাসীর ভোগান্তি এড়াতে সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো পুনঃস্থাপন করা হবে।
পাঁচবিবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মইনুল ইসলাম জানান, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সিসিটিভি ক্যামেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ লক্ষেই পৌরসভা ও থানার উদ্যোগে ক্যামেরাগুলো সেটআপ করা হয়েছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় ৫ আগস্টের দিন অধিকাংশ ক্যামেরা ভাংচুর ও খুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। তবে আমরা চিন্তা-ভাবনা করছি আবারও সেগুলো লাগাবো।
আফরোজা