ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২

"যদি বাঁচি, দেশের জন্যই বাঁচবো" —শেষ ফোনালাপে মাকে বলেছিলেন শহীদ মামুন

মোহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ রাব্বী, তিতুমীর কলেজ

প্রকাশিত: ১৬:২৫, ১৮ জুলাই ২০২৫

ছবি: সংগৃহীত

২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনে শহীদ হওয়ার আগে মায়ের সঙ্গে এটিই ছিল সরকারি তিতুমীর কলেজের  শিক্ষার্থী মামুন মিয়ার শেষ কথা।

জুলাই ২০২৪। রাজপথ কাঁপিয়েছিলো হাজারো ছাত্র, তরুণ, আর সাধারণ মানুষ। তাদের চাওয়া ছিল একটাই  ন্যায্য অধিকার এবং স্বৈরাচারের হাত থেকে প্রিয় মাতৃভূমিতে মুক্ত করা। তাদের কারও হাতে ছিল বই, কারও চোখে ছিল স্বপ্ন, আর কারও কণ্ঠে ছিল প্রতিবাদ।তাদের অনেকেই ফিরেনি, শুধু রেখে গেছে কিছু অসমাপ্ত গল্প এবং মা-বাবার চোখে অনন্ত শূন্যতা। 

তেমনি এক শহীদের নাম মামুন মিয়া‌। মামুন মিয়া সরকারি তিতুমীর কলেজের (১৭-১৮) সেশনের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন। শরীয়তপুর সদর উপজেলার শৌলপাড়া ইউনিয়নের চরচিকন্দি গ্রামের দরিদ্র কৃষক আব্দুল গনি মাদবর ও গৃহিণী মা হেনা বেগমের ছোট সন্তান  মামুন। স্বপ্ন ছিল ভালো আয় করে পরিবারের অভাব দূর করবেন। দরিদ্র পরিবারের স্বপ্ন জয় করতে চাকরি নিয়ে ২২ আগস্ট মধ্যে আমেরিকার দেশ বেলিজে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু ১৮ জুলাই ছাত্র-জনতা আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান মামুন।

জুলাই আন্দোলনের শহীদ মামুন মিয়াকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করে তার বড় ভাই রুবেল মাদবর বলেন, "মামুন ছিল আমার আদরের ছোট ভাই। আমাদের পরিবারের আর্থিক ভার সেই বহন করত। ফ্রিল্যান্সিং করে সংসার চালাত। 

২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনে মামুন সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়। তার মধ্যে ছিল অগাধ দেশপ্রেম। ১৮ জুলাই সারাদিন সে আন্দোলনে ছিল। বিকেলে মা জানতে পারেন মামুন আন্দোলনে আছে। উদ্বিগ্ন হয়ে মা তখন তাকে ফোন করে বলেন, ‘বাবা, তুই আন্দোলনে যাস না, ওরা তোকে মেরে ফেলবে।’ জবাবে মামুন বলে, ‘কিছু হবে না মা, যদি বাঁচি তাহলে দেশের জন্যই বাঁচবো।

সেই রাতেই ঢাকার রামপুরায় মামুন গুলিবিদ্ধ হয়। আহত অবস্থায় তাকে দ্রুত রাজধানীর নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরদিন ১৯ জুলাই সকাল ১১টার দিকে সে মৃত্যুবরণ করে। ১৯ জুলাই  গ্রামে এসে বাবাকে নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু তার নিথর দেহ নিয়ে আমি বাড়িতে ফিরেছি।

আজও আমি আমার ভাইয়ের স্মৃতি ভুলতে পারিনি। মনেই হয় না সে মারা গেছে।

আমি সরকারের কাছে জোর দাবি জানাই , আমার ভাই মামুনসহ জুলাই আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে হবে। যারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে এবং স্বৈরাচারী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে তার ফাঁসির ব্যবস্থা করতে হবে।”

শহীদ মামুন মিয়ার ত্যাগ ও স্মৃতিকে অমর করে রাখার জন্য সরকারি তিতুমীর কলেজে  একটি  স্থানকে ‘শহীদ মামুন চত্বর’ নামে নামকরণ করা হয়েছে, যেখানে প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের চলাফেরায় তার স্মৃতিকে বয়ে নিয়ে চলে। এছাড়াও, নবনির্মিত একটি ছাত্রাবাসের নামকরণ করা হয়েছে ‘শহীদ মামুন ছাত্রাবাস’ নামে।

ফারুক

×