ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২

তেঁতুলিয়ায় সড়কের কাজ শেষ না হতেই কাগজে-কলমে বিল পাস

স্টাফ রিপোর্টার, পঞ্চগড়

প্রকাশিত: ১৬:১৬, ১৮ জুলাই ২০২৫

তেঁতুলিয়ায় সড়কের কাজ শেষ না হতেই কাগজে-কলমে বিল পাস

ছবি: সংগৃহীত

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার তিরনই আরএন্ডএইচ-সিপাইপাড়া রোড হয়ে কাশিমগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি সড়ক প্রকল্পে কাজের এক-চতুর্থাংশ সম্পন্ন না হতেই বিল উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে।

কাজ শুরুর প্রায় ৯ মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও কাজের অগ্রগতি না হওয়ায় ও কাজ না দেখেই মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে বিল পাস করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে।

উপজেলা এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, বৃহত্তর দিনাজপুর জেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (জিডিডিআইআরডিপি) প্রকল্পের আওতায় ১ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫০৩ টাকা প্রাক্কলিত ও ১ কোটি ২ লাখ ৩২ হাজার ৯২৮ টাকা চুক্তিমূল্য ব্যয়ে ১ কিলোমিটার পাকা সড়ক নির্মাণের দায়িত্ব পায় বোদা পঞ্চগড়ের মোতাহার এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে সেই সড়কে গত ২০২৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বরে ঠিকাদার ইউসুফ আলীর অধীনে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। নির্মাণ শেষ করার সময়সীমা ছিল চলতি বছরের ২ জুন পর্যন্ত। পরে আরও সময় বাড়ানো হয়েছে। কাজ শুরুর সময়সীমা প্রায় ৯ মাস অতিবাহিত হলেও এখনও কাজের অগ্রগতি চোখে পড়ার মতো নয়।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, গত ৯ মাসে সড়কটিতে সাব-গ্রেডের প্রথম লেয়ারে শুধু বালি ও খোয়া ফেলা হয়েছে। এখনও ২০০ মিটার সড়ক নির্মাণ বাকি রয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, যেটুকু কাজ হয়েছে, সেটাতেও নিম্নমানের খোয়া ও অতিরিক্ত বালি ব্যবহার করা হয়েছে।

এদিকে অভিযোগ উঠেছে, তেঁতুলিয়া এলজিইডির সার্ভেয়ার ও দায়িতপ্রাপ্ত সাইড ইঞ্জিনিয়ার জয়নাল আবেদীন এবং নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদ জামান মিলেই আইবাস’র (IBAS -Integrated Budget and Accounting System) অজুহাত দেখিয়ে বিল পাসের কাজটি সম্পন্ন করেছেন। মূলত উপজেলা প্রকৌশলী ইদ্রিস আলী খান হঠাৎ অসুস্থ হয়ে গত ১৫ থেকে ১৬ জুন ছুটিতে গেলে ১৭ থেকে ১৯ জুন অতিরিক্ত দায়িত্ব পান পঞ্চগড় সদর উপজেলার এলজিইডি প্রকৌশলী রমজান আলী। দায়িত্ব পাওয়ার মাত্র ৩ দিনের মধ্যে তিনি তেঁতুলিয়ায় না এসেই প্রকল্প পরিদর্শন ছাড়াই একাধিক সড়ক বা প্রকল্পের বিল পাস করেন। যার মধ্যে এই প্রকল্পও রয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঠিকাদার, সাইড ইঞ্জিনিয়ার ও অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলীর মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে বিল পাস করা হয়। এদিকে জয়নাল আবেদিন একজন সার্ভেয়ার হয়েও ওই অফিসের প্রায় সড়কের কাজই তার দায়িত্বে৷ তবে তিনি যেই সড়কের দায়িত্বে থাকেন সেই সড়কের কাজে অনিয়ম বেশিই হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা পলাশসহ এলাকাবাসী বলেন, সড়ক নির্মাণ হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু বালির পরিমাণ অনেক বেশি। আমরা চাই, কাজটা যেন টেকসই ও ভালোভাবে হয়।

তবে স্থানীয় সচেতন মহল বলছেন, বিল পাওয়ার পর কাজ শুরু হয়েছে৷ গেল ৯ মাস ধরে কাজ করলে সড়কটির কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়ে যেতো৷ ৯ মাসেও কেন কাজ শেষ হলো না, আর কাজ শেষ না হতেই কেন সরকারি কোষাগার থেকে বিল তোলা হলো এটি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন৷

উপজেলা এলজিইডির সার্ভেয়ার জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় বিল উত্তোলনের প্রক্রিয়া হয়েছে। কাজ শেষ করে ঠিকাদার বিল পাবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘১৭ থেকে ১৯ জুন এর মধ্যেই ওই রাস্তার বিল পাস হয়েছে।

তেঁতুলিয়া উপজেলা প্রকৌশলী ইদ্রিস আলী খান বলেন, তিনি ছুটি নেওয়ার পর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সুস্থ হয়ে গত ২২ জুন অফিস করাকালীন জানতে পারেন তিনি ছুটিতে থাকাকালীন ওই রাস্তার বিল পাস করা হয়েছে।

তেঁতুলিয়ায় অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা প্রকৌশলী (পঞ্চগড় সদর) রমজান আলী বলেন, ‘আমাকে তেঁতুলিয়ার দায়িত্ব জোর করে নির্বাহী প্রকৌশলী স্যার দিয়েছেন৷ ওই সময়ে সরেজমিনে গিয়ে পরিদর্শন করার সুযোগ ছিল বলেন? আমি ২-৩ টা ফাইলে সই করেছি৷ নির্বাহী স্যার ভাল বলতে পারবেন।’

তবে ঠিকাদার ইউসুফ আলী বলেন, ‘কাজ না করেই কেউ বিল দেয় না। অন্যান্য ডিপার্টমেন্টের কথা জানি না, অন্তত এলজিইডি ওরা কাজ না করে কখনোও বিল দেয় না।’

এ বিষয়ে পঞ্চগড় জেলার এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহমুদ জামান বলেন, ‘১৫ থেকে ২১ তারিখ উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিল, মেইল করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার ২১ তারিখ রিলিজ নিয়েছেন ওই রাতেই তিনি উপজেলা এসেছেন। এদিকে আইবাসে বিল দাখিলের শেষ তারিখ ছিল ২২ জুন। স্বাভাবিকভাবে আমরা সেই সময় আইবাসে দিয়েছি। তবে ২২ জুন বিকালের দিকে আইবাসে একদিনের সময় বাড়ানো হয়েছে। কাজ শেষ না করে চূড়ান্ত বিল কখনই আমরা দিই না, এটি লিখতে পারেন।’

এদিকে তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজ শাহীন খসরু বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা ছিল না৷ সরেজমিনে গিয়ে সড়কটি দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ রহমান মুকুল/রাকিব

×